ফের গ্যাস সংকটে
মেরামত শেষে গত ৪ জানুয়ারি উৎপাদনে ফেরে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেটের ভাসমান এলএনজি (এফএসআরইউ) টার্মিনালটি। বছরের শুরুর দিনই ত্রুটি দেখা দেয় টার্মিনালটিতে। মেরামত শেষে উৎপাদনে ফেরার মাত্র ৪ দিন পর আবারও এটিতে ত্রুটি ধরা পড়ে। ফলে আজ শুক্রবার থেকে আবারও মেরামতের জন্য অবসরে যাবে টার্মিনালটি।
ঠিকঠাক হতে অন্তত: ৫ দিন সময় লাগবে। ফলে সামিটের অপর টার্মিনাল দিয়ে প্রতিদিন মাত্র ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে ৫৬০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজির সরবরাহ পাওয়া যাবে। সংকট থাকবে ৫০০ থেকে ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের। এই পুরো সময়টাতেই দেশের সব খাতে তীব্র গ্যাস সংকট তৈরি হবে। এমনিতেই শীতের শুরু থেকেই গ্যাসের চাপ নি¤œমুখী। ১০ দিনের ব্যবধানে এক্সিলারেটের টার্মিনালটি দুইবার অবসরে যাওয়ায় এই সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আজ শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা পর্যন্ত মহেশখালীর এলএনজি এফএসআরইউ থেকে আরএলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকবে। তবে এই সময়ের মধ্যে অন্য একটি এফএসআরইউ দিয়ে দৈনিক ৫৫০-৫৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ চালু থাকবে।
এমন পরিস্থিতিতে আমদানি করা গ্যাসের সংকট হবে তীব্র। এদিকে দেশীয় উৎস থেকে সরবরাহ বাড়ারও কোনো সুখবর নেই। এতে দেশের আবাসিকের পাশাপাশি শিল্পখাতও ধুঁকছে তীব্র গ্যাস সংকটে। যদিও সম্প্রতি চাহিদা মেটাতে বাড়তি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির পরিকল্পনা করে অন্তর্বর্তী সরকার।
সিদ্ধান্ত নেয়া হয় আমদানিনীতি পরিবর্তনেরও। আমদানির জন্য অনুমোদনের অপেক্ষায় নতুন আরও অন্তত: ৩৩টি কোম্পানি। কিন্তু টার্মিনাল সক্ষমতা না থাকলে এই পরিকল্পনা কিছুতেই বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে সহসাই গ্যাস সংকট কাটবে না বলেও মত তাদের।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) বলছে, দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস খাত চলছে রেশনিং (এক খাতে সরবরাহ কমিয়ে অন্য খাতে দেওয়া) করে। দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। কোনো কারণে সরবরাহ এর চেয়ে কমলেই বেড়ে যায় সংকট।
দেশীয় এবং আমদানি উৎস থেকে বর্তমানে সারাদেশে দৈনিক সরবরাহ হচ্ছিল ২৭১ কোটি ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাস উৎস থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে ২০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। বাকিটা আমদানিকৃত এলএনজি থেকে সরবরাহ করা হচ্ছিল। কিন্তু গত রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য মহেশখালীর এক্সিলারেট এনার্জি পরিচালিত এফএসআরইউটি বন্ধ থাকার কারণে সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বার্ষিক ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন এলএনজি সরবরাহের জন্য ২০১৭ সালে কাতারের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ। ১৫ বছর মেয়াদি এই চুক্তির অধীনে বাংলাদেশ ২০১৮ সাল থেকে কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত দুই বছর ওমান, ব্রুনাই, সৌদি আরবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে ব্যাহত হয় আমদানি।