ছবি: সংগৃহীত।
করোনা মহামারি ও দীর্ঘ লকডাউনের পর মানুষ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শুরু করেছে। তবে সুখের দিনগুলো আবারো থামিয়ে দিতে পারে লকডাউনের সম্ভাবনা।
চীনের কিছু অঞ্চলে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত পিপিই কিট পরিধান করছিলেন।
চীনে একটি নতুন ভাইরাস আঘাত হেনেছে, যার নাম এইচএমপি ভাইরাস (Human Metapneumovirus)। সম্প্রতি চীন ও জাপানে এই ভাইরাস নিয়ে গুরুতর সতর্কতা জারি করা হয়েছে, কারণ সর্দি-কাশির কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অনেক রোগীর মধ্যে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এইচএমপি ভাইরাস কী?
চীনের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (CDC) তথ্য অনুযায়ী, এইচএমপি ভাইরাস কোভিড-১৯-এর মতো একটি আরএনএ ভাইরাস, অর্থাৎ এর জিনগত গঠন কোভিড-১৯-এর মতো। এই ভাইরাসও মূলত শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করে। তবে এটি কোভিড-১৯-এর ভাইরাস পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
অর্থাৎ, আপনি যদি কোভিড-১৯-এর টিকা গ্রহণ করে থাকেন অথবা পূর্বে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তবুও আপনি এইচএমপি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। কোভিড-১৯-এর ইমিউনিটি আপনাকে এই ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেবে না।
বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং ক্যান্সার চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে এই ভাইরাসের কারণে গুরুতর শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণসহ নানা উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।
মালয়েশিয়াতেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, ২০২৪ সালে ২৭টি রিপোর্ট পাওয়া গেছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ২২৫টি। সম্প্রতি ভারতে একদিনে দুজন শিশুর আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ৮ মাসের এক শিশু ও ৩ মাসের আরেকটি শিশু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাসের বিস্তার দেখে মানুষের মনে আবারও করোনা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। নতুন করে মহামারী শুরুর আশঙ্কাও কম নয়, এমনকি লকডাউনের পরিস্থিতি ফিরে আসতে পারে।
এইচএমপি ভাইরাস ও কোভিড-১৯: মিল এবং পার্থক্য
এইচএমপি ভাইরাস এবং কোভিড-১৯ উভয়ই শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস হলেও তাদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মিল এবং পার্থক্য রয়েছে।
কোভিড-১৯ এবং এইচএমপিভি (Human Papillomavirus) দুইটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের ভাইরাস। তবে, তাদের মধ্যে কিছু মিল এবং কিছু পার্থক্য রয়েছে।
মিল:
১.ভাইরাল ইনফেকশন: কোভিড-১৯ এবং এইচএমপিভি উভয়ই ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট।
২.মানব শরীরে সংক্রমণ: দুটি ভাইরাসই মানুষের শরীরের মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়।
৩.সংক্রমণের মাধ্যমে ছড়ানো: কোভিড-১৯ এবং এইচএমপিভি উভয়ই একজন ব্যক্তির থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে।
৪.প্রতিরোধে টিকা: উভয়েরই প্রতিরোধে টিকা পাওয়া যায়। কোভিড-১৯-এর জন্য বিভিন্ন ধরনের করোনা ভ্যাকসিন রয়েছে, এবং এইচএমপিভির জন্যও ভ্যাকসিন (যেমন গার্ডাসিল) রয়েছে যা সেভারাল স্ট্রেইন প্রতিরোধ করে।
পার্থক্য:
১. ভাইরাসের ধরন:
- কোভিড-১৯: এটি একটি করোনা ভাইরাস (SARS-CoV-2) যা শ্বাসতন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করে।
- এইচএমপিভি: এটি একটি প্যাপিলোমাভাইরাস যা প্রধানত ত্বক এবং মিউকোসাল স্তরের সংক্রমণ ঘটায়, বিশেষত যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে।
২. প্রভাব:
- কোভিড-১৯: এটি শ্বাসতন্ত্রের রোগ (ফ্লু বা নিউমোনিয়া) সৃষ্টি করে এবং শরীরে ফুসফুস, হৃদপিণ্ড, কিডনি, ও স্নায়ু ব্যবস্থার ক্ষতি করতে পারে।
- এইচএমপিভি: এটি সাধারণত ত্বক বা শারীরিক অংশে কন্ডিলোমা (যৌনাঙ্গের অথবা গলার) সৃষ্টি করে। দীর্ঘমেয়াদী ইনফেকশনে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে (যেমন: সার্ভিক্যাল ক্যান্সার)।
৩. সংক্রমণের ধরন:
- কোভিড-১৯: মূলত শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে ছড়ায় (হাঁচি, কাশি বা আকাশে ফেলা জলীয়বাষ্প থেকে)।
- এইচএমপিভি: প্রধানত যৌন সংক্রমণ হিসেবে ছড়ায়, তবে এটি ত্বক সংস্পর্শের মাধ্যমেও হতে পারে।
৪. লক্ষণ:
- কোভিড-১৯: জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা, ক্লান্তি, এবং কখনও কখনও গন্ধ বা স্বাদ না পাওয়া।
- এইচএমপিভি: সাধারণত কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না, তবে কিছু ক্ষেত্রে ত্বকে বা যৌনাঙ্গে গুটি বা ক্ষত দেখা যেতে পারে।
৫. ব্যবস্থা:
- কোভিড-১৯: ভাইরাসটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, এবং মৃত্যু। সাধারণত চিকিৎসা, অক্সিজেন থেরাপি, এবং ভ্যাকসিনেশন দ্বারা এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- এইচএমপিভি: সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে না, তবে কিছু স্ট্রেইন (যেমন টাইপ 16 এবং 18) ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে।
এইচএমপি ভাইরাস একটি নতুন উদ্ভূত শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও গবেষণা চালানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি আশা করছে, আরও গবেষণা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
নুসরাত