.
রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় সংকট হবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে ছোলা, খেজুর, চিনিসহ ১১টি পণ্য ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ আমদানি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নিত্যপ্রয়োজনীয় ১১টি পণ্য সহজ শর্তে আমদানির অনুমতি দিচ্ছে। যে কারণে এবার পণ্যের ঘাটতি হওয়ার সুযোগ নেই। আমদানিকৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় ১১ পণ্য হলো- ‘চাল, ডাল, পেঁয়াজ, গম, ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্যমতে, রমজান মাস সামনে রেখে দেশে ডাল, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা ও খেজুরের আমদানি অনেক বেড়েছে। সদ্য বিদায়ী বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে দেশে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৪৮৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালে আমদানি হয়েছিল ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৯৭২ মেট্রিক টন। এ ছাড়া বিদায়ী বছর ডাল আমদানি করা হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩৭৮ মেট্রিক টন। আগের বছরে ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন।
২০২৪ সালে ভোজ্যতেল আমদানি করা হয়েছে ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৩৫ মেট্রিক টন। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৩৩৪ মেট্রিক টন। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে দেশে ভোজ্যতেল আমদানি করা হয়েছে ১৬ লাখ ৪২ হাজার ২৪৬ মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে চিনি আমদানি আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চিনি আমদানি করা হয়েছে ৫ লাখ ৬১ হাজার ৬২৩ মেট্রিক টন। আগের বছরের একই সময়ে দেশে চিনি আমদানি করা হয়েছিল ৬ লাখ ৯০ হাজার ৮৮২ মেট্রিক টন।
রমজান মাস সামনে রেখে চাহিদা বাড়ায় চলতি অর্থবছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ছোলা আমদানি করা হয়েছে ২৬ হাজার ৩৬৭ মেট্রিক টন। ইফতারের গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য খেজুর আমদানি এ সময় প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ডিসেম্বরে আমদানি কারকরা দেশে ২ হাজার ১৮৬ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করেছে। নভেম্বরে যা ছিল ৬৫৪ মেট্রিক টন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কাছে কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না, যে কারণে রমজান মাস উপলক্ষে পণ্য আমদানিতে সুবিধা পাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের স্বার্থে ঋণের পরিমাণ আরও কমানো প্রয়োজন। বিশেষ করে রোজাদারদের ইফতারের পণ্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ঋণের সুদের হার কমানো ও ‘তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়’ সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন।
ব্যাংক কর্মকর্তা আরও বলেন, সময়মতো আমদানির অভাবে যাতে এসব পণ্যের সংকট তৈরি না হয় এবং দাম না বাড়ে সে জন্য নতুন নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সুযোগের ফলে বাকিতে পণ্য আমদানি করছে ব্যবসায়ীরা। আশা করছি এবার দেশের বাজারে পবিত্র রমজান উপলক্ষ প্রয়োজনীয় পণ্যের জোগান নিশ্চিত হবে।
রজমানকে সামনে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, রমজান সামনে রেখে সরকার বাজার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে। তবে সরকারের হাতে কোনো আলাদিনের চেরাগ নেই, যার মাধ্যমে রাতারাতি বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
এদিকে আমদানি বাড়লেও কমছে না চালের দাম। এক মাসের ব্যবধানে গত ডিসেম্বর ৬৪৫ শতাংশ বেড়েছে চালের আমদানি। আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩১ হাজার ৩২৬ শতাংশ। তারপরেও বাজারে চালের দাম চড়া। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে চালের ঘাটতি নেই। সরকারের চালের মজুত, স্থানীয় উৎপাদন ও সংগ্রহে ঘাটতি নেই। আমনের ভরা মৌসুম চলছে; এখন চালের দাম বেড়ে যাওয়ার যৌক্তিক কারণ নেই। সাময়িক মজুতদারির কারণে চালের দাম বেড়েছে বলে মত তাদের।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ চালের দাম বৃদ্ধি বলেন, সম্পর্কে ‘একটি চালের ক্ষেত্রে দাম কিছুটা বেড়েছে। অন্যান্যগুলোর খুব বেশি বেড়েছে, তা নয়। সাপ্লাই চেইনের কারণে এটা (চালের দাম বৃদ্ধি) হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে চালের দাম যাতে না বাড়ে, তা আমরা দেখছি।’ অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ভোক্তাদের কষ্ট রোধে বাজারে কোনো পণ্যের ঘাটতি বা মূল্যবৃদ্ধি রোধে সরকারি পর্যায়ে আরও সার, চিনি, গম ও চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সে জন্য অর্থের বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ছোলা, ডাল, খেজুর ইতোমধ্যে আমদানি করা হয়েছে। সয়াবিনও কিছুটা সহনীয় হয়ে এসেছে। যদি দরকার হয় আমরা আবার সয়াবিন তেলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। সবচেয়ে বড় কথা হলো এখন থেকে বাজার মনিটরিংটা আরও জোরদার করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য সমাপ্ত ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ৫৫ হাজার ৯৩৯ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। কিন্তু নভেম্বরে চাল আমদানি হয়েছিল মাত্র ৭ হাজার ৫০৭ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে চালের আমাদানি বেড়েছে ৬৪৫ শতাংশ। আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে চাল আমদানি হয়েছিল মাত্র ১৭৮ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে চালের আমাদানি বেড়েছে ৩১ হাজার ৩২৬ শতাংশ। তারপরও বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা বশির উদ্দিন বলেন, চালের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকার আমদানি উদারীকরণের নীতিতে যাচ্ছে। ‘আমদানি উদার করতে গত দুই দিন আমরা গভর্নর, খাদ্য উপদেষ্টা, টিসিবি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতিতে আপাতত আমদানিকেন্দ্রিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ইফাদ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান তাসকীন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে রমজান মাসের চাহিদা বিবেচনায় প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছি। সরকার অনেক আগে থেকেই রমজানের পণ্য আমদানির জন্য এলসি জটিলতা নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছে। সে প্রেক্ষিতে বলা যায়, সরকার ও ব্যবসায়ীরা রমজানের পণ্য মজুতে সচেষ্ট রয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় তা সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। আশা করছি, রমজান মাসে বাজারে কোনো পণ্যের সংকট হবে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানি কয়েক মাস আগে কিছুটা কমলেও তা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। আগামী মার্চে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে যারা পণ্য আমদানিতে এলসি খুলেছেন তাদের অনেক পণ্য বাজারে চলে এসেছে।