ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

দুই মাসে এক নারী চিকিৎসককে ৪ বার বদলি !

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:০৭, ৩ জানুয়ারি ২০২৫

দুই মাসে এক নারী চিকিৎসককে ৪ বার বদলি !

‘গেল দুই মাসে আমাকে চারবার বদলির আদেশ দেওয়া হয়। এগুলো বিব্রতকর ও অপমানজনক। বার বার এই বদলির ফলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছ।’ ৩০ বিসিএসের একজন চিকিৎসক স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বরাবর সুবিচার চেয়ে লেখা এক আবেদনে এ কথা তুলে ধরেন।

হাসিবা মুনতাহা নামের ওই চিকিৎসককে ১১/১১/২৪ তারিখে সংক্রামকব্যধি হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) পদায়ন করা হয়। মাস না পূরণ হতেই তাকে ০৮/১২/২৪ তারিখে কুমিল্লার চান্দিনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়। তারও একদিন পর ১০/১২/২৪ তারিখে ফের ঢামেকে পদায়নের আদেশ দেওয়া হয়। ১২ দিনের মাথায় ২৩/১২/২৪ তারিখে আবারও তাকে বদলি করতে মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ দেওয়া হয়।

শুধু হাসিবা মুনতাহার নয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পদায়ন/বদলি নিয়ে খামখেয়ালির শিকার অনেক চিকিৎসক। স্বৈরাচারের দোসরকে বদলি ফের বাতিল করে পুনর্বহাল, একই অর্ডারে এক ব্যক্তিকে একাধিক যায়গায় বদলিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। অথচ নিয়মিত ও জরুরি বদলি পদায়নের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও অর্ডার করতে পারছেন না অনেকে।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে গেল ২৮ নভেম্বর এক আদেশে ৪৭জন চিকিৎসককে বদলি করা হয়। এরমধ্যে ২০ নং সিরিয়ালে ডাঃ মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতাল থেকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করে। এই চিকিৎসক ৫ আগস্টের আগে ছাত্রদের আন্দোলনকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস এবং সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ দাবি করে এর প্রতিবাদে এবং শেখ হাসিনা সরকারকে সমর্থন জানিয়ে শান্তি সমাবেশে নেতৃত্ব দেন। স্বৈরাচারের দোসর এই চিকিৎসককেও বদলির এক মাসের মধ্যে ফের ঢাকায় এনে পুনর্বাসন করা হয়।

একই আদেশে ৫৭ চিকিৎসকের বদলি করা হয়। এরমধ্যে একজনকে দুই যায়গায় পদায়ন করা হয়।

চিকিৎসকদের সঙ্গে এমন অপেশাদার আচরণের হেতু খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন তদবিরের পাশাপাশি অর্থের বিনিময় এবং ব্যক্তিগত ক্ষোভ ঝাড়তে এমনটা করছেন সংশ্লিষ্ট ডেস্কে নিয়োজিত কর্মকর্তা। অনেকে আবার আর্থিক লেনদেনে সুবিধামতো পদায়ন নিচ্ছেন। স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বহালের পেছনে অর্থ ও বিএনপি একজন কেন্দ্রীয় নেতারও নাম উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ডেস্কের দায়িত্বে নিয়োজিত সিনিয়র সহকারী সচিব ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমি যেভাবে নির্দেশনা পাই, সেভাবে কাজ করি। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আপনি যেগুলো বলেছেন, সেগুলোর কারণ যারা নির্দেশনা দিয়েছেন, তারা ভালো বলতে পারবেন।’

ভিক্টিম চিকিৎসক হাসিবা মুনতাহা বলেন, ‘আমার বদলি নিয়ে আমি বেশ বিব্রত। এই মুহুর্তে্ এমন বদলি অপমানজনক। আমি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর আবেদন করে বিষয়টি জানিয়েছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে নিয়োজিত স্যারদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা এ নিয়ে ক্ষুব্ধ। আশা করি, এর ভালো সমাধান পাবো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, আমরা মাসের পর মাস ঘুরে জরুরি প্রয়োজনে বদলি বা পদায়ন পাই না। অথচ ঠিকই একেকজনের নামে এক মাসেই একাধিক অর্ডার হচ্ছে। এসব বদলি পদায়নে রাজনৈতিক সুপারিশ থাকে। এরই ফাঁকে আবার কিছু অসাধু কর্মকর্তাও লেনদেনের মাধ্যমেও করে থাকেন।

নুসরাত

×