ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

একনেকে ৪ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৪১, ৮ জানুয়ারি ২০২৫

একনেকে ৪ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৪ হাজার ২৪৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত দশটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ৬৩২ কোটি ১ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ২০৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪০৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
বুধবার একনেক সভায় প্রকল্পগুলো উত্থাপনের পর তাতে অনুমোদন দেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সভাটি অনুষ্ঠিত হয় পরিকল্পনা কমিশন চত্বরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে। সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ঊর্ধ্বমুখী। ফলে মূল্যস্ফীতির কারণে নি¤œবিত্ত, শ্রমজীবী ও দিনমজুরদের ওপর চাপ বাড়ছে। মধ্যবিত্তরাও চাপে আছে। তিনি আরও বলেন, সবাই বলছে, মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। যেটুকু কমেছে, এটি কিন্তু কম বলা যায় না। মূল্যস্ফীতি এখনো বাড়তিই আছে।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, করোনা মহামারি ও গণঅভ্যুত্থানের কারণে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি একটি ক্ষতি হয়েছে। তবে সুশাসিত গণতান্ত্রিক শাসনে যদি উত্তরণ হতে পারি, তাহলে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া অসম্ভব নয়। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো, একটি ভালো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত রচনা করা।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, দেশের নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা একটি পর্যালোচনা ও পরিকল্পনা তৈরি করছি। বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত দরকার। তবে ডেল্টা প্ল্যান তার জায়গায় থাকবে। সেটি শত বছরের পরিকল্পনা। কিন্তু শত বছরে বাংলাদেশের অবস্থা কী হবে, সেটি কোনো বিশেষজ্ঞই বলতে পারবেন না। আমাদের তাই মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার।
তিনি বলেন, সম্প্রতি রপ্তানিতে গতি ফিরেছে। রেমিটেন্স প্রবাহ আগের চেয়ে বাড়ছে। এটি আশার কথা। তবে ভোজ্যতেলে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব নয়।
সভায় অনুমোদিত প্রকল্পসমূহ হলো- অর্থ মন্ত্রণালয়ের চট্টগ্রাম কর ভবন নির্মাণ প্রকল্প; নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৩ প্রকল্প- মোংলা বন্দরে পশুর চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং, মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ (১ম সংশোধিত) ও এস্টাবলিশমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিসট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম; কৃষি মন্ত্রণালয়ের দুই প্রকল্প- ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদারকরণ (২য় পর্যায়) এবং সিলেট বিভাগে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি; এছাড়া, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনর্নির্মাণ/পুনর্বাসন (২য় সংশোধিত); বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯ নম্বর কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন;, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কনস্ট্রাকশন অব বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট মোনাসটেরি কমপ্লেক্স এটা লুম্বিনি কনজারভেশন এরিয়া নেপাল প্রকল্প এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ (৪র্থ সংশোধিত) প্রকল্প।
সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা কর্তৃক ইতোমধ্যে অনুমোদিত ৯টি প্রকল্প সম্পর্কে একনেক সদস্যদের জানানো হয়। সেগুলো হলো (১) রংপুর বিভাগীয় সদর দপ্তর কমপ্লেক্স, বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজির বাংলো নির্মাণ (১ম সংশোধিত); (২) সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীতকরণ (২য় সংশোধিত); (৩) উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী সুবিধাবঞ্চিত ৮৬টি এলাকা ও নদী বিধৌত চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন (২য় সংশোধিত); (৪) সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন (২য় সংশোধিত); (৫) মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্প (২য় সংশোধিত); (৬) আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন (১ম সংশোধন); (৭) পদ্মা বহুমুখী সেতুর ভাটিতে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলাধীন বিভিন্ন স্থানে পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ (২য় সংশোধিত); (৮) বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিনের সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার (২য় পর্যায়); (৯) আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট-২য় পর্যায় (২য় সংশোধিত) প্রকল্প।
চট্টগ্রাম কর ভবন নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এদিনের সভায়, যার মেয়াদকাল ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারিত। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪৩৭ দশমিক ৭ কোটি টাকা এবং এটি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

মোংলা বন্দরে পশুর চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং প্রকল্পও পরিকল্পনায় রয়েছে, যা ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ১৫৩৮ দশমিক ১৯ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১৩৮৪ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে এবং ১৫৩ দশমিক ৮২ কোটি টাকা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে হবে।
এছাড়া মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটির ব্যয় ৭৬৭ দশমিক ২৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৩৬ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং মেয়াদকাল জুলাই ২০১৯ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত।
সেই সঙ্গে এস্টাবলিশমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিসট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম। প্রকল্পটির ব্যয় ১১৩ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৩২ দশমিক ৬০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা নৌপরিবহন অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।
নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কনটেনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটির ব্যয় ২২৩ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬১৫ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং এর মেয়াদকাল জানুয়ারি ২০২০ থেকে জুন ২০২৭ পর্যন্ত।
এছাড়া, ডাল ও তেলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্প (২য় পর্যায়) বাস্তবায়িত হবে ২৬৫ দশমিক ৭৮ কোটি টাকায়, যা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) পরিচালনা করবে। প্রকল্পটির মেয়াদকাল ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত।
সিলেট বিভাগে ৪৯৯ দশমিক ৯৯ কোটি টাকায় ‘ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিএডিসি। এর মেয়াদকাল ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনর্নির্মাণ বা পুনর্বাসন (২য় সংশোধিত) প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৭৭৩ দশমিক ৪০ কোটি টাকা, যা বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রকল্পটির মেয়াদকাল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।
‘ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯নং কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) এবং এতে ব্যয় হবে ৬৪৬ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদকাল ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
শেষে, কনস্ট্রাকশন অব বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট মোনাসটেরি কমপ্লেক্স এটা লুম্বিনি কনজারভেশন এরিয়া, নেপাল প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬৮ দশমিক ৮ কোটি টাকা, যা বৌদ্ধধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটির মেয়াদকাল ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত।
সভায় উপস্থিত ছিলেন অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ; আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল; পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন; স্বরাষ্ট্র এবং কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব); শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া এবং এলজিআরডি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া; নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এবং ধর্ম উপদেষ্টা ড. আফম খালিদ হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

×