ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে ছাপচিত্র বিভাগের বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর ছবি দেখছেন দর্শনার্থীরা
তারা সকলেই শিল্পিত পথের পথিক। দীক্ষা নিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাপচিত্র বিভাগে। সেই সুবাদে অহর্নিশ নিমজ্জিত থাকেন সৃজনশীলতার ভুবনে। তাত্ত্বিক জ্ঞানলাভের সমান্তরালে ছাপচিত্রের নানা মাধ্যমে রাঙিয়ে তোলেন ক্যানভাস। কাঠখোদাই থেকে এচিং কিংবা পেন্সিল স্কেচ থেকে লিথোগ্রাফি মাধ্যমের আশ্রয়ে ছবি আঁকেন।
বছরজুড়ে চিত্রিত সেসব চিত্রকর্ম এখন শোভা পাচ্ছে চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে। সেসব ছবিতে মূর্ত হয়েছে বিবিধ বিষয়। তার মধ্যে বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে ফিলিস্তিনের নিরস্ত্র জনগোষ্ঠীর ওপর ইসরাইলি আগ্রাসনের নির্মমতা। ইসরাইলিদের চালানো গণহত্যার বীভৎসতার সাক্ষ্য দিচ্ছে ওই ক্যানভাস। কোনো চিত্রপটে আবার উদ্ভাসিত হয়েছে চারপাশের চেনা জগত। রয়েছে স্টিল লাইফনির্ভর ছবি।
আছে গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবিময় চিত্রকর্ম। সেই সুবাদে দেখা মেলে ফসলের মাঠে কৃষকের ধান কাটার দৃশ্যকল্প। এছাড়া বিমূর্ত ধারার সঙ্গে নিরীক্ষাধর্মী চিত্রকর্ম ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শালয়ের দেওয়ালে। অনুষদের প্রিন্টমেকিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের এসব ছবি নিয়ে চলছে বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী।
রবিবার দুপুরে এই শিল্পায়োজনের সূচনা হয়। প্রদর্শনীর পাশাপাশি ছাপচিত্র বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা জোগাতে ২০২৩ ও ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মাধ্যমের ১৬টি শিল্পকর্মকে বিভিন্ন অর্থমূল্যের পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষদের ওসমান জামাল মিলনায়তনে প্রদর্শনীর উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপত ড. মামুন আহমেদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন প্রিন্টমেকিং বিভাগের অনারারি অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বারক্্ আলভী, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক এবং শিল্পগুরু সফিউদ্দীফন আহমেদ স্মৃতি সংগ্রহশালা ও সফিউদ্দীন শিল্পালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী আহমেদ নাজির।
সভাপতিত্ব করেন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আনিসুজ্জামান এবং এবং প্রিন্টমেকিং বিভাগের চেয়ারম্যান আসমিতা আলম শাম্মী।
ছাপচিত্রের বিভিন্ন মাধ্যমের মধ্যে সেরা নিরীক্ষাধর্মী কাজের জন্য ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের ১০২৪ সালের শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন আবু-আল-নাঈম। একই শাখায় সমমূল্যের সম্মানীর ২০২৩ সালের পুরস্কার পেয়েছেন ঋতুপর্ণা তালুকদার সাথী। শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়ার নামাংকিত নিরীক্ষাধর্মী কাজের জন্য ৩০ হাজার টাকা মূল্যমানের ২০২৪ ও ২০২৩ সালের পুরস্কার পেয়েছেন সৈকত আহমেদ ও সুমাইয়া সানজিন।
২০২৪ ও ২০২৩ সালের শিল্পী মাহমুদুল হক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ইস্তিনারাহ সুরাত নুবাহ ও সাহাদেব বিশ্বাস। রিলিফ প্রসেস মাধ্যম আশ্রিত ২০২৪ ও ২০২৩ সালের শ্রেষ্ঠ শিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন মিফতাহুল জান্নাত নাবেরি ও ফয়জুর রহমান ফিরোজ। এছাড়া ২০২৪ ও ২০২৩ সালের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমের কাজের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন আরিফা জাহান স্বর্ণা, জয় চাকমা, শান্তা ইসলাম মিম, তাজরিবা আক্তার, সৌমিক ঘোষ, উম্মে হাফসা, মেজবাহ ইসলাম ও পিনাক চক্রবর্তী দাস।
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় বক্তারা বলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ছাপচিত্র বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা শিল্পগুরু সফিউদ্দীনকে সাথে নিয়ে ১৯৪৮ সালে গড়ে তোলেন চারুকলা অনুষদ। সেই বাস্তবতায় ছাপচিত্র বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ক্রমশ উৎকর্ষতা অর্জন করছে এদেশের ছাপাই ছবি। আর ছাপচিত্র বিভাগের এই বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শিক্ষার্থীদের আগামী সম্ভাবনাকে মেলে ধরছে।
শিক্ষার্থীদের কাজকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে ধাবিত করতে এই শিল্পায়োজনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কারণ, এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের সৃজিত শিল্পকর্ম সকলের সামনে উপস্থাপনের সুযোগ পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে তাদের ভেতর ভালো কিছু করার কিংবা নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাটি অব্যাহত থাকবে।
ছাপচিত্র বিভাগের ২০২৩ ও ২০২৪ সালের শিক্ষার্থীদের বাছাইকৃত শিল্পকর্ম নিয়ে সজ্জিত হয়েছে এই শিল্পায়োজন। সব মিলিয়ে ঠাঁই পেয়েছে ১৮০টি শিল্পকর্ম। আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।