ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

ট্রাইব্যুনালে বিএনপির অভিযোগ

২২৭৬ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা ও ১৫৩ জনকে গুম

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ৯ জানুয়ারি ২০২৫

২২৭৬ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা ও ১৫৩ জনকে গুম

২২৭৬ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা ও ১৫৩ জনকে গুম

২০০৮ সাল  থেকে গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত  সারাদেশে ২ হাজার ২৭৬ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা এবং ১৫৩ জনকে গুমের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে আবেদন দাখিল করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে অভিযোগটি দায়ের করেন দলটির মামলা ও তথ্য বিষয়ক কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী নুরুল ইসলাম জাহিদ।
এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিশন শাখায় আলাদা দুটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন দলটির মামলা সংগ্রহ তথ্য  সেলের সমন্বয়ক মো. সালাহউদ্দিন খান। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন  সেলের অপর সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম জাহিদ।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন খান জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপিকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে সারাদেশে বিএনপির  নেতাকর্মীদের ক্রসফায়ার করে হত্যা করা হয়। এই ক্রসফায়ারের  জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক তালিকা জমা  দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির সাবেক  নেতা ইলিয়াস আলী,  চৌধুরী আলমসহ ১৫৩ জন কর্মীকে গুম করা হয়েছে।  সেই ঘটনায় আলাদা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এই অপকর্মে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যারা জড়িত ছিল তাদের নামও এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এই ২৪৫ পৃষ্ঠার ক্রসফায়ারের অভিযোগ এবং ১৫৩ গুমের ঘটনায় ২০ পৃষ্ঠার অভিযোগ জমা  দেওয়া হয়েছে। প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ  আল  নোমান সাংবাদিকদের জানান, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অফিসে বিএনপি ২ হাজার ২৭৬ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা ও ১৫৩ নেতাকর্মীকে গুমের অভিযোগ দাখিল করেছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা গুমের অভিযোগে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ২০০৮ সাল থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ সাল পর্যন্ত অবৈধ ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকার ও কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় বিএনপি নেতা কর্মীদের ও সমর্থকদের অপহরণপূর্বক নির্যাতন করে গুম করে দিনের পর দিন হেফাজতে রেখে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করে।

২০০৭ সালে তৎকালীন সাময়িক প্রধান মঈন ইউ আহমেদ, গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় কিছু পুলিশ বাহিনীর সদস্য, আনসার ও বিজিবির সহায়তায় আওয়ামীলীগ সরকারকে ক্ষমতায় এনে বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপরে দমন নিপীড়ন নির্যাতন করে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনাকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আনে। পুনরায় ২০১৪ সালে বিএনপিসহ বিরোধী দল একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কমিশন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও সভা সমাবেশ করত থাকলে একই কায়দায় আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সহায়তায় ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচন করে।

এবং ১৪৬ জনকে অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যরা মিথ্যা গায়েবি মামলা দিয়ে, নির্যাতন করে গুম করে, হত্যা করে, সংসদ নির্বাচন সমাপ্ত করে। এর প্রতিবাদে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শান্তিপূর্ণ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অংশগ্রহণ করলে, মিথ্যা গায়েবি মামলা দিয়ে নির্যাতন করে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার অপহরণ গুম ও খুন সহ নানা নির্যাতন করতে থাকে। 
বিএনপি বলছে, তাদের মতো বড় একটি রাজনৈতিক দলকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যেই ২০০৮ সাল  থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশের  জেলা, উপজেলা, মহানগর ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটানো হয়েছে-  সেজন্য অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

গত ২০০৮ সাল  থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রান, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ও কিছু অতি উৎসাহী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিএনপির  নেতা কর্মী ও সমর্থকদের অপহরণপূর্বক গুম করে হত্যা করে। এখন পর্যন্ত  অনেককেই গুম করে রাখা হয়েছে। বিএনপির তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত  মোট ১৫৩ জনকে গুম করে হত্যা ও অপহরণপূর্বক গুম করে রাখা হয়েছে। এ গুম সংক্রান্ত অনুসন্ধান ও তদন্ত  করে মামলা গ্রহণের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো।

ক্রসফায়ারের অভিযোগে বলা হয়েছে, অবৈধ  ভোটারবিহীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রধানের নির্দেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতি উৎসাহী কিছু সদস্য দমন-নিপীড়ন ও নির্যাতন করে বিএনপি-কে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করার জন্য এবং দল থেকে লোকজন বিচ্ছিন্ন করার জন্যই ক্রসফায়ারের নামে জঘন্যতম হত্যাকান্ড চালায়। ক্রসফায়ারের নামে এই হত্যাকান্ডে মোট ২ হাজার ২৭৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মূল উদ্দেশ্যই ছিল বিএনপি-কে নিশ্চিহ্ন করা, ধ্বংস করা ও ক্রসফায়ারে নামে হত্যা করে বিএনপি’র মত একটি বড় দল থেকে লোকজনদের শূন্য করা এবং বিএনপি’র পরিবারদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা, ক্রসফায়ার নামে হত্যা করে বিএনপি’র নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করা, তাদের দলীয় কার্য থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা ও মেধাশূন্য করা।

আওয়ামী লীগের ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই জঘন্য কর্মকান্ডে ও মিথ্যা বানোয়াট পরিকল্পনা সৃষ্টি করে ক্রসফায়ারের নামে ২২৭৬ জনদের হত্যার ন্যায় বিচার করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত  সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করার জন্য বিএনপি’র পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি। 
২০০৮ সাল থেকে গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে ২ হাজার ২৭৬ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা এবং ১৫৩ জনকে গুমের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে পৃথক আবেদন দাখিল করেছে বিএনপি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা গুমের অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ও কিছু অতি উৎসাহী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অপহরণ করে গুম ও হত্যা করে।

এখন পর্যন্ত অনেককেই গুম করে রাখা হয়েছে। বিএনপির তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত  মোট ১৫৩ জনকে গুম করে হত্যা ও অপহরণ পূর্বক গুম করে রাখা হয়েছে। এ গুম সংক্রান্ত অনুসন্ধান ও তদন্ত করে মামলা গ্রহণের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো। ক্রসফায়ারের অভিযোগে বলা হয়েছে, ক্রসফায়ারের নামে হত্যাকান্ডে মোট ২২৭৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন, ধ্বংস করা। অভিযোগ দায়েরের পর সালাউদ্দিন খান বলেন, ক্রসফায়ার ও গুমের শিকার সবাই আমাদের দলের নেতাকর্মী। যেমন গুমের শিকার হয়েছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ, আমাদের নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ ১৫৩ জন।

×