ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১

সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?

প্রকাশিত: ০১:৪৭, ৩ জানুয়ারি ২০২৫

সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?

সরকার রেস্তোরাঁয় খাওয়া, পোশাক কেনা বা বিমান ভ্রমণে অতিরিক্ত খরচের জন্য ভোক্তাদের ওপর কর বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। রাজনৈতিক পরিবর্তন পর আশা করা হচ্ছিল নিত্যপণ্যের দাম কমবে, কিন্তু তা হয়নি, বরং করের বোঝা সাধারণ মানুষের ওপর চাপানো হচ্ছে। মধ্যবর্তী সময়ে এই কর বাড়ানোর প্রক্রিয়া বেশ অবাক করছে, কারণ সাধারণত বাজেটের সময় কর বাড়ানো হয়, কিন্তু এই সময়ে যখন মূল্যস্ফীতি ১৩% এর কাছাকাছি, তখন কর বাড়ানো হচ্ছে।

বিশেষ কিছু আইটেমের ওপর কর তিন গুণ বা দুই গুণ বাড়ানো হচ্ছে, যেমন রেস্টুরেন্টে খাবারের ওপর ৫% থেকে ১৫% এবং তৈরি পোশাকের ওপর সাড়ে সাত থেকে ১৫%। তবে, এনবিআর এখনো ৪৩টি আইটেমের নাম প্রকাশ করেনি, যার মধ্যে সাধারণ বা গুরুত্বপূর্ণ কিছু আইটেমও থাকতে পারে। পাশাপাশি, ভ্যাটের স্লাব ৩ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৫০ লাখ টাকা করা হচ্ছে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য চাপ বাড়াবে।

বিভিন্ন ব্যবসায়ী বা ভোক্তা পক্ষ থেকে প্রশ্ন উঠছে যে, এই অতিরিক্ত কর সাধারণ মানুষকে আরও সমস্যায় ফেলবে না তো। অর্থ উপদেষ্টা যদিও বলছেন যে এর প্রভাব কম হবে, তবে বাস্তবে ব্যবসায়ীদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে। ব্যবসায়ী হিসেবে অনেকেই উদ্বিগ্ন, কারণ তাদের উপর চাপ বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। বিশেষ করে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে ১৫% ভ্যাট ক্রেতারা কীভাবে নেবেন।

অন্যদিকে, এনবিআর এর কর্মকর্তাদের অসাধু আচরণ এবং মাঠ পর্যায়ে কর ফাঁকি বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন যে, এই হঠাৎ পরিবর্তন এবং দ্রুত কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক সংস্কারের দিকে মনোযোগ না দিয়ে করের বোঝা চাপানোর একটি উপায় হতে পারে। তারা মনে করছেন যে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত ধাপে ধাপে নেয়া উচিত ছিল, এবং আইএমএফ বা বিশ্ব ব্যাংকের মত আন্তর্জাতিক সংস্থার সাহায্য নিয়ে দেশের জনগণ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল।

মূল্যস্ফীতির কারণে বাজারে ক্রেতা সংখ্যা কমে গেছে, আমাদের ব্যবসাগুলিতে ৩০-৪০% সেল কমে গেছে। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে; একটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি, অন্যটি রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যা খুবই খারাপ। সন্ধ্যার পর ঢাকা শহরে মানুষ বাইরে বের হতে চায় না, রেস্তোরাঁগুলোতে খোঁজ নিলেও দেখা যায় যে লাইট জ্বালানো হলেও এক-দুজন মানুষ দেখা যায়।

শুক্রবার এবং শনিবার ছাড়া সারা বাংলাদেশে ব্যবসা হয় না, তাই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বাঁচানোর জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। যে কোনো সরকার আসুক, সমস্ত অযথা জুলুম ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ওপর পড়বে। আরেকটি বিষয়, আমি বলতে চাচ্ছি যে উদ্যোক্তাদের জন্য একটা লেভেল প্লেইং ফিল্ড থাকা দরকার।

যদি লেভেল প্লেইং ফিল্ড না দেওয়া হয়, তাহলে আমি ভ্যাট দেব, ট্যাক্স দেব, কিন্তু আমার পাশের একজন উদ্যোক্তা ভ্যাট ও ট্যাক্স দেবে না, সে এনবিআর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলবে। স্ট্রিট ফুডে ভ্যাট ও ট্যাক্স না দেওয়ার ফলে সে নিজের ব্যবসা ইচ্ছামত চালাতে পারবে, কিন্তু এভাবে প্রতিযোগিতা সম্ভব নয়।

আমাদের দাবি হলো, যদি একটি নীতি করতে হয়, তাহলে তা সবার জন্য সমান হতে হবে। এখন পর্যন্ত ইএফডি মেশিন ৫% ক্ষেত্রেও পৌঁছাতে পারেনি। যেসব রেস্তোরাঁ ভালো চলছে, সেখানে ভর্তুকি বেশি দেওয়া হচ্ছে, অথচ অন্যত্র কম জুলুম হচ্ছে।

এভাবে একটি রাষ্ট্র চলতে পারে না। আইএমএফ এর চাপেই এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে, যদিও আইএমএফ এর পরামর্শ ১৯৯১ সালে ভ্যাট সংক্রান্ত ভালো ছিল, কিন্তু আজকের পরিপ্রেক্ষিতে সব পরামর্শ উপযোগী নাও হতে পারে। সরকারের উচিত এসব পরামর্শকে ফিল্টার করে নেওয়া।

রাজু

×