ছবি : সংগৃহীত
‘ছুটিতে গিয়ে দেখেছি চাকরি নাই।’
‘আমি নিজে পলিটিক্সের প-সর্ম্পকে জানিনা।’
‘২৭ বছরের পুরো স্বপ্ন বাংলাদেশ ধুলায় মিশায় দিছে।’
‘খোরা যুক্তিতে আমাদেরকে ট্রেনিং থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।’
‘উচ্চবিত্তরা পুলিশে আসে না।’
‘প্রচন্ড মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছি।’
‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্রে, আমাদের সাথে সবার প্রথম বৈষম্য করা হয়েছে।’
এ বক্তব্যগুলো সদ্য চাকুরীচ্যুত সাব-ইন্সপেক্টরদের চাকুরিতে পুনর্বহালের দাবিতে কর্মসূচি পালনকালে দেওয়া। তাদের সাথে কথা বলে তাদের বর্তমান পরিস্থিতি এবং চাকুরি থেকে অব্যহতি দেওয়ার কারণ সর্ম্পকে তাদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়।
সদ্য চাকুরীচ্যুত সাব-ইন্সপেক্টরদের মধ্যে এক নারী প্রশিক্ষণার্থী বলেন, “সকালবেলা নাস্তা না করা, মাঠে ওস্তাদজিদের কমান্ড ফলো না করা, ক্লাসে বিশৃঙ্খলা করা, মাঠে না দৌড়িয়ে হাঁটা এই ধরনের কোন কাজই হয়নি। প্রথমে ২৫২ জন, তারপর ৫৮ জন, তারপর ৩ জন, তারপর ৮ জন। শুধু বের করতেই আছে, করতেই আছে, পুরো জিনিসটাই সম্পূর্ণ আমাদের জন্য মিথ্যা।
আমাদের যারা ব্যাচমেটরা একাডেমির ভেতরে আছে তাদের সাথে পাসিং আউট করে আমরা পোস্টিংরত ভাবে অবস্থান করতে চাই। আমাদের প্রিন্সিপাল নিজে বলেছে, এখানে রাজনৈতিক অভিযোগে কোন প্রশিক্ষণার্থীকে বের করা হয়নি, তাহলে আমি কোন প্রেক্ষিতে বলবো যে, এটা রাজনৈতিক সংঘর্ষ। শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য বিগত বছরে কারো চাকরি গেছে এমন রেকর্ড নাই।
আমরাই প্রথম বাংলাদেশে সেবা করতে এসে আজকে আমি পথে দাঁড়িয়ে অবস্থান কর্মসূচি করছি। ২৭ বছরের পুরো স্বপ্ন বাংলাদেশ ধুলায় মিশায় দিছে, আমার পরিবার এখন পথে বসা। আমার বাবার হার্টে দুইটা ব্লক। আপনি নিজেরা খোঁজ-খবর নিয়ে দেখেন। এখানে দাঁড়ায়ে প্রহসন করতে আসিনি আমি। সরকার আমাদের সাথে প্রহসন করতে পারে, আমরা সরকারের সাথে প্রহসন করবো না।
মেয়েকে কত লাখ টাকা দিয়ে চাকরি দিয়েছিলেন, আরে ভাই খাওয়ার টাকা নাই, একাডেমিতে ধার করে করে মা টাকা পাঠাইতো, আর এই কথা যদি এখন আমাকে শুনতে হয়, যদি টাকা দিয়ে চাকরি নেওয়া হয়তো, অনেক চাকরি আছে এত কষ্টে, পুলিশের চাকরি কি পরিমাণ কষ্টের আপনারা জানেন। সারাদিন মানুষের গালি খেয়ে চাকরিতে আসতাম না। এক বছরের যাবতীয় প্রিপারেশন ভুলে গেছি অন্যান্য চাকরিতে যে যাব। মানসিক, শারীরিক অবস্থা দুটাই ভেঙ্গে গেছে। এই অবস্থায় যদি বলে তোমার চাকরি নাই। ঘরে গেছি বেড়াইতে, আমাদেরকে ছুটিতে পাঠানো হইছে। ছুটিতে গিয়ে দেখেছি চাকরি নাই। উচ্চবিত্তরা পুলিশে আসে না, ওরা চাকরি করে, ব্যবসা করে, অন্য কিছু করে। ১৮ মাস পরেও কি তাদের ট্রেনিং হয় নাই, তাহলে একাডেমি কিসের ট্রেনিং দিচ্ছে।”
আরেক প্রশিক্ষণার্থী বলেন, “পুলিশে নিয়োগ পাওয়ার পর আমরা এখন সবকিছুই জানি। আমার ট্রেনিং আমাদের প্রায় কমপ্লিট, এখন শুধু আমাদের পোস্টিং হওয়ার কথা, এখন আমরা এই যে সরকারি টাকায় আমরা ট্রেনিং করলাম, আমরা এখন দেশের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। আমরা চাই পুলিশে মানে পোস্টিং নিয়ে জনগণের সেবা করার জন্য, দেশের সেবা করার জন্য।
আইজিপি স্যার আছেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আছেন, তারপর প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি, এখন পর্যন্ত তেমন কোন অগ্রগতি দেখতে পাইনি বিধায় আজকে বাধ্য হয়েই এখানে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।
আমাদেরকে শুধু বলা হয়েছে, আমরা ডিসিপ্লিন মানে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছি। ওইদিন যে ইস্যুটা বলা হয়েছিল নাস্তা না করার কারণ, আমরা নাস্তা করেছি, ইভেন যে ক্লাসে বিশৃঙ্খলা করার কথা বলা হয়েছিল যে নাজিবুর স্যার, সাবেক অধ্যক্ষ, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদার উনি পর্যন্ত বলছেন, না আমার ক্লাসে কোন বিশৃঙ্খলা হয়নি। খোরা যুক্তিতে আমাদেরকে থেকে অব্যহতি দিয়েছেন।”
একইভাবে আরেক অব্যহতিপ্রাপ্ত নারী প্রশিক্ষণার্থী বলেন, “প্রথমত যে কারণটা প্রদর্শন করা হয় নাস্তা না খেয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য, যে মাঠে ওই সময় আমিও মাঠে ছিলাম ২৫২ জনের মধ্যে যখন আমাদের শোকজ দেওয়া হয়, বিশৃঙ্খলা বা নাস্তা না খাওয়ার এরকম কোন কারণই আসলে ঘটেনি ওইদিন।
একটা একাডেমি সেখানে হচ্ছে অবশ্যই সুরক্ষিত এবং সিকিউরিটি ব্যবস্থাপন্ন জায়গা। ওখানে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ আছে এবং আমি ওইদিন নাস্তা সিসি ক্যামেরা ফুটেজের নিচে বসেই খাচ্ছিলাম কিন্তু আমাদের একটা মিথ্যা কারণ দেখিয়ে এবং পরিকল্পিতভাবে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে তারপর আমাদের অব্যহতি জানানো হয়। আমরা আজকে মৃতের মতো জীবনযাপন করতেছি। আমরা না হচ্ছে সামনে আগাতে পারছি। আমাদের অনেকটা ধাপে পিছনে নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের এখন একটাই দাবি, আমরা পুনর্বহাল চাই।
অন্যায়ভাবে কেন আমাদের বের করে দেওয়া হইছে। আমাদের কারণ প্রদর্শন করুক যে আমরা কি দোষ করেছিলাম। ওইদিন কেন একটা মিথ্যা অভিযোগ দেখে আমাদের বের করে দেওয়া হবে, আমি নিজে পলিটিক্সের প-পর্যন্ত জানিনা। আমি জীবনে কখনো পলিটিক্সের সামনে পর্যন্ত যাইনি। আমি পিছনে রাস্তা দিয়ে চলে গেছি। তাহলে আমি কেন?
আমাদেরকে যে কারণটা দেখানো হয়েছে আমাদেরকে বের করার জন্য শৃঙ্খলাভঙ্গ আসলে আমরা এরকম কোন শৃঙ্খলাভঙ্গ করি নাই। আমাদের উপরে যে অভিযোগটা দেওয়া হইছে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, সম্পূর্ণ ভুল কারণ হচ্ছে যেদিন, যেই তারিখে আমাদেরকে ইস্যু করা হয়েছে আমাদের শোকজ লেটারে আমরা নাস্তা না খেয়ে মাঠে হইচই করেছি, ওই ইস্যুতে মাঠে ওইদিন এরকম কোন ঘটনাই ঘটে নাই। আমরা প্রত্যেকে নিয়ম মতো আমাদের যে সকালে নাস্তা ছিল, সেই নাস্তা গ্রহণ করেছি। সঠিক সময়ে মাঠে পাসিংপ্যাড, প্র্যাকটিসে অংশগ্রহণ করেছি এবং সঠিক সময় ওস্তাদজি যখন আমাদেরকে ছুটি দিয়েছে তখন আমরা ব্যারাকে অবস্থান করেছি। আমাদের সাথে যারা অর্ধেক মানে ভিতরে যারা আছে, সারদা একাডেমিতে যারা অর্ধেক আছে, তাদের সাথে মিলিত করে আমাদেরকে অতি দ্রুত পোস্টিং দিয়ে তারপরে আমাদেরকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে।
আমার ফ্যামিলিতে নিজের বড় কোন ভাইও নাই যে সে রাজনীতি করবে, আমি কখনোই রাজনীতির কোন কিছুর সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলাম না। আমাদের সাথে অন্যায় করছে। আমাদের সাথে অবিচার করছে। বৈষম্যহীন রাষ্ট্রে, আমাদের সাথে সবার প্রথম বৈষম্য করা হয়েছে।”
সর্বশেষ অব্যহতিপ্রাপ্ত আরেক নারী বলেন, “সারদায় যারা থাকে প্রত্যেকটা পুলিশ বাহিনীর সদস্য তারা জানে সেখানে কি পরিমাণ ডিসিপ্লিনের মধ্যে আমরা চলেছি। আমরা নিশ্চয়ই ১১ মাস পরে কোন ইনডিসিপ্লিনের মত কাজ করবো না আর যদি এরকমটা কর্তৃপক্ষের মনে হয়ে থাকে যে আমরা ডিসিপ্লিন ভঙ্গ করছি তাহলে সেটার জন্য আমাদের যথাযথ ব্যবস্থা আছে, আমাদের শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা আছে কিন্তু তারা সেটা করেনি। তারা সরাসরি আমাদেরকে অব্যাহতি দিয়েছে। প্রিন্সিপাল স্যার, তাদেরকে আমরা স্মারকলিপি পাঠিয়েছি কিন্তু সেখান থেকে আমরা কোন প্রতি উত্তর পাইনি।
এমনকি কোন আশ্বাস পাইনি, যখন আমরা পাইনি আমরা দীর্ঘ দুই মাস থেকে আমরা প্রত্যেকটা মানুষ ট্রামাটাইজের মধ্যে। আমরা কি করব আমরা ভেবে পাচ্ছিলাম না, কেন আমাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে সেটাও আমরা জানিনা। আমাদেরকে যদি কোন রকম আশ্বাস দেয়া না হয় আমরা অবস্থান কর্মসূচি নিব।
প্রচন্ড মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছি, দিন দিন আমি কারো সাথে কথা বলতে পারি না। বাসা থেকে বের হতে পারি না। আমার মনে হয় যে এইতো হয়তোবা বের হলেই কেউ জিজ্ঞেস করবে, হ্যাঁ ও তো চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। শৃঙ্খলাভঙ্গ যেটা বলা হয়েছে আমরা শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছি সেখানে খুবই সিলি, সিলি কিছু ম্যাটার ছিল যেখানে বলা হয়েছে আমরা নাস্তা খাইনি, আমরা ক্লাসে অমনোযোগী ছিলাম। ঠিক আছে যদি কর্তৃপক্ষের এটাও মনে হয়ে থাকে, এটার যদিও কোন প্রমাণ নেই, এটার মানে একেবারে ভিত্তিহীন একটা কথা।”
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=7zQU34B8juE
মো. মহিউদ্দিন