ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

সরকারি চাকরি ছেড়ে বিএনপি’র রাজনীতিতে সালাউদ্দিন আহমেদ!

প্রকাশিত: ০২:৩৭, ৯ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ০৮:১০, ৯ জানুয়ারি ২০২৫

সরকারি চাকরি ছেড়ে বিএনপি’র রাজনীতিতে সালাউদ্দিন আহমেদ!

ছবি:- সংগৃহীত

বাংলাদেশের সবচেয়ে গৌরবময় ও বুনিয়াদী প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি করেছেন তিনি। জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব। কিন্তু সেই চাকরি ছেড়ে দেশমাতৃকার সেবায় যোগ দেন রাজনীতিতে। বিরোধী দলীয় রাজনীতি করায় জেল খেটেছেন অনেকবার। গুম হয়ে ফিরে এসেছেন,বলছি সালাউদ্দিন আহমেদের কথা। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির হাই কমান্ডের একজন নেতা যিনি দলটির নেতাকর্মীদের কাছে হয়ে উঠেছেন এক অনুপ্রেরণা প্রাণশক্তির নাম।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম হওয়ার পর টক অফ দ্য কান্ট্রি তে পরিণত হয়েছিল সালাউদ্দিন আহমেদ। ২০১৫সালের ১০ ই মার্চ নিখোঁজ হন বিএনপির এই নেতা। গোয়েন্দা পরিচয়ে তাকে তার উত্তরার বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়। নিখোঁজ হওয়ার পর তিনি নিজেকে আবিষ্কার করেছিলেন ভারতের শিলংয়ে। মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাফেরা করার সময় তাঁকে আটক করেছিল শিলং পুলিশ। তার নামে ঠুকে দেওয়া হয় অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা।

সালাউদ্দিন আহমেদ যখন মেঘালয়ে আটক হন।তখন তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। ভারতের জেলে থাকাকালে বিএনপি তাকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য করে।

১৯৬২ সালের ৩০জুন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার পেকুয়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী সিকদার পাড়া গ্রামে সম্ভ্রান্ত মৌলভী পরিবারে সালাউদ্দিন আহমেদের জন্ম। তার পিতা মৌলবী সাইদুল হক ও মাতা আয়েশা হক। ছোটবেলা থেকে সালাউদ্দিন আহমেদ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তিনি প্রাথমিক পর্যায়ে পড়ালেখা শেষ করে ১৯৭৭সালে পেকুয়ার শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে রেকর্ড সংখ্যক নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন।১৯৮৪ সালে এল এল বি এবং ১৯৮৬ সালে এল এল এম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে পরীক্ষা দিয়ে লাভ করেন অ্যাডভোকেট সনদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে সালাউদ্দিন আহমেদ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ সভাপতি সহ সফলতার সাথে আরো বিভিন্ন পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করেন।

কিছুদিন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রদলের দায়িত্বে থাকাকালে স্বৈরাচারী সরকারের রোষানলে পড়ে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন অনেকবার। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য পদ লাভ করলেও সালাউদ্দিন আহমেদ মির্জাকে আইন পেশায় যুক্ত করেননি। ১৯৮৫ সালে সপ্তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৮ সালে প্রশাসন ক্যাডারে চাকরিতে যোগদান করেন। বগুড়া জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ১৯৯১ সালে তিনি তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস হিসাবে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের জানুয়ারিতে এই সরকারি চাকুরী থেকে ইস্তফা দেন। সালাহ উদ্দিন আহমদ তখন থেকে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে নেমে পড়েন।

এরপর ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি কক্সবাজার ১ আসন থেকে বিজয় হ্যাটট্রিক করে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অষ্টম সংসদ নির্বাচনের পর চারদলীয় জোট দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠন করলে।সালাউদ্দিন আহমেদ ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। পাশাপাশি কক্সবাজার জেলার ইনচার্জ মিনিস্টার হিসাবেও দায়িত্বপালন করেন সালাউদ্দিন আহমদ। একমাত্র রাজনীতিবিদ যিনি যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হয়ে স্বাধীনতাত্তোর কক্সবাজার জেলা থেকে সর্বপ্রথম মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি বৃহত্তর চকরিয়া থেকে কিছু অংশ আলাদা করে ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পেকুয়া নামক একটি আলাদা উপজেলা প্রতিষ্ঠা করেন। ক্ষমতায় থাকাকালে পেকুয়ার প্রয়োজনীয় সকল অবকাঠামো, আধুনিক স্থাপনা ও উন্নয়ন করেছেন।

যে কয়েকজন রাজনৈতিক বিএনপির রাজনীতিতে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য করে তুলেছেন তাঁদের একজন ত্যাগী নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ। জেলা পর্যায় থেকে তিনি নিজেকে নিয়ে এসেছেন হাইকমান্ডে। তিনি ১৯৯৬ সালে প্রথমে কক্সবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং পরে পর পর দুবার কাউন্সিলের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে ২০১০ সালে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ভারতের মেঘালয়ের সিলং শহরে নির্বাসিত থাকাবস্থায় বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।  

রাসেল

সম্পর্কিত বিষয়:

×