ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১

পাঠ্যবই ছাপানোর কাগজ নেই!

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ৭ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২২:৫২, ৭ জানুয়ারি ২০২৫

পাঠ্যবই ছাপানোর কাগজ নেই!

ছবি: সংগৃহীত

নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার পাঠ্যবই বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ১১ কোটি এক লাখ ৪৪ হাজার ৭১৬টি বই ছাপানো হয়েছে। এর অধিকাংশ ইতোমধ্যেই বিতরণ করা হয়েছে। তবে, এখনও অনেক বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

 

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিগত বছরগুলোতে বেশিরভাগ বই ভারত থেকে ছাপানো হলেও এ বছর সব বই দেশেই ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে ১০ থেকে ১২ লাখ মানুষ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকায় স্থানীয় অর্থনীতি উপকৃত হচ্ছে। তবে, ছাপার কাজ পরিচালনায় কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। এজন্য পাঠ্যবই বিতরণে বিলম্ব হচ্ছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বই সরবরাহ করা হলেও শিক্ষার্থীরা কিছু অসুবিধার মুখে পড়েছে।

 

তিনি আরও জানান, বিগত সরকারের আমলে পাঠ্যবই ছাপার ক্ষেত্রে একটি অসাধুচক্র সক্রিয় ছিল, যারা এবারও ছাপার কাজে অসহযোগিতা করেছে। এর ফলে প্রাথমিকভাবে কিছু বিঘ্ন ঘটেছে। তবে ভবিষ্যতে এ সমস্যা পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

এই কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দেশে বই ছাপানোর ফলে অর্থনৈতিকভাবে স্থানীয় কর্মজীবীরা উপকৃত হলেও শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হচ্ছে। আমরা আশা করছি, দ্রুত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।

 

সরকারের বিনা মূল্যের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে। কাগজ সংকটের কারণে ছাপাখানাগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বই ছাপাতে পারছে না।

জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ১১৬টি ছাপাখানা প্রতিদিন ৪০ লাখ কপি পাঠ্যবই ছাপানোর সক্ষমতা রাখে। কিন্তু কাগজ সংকটের কারণে তারা দিনে ২০ লাখ কপির বেশি বই ছাপাতে পারছে না।

 

কাগজ সংকটের বড় একটি কারণ হিসেবে নোট ও গাইড বই ছাপানোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। একশ্রেণির প্রেস মালিক অধিক মুনাফার লোভে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধ নোট-গাইড বই ছাপিয়ে চলেছেন। নোট ও গাইড বই ছাপিয়ে পাঠ্যবই ছাপানোর জন্য নির্ধারিত কাগজের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে চিঠি পাঠিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, জানুয়ারি মাসজুড়ে চলমান ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির নতুন পাঠ্যবই ছাপানোর কাজে নিযুক্ত প্রেসগুলোতে যেন নোট ও গাইড বই, ডায়েরি বা ক্যালেন্ডার ছাপানো না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

ঢাকা জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের পাঠানো চিঠিতে ১১৬টি প্রেসের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ এবং এসব প্রেসে নিয়মিত নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে, গত ৩ ডিসেম্বর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এক নির্দেশনায় জানায়, প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণির বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের নোট-গাইড বই ছাপানো বন্ধ রাখতে হবে। এনসিটিবি এই নির্দেশনায় পাঠ্যবই মুদ্রণ ও সরবরাহ কাজকে “জাতীয় ও নৈতিক দায়িত্ব” হিসেবে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চেয়েছে।


কাগজ সংকট নিরসনে সরকার এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ নোট-গাইড বই ছাপানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের হাতে যথাসময়ে পাঠ্যবই পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

 

 

 

তাবিব

×