ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

আওয়ামী সরকারের রোষানলে বন্ধ ১৭ শিল্প প্রতিষ্ঠান চালুর দাবি  

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ১৭:০৪, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

আওয়ামী সরকারের রোষানলে বন্ধ ১৭ শিল্প প্রতিষ্ঠান চালুর দাবি  

ছবি - জনকণ্ঠ

বিগত আওয়ামী সরকারের রোষানলে বাগেরহাটের ফকিরহাটে বন্ধ হওয়া লখপুর গ্রুপের ১৭ শিল্প প্রতিষ্ঠান চালুর দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শ্রমিকরা। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে কাটাখালি-মোংলা মহাসড়ক সংলগ্ন মুনস্টার জুট মিলের সামনে এই কর্মসূচিতে কয়েক হাজার শ্রমিক অংশগ্রহন করেন।


শ্রমিকদের দাবি, প্রায় ৪০ বছর ধরে লখপুর গ্রুপ এই অঞ্চলে ব্যবসা করছে। গ্রুপের ১৭টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ কাজ করত। বিগত সরকারের আমলে মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়, কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েন হাজার হাজার শ্রমিক। আয় না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। শ্রমিকদের জীবন বাঁচাতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানান শ্রমিকরা।

লখপুর গ্রুপের চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপে লখপুর গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাম্যতার সরকার এসেছে, এই সরকার যদি স্থগিত করে রাখা ব্যাংক হিসেব খুলে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে আবারও প্রতিষ্ঠান চালু করা সম্ভব হবে বলে জানান লখপুর গ্রুপের কর্নধার।

লখপুর গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, লখপুর গ্রুপের মালিক এস এম আমজাদ হোসেন ১৯৮৫ সালে বাগেরহাট থেকে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি শুরু করেন। এরপর থেকে একেএকে রপ্তানিমুখি ১৭টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। গ্রুপের প্রতিষ্ঠান, লখপুর ফিস প্রসেসিং লিঃ, রুপসা ফিস এ্যান্ড এ্যালাইড ইন্ডাঃ লি, সাউদার্ন ফুডস লি, বাগেরহাট সি ফুডস, মুনস্টার জুট মিলস, খুলনা প্রিন্টি এ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, বাংলাদেশ পলি প্রিন্টিং ইন্টা. লি:, ইস্টার্ন পলিমার লি নামের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবছর বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখত।

কিন্তু ২০১২ সালের দিকে ক্ষমতাসীন শেখ পরিবারের নির্দেশে ফকিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাসে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বড় অংকের চাঁদা দাবি করে। তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। প্রভাবশালী নেতাদের নির্দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শতভাগ রপ্তানিমুখি প্রতিষ্ঠানে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, দুদকসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে হয়রানি শুরু করে।২০১৬ সালে মোংলা কাস্টমস্ হাউজ কর্তৃক মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করে পূজি বাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান খুলনা প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ বন্ধ করে দেয়। একইভাবে বাংলাদেশ পলি প্রিন্টিং ইন্টাঃ লিঃ, মুনস্টার পলিমার এক্সপোর্ট লিঃ, ইস্টার্ন পলিমার লিঃসহ গ্রুপের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। সাথে সাথে গ্রুপের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করে দেয়। যার ফলে হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়ে।


লখপুর গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বাগেরহাট সী ফুডস ইন্ডাষ্ট্রিজ লি. এর শ্রমিক আব্দুল জলিল সরদার বলেন, দুই যুগ ধরে এখানে কাজ করছি। আমার মত হাজার হাজার শ্রমিকের রুটি-রুজি হয় এই গ্রুপে চাকুরী করে। আওয়ামী সরকারের রোষানলে পড়ে আমাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, আমরা খুবই মানবেতর জীবন-যাপন করছি। অনেকে শহরে গিয়ে রিকশা চালাচ্ছেন।  বেশিরভাগ শ্রমিকের সন্তানদের পড়াশুনাও বন্ধ হয়ে গেছে।

মনিষা মিম

×