ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

পাচার হওয়া এক লাখ কোটি টাকার খোঁজে অনুসন্ধান শুরু

গতি এসেছে দুদকের কাজে

নিয়াজ আহমেদ লাবু

প্রকাশিত: ২২:২৯, ১ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৬:০২, ২ জানুয়ারি ২০২৫

গতি এসেছে দুদকের কাজে

গতি এসেছে দুদকের

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর নড়েচড়ে বসেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ তাদের পরিবারের অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে। ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ আটটি প্রকল্পের ২১ হাজার কোটি টাকা লোপাট এবং তাদের পরিবারের দেশে-বিদেশে লেনদেনের যাবতীয় নথি তলব করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। এ ছাড়া আলোচিত তিন শতাধিক সাবেক শীর্ষ আমলা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ব্যবসায়ী, পুলিশের বিভিন্ন অনিয়মের সন্ধান শুরু করেছে। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সংস্থাটি। দুর্নীতিতে অভিযুক্ত প্রায় তিনশ’ জনকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। 
এদিকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাচার হওয়া প্রায় এক লাখ কোটি টাকার খোঁজে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব টাকা পাচারের পেছনে রয়েছেন সাবেক ৩১ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ীসহ শতাধিক। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে ১২টি দেশে ৭১টি চিঠি দিয়েছে দুদক। সব মিলে অন্তর্বর্তী সরকারের ৪ মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রম গতি ফিরে পেয়েছে। অতীতের সব রের্কড ছাড়িয়ে গেছে সংস্থাটি। 
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এমপি, পুলিশের র্শীষ কর্মকর্তা, হলমার্ক, বেসিক ব্যাংকের মতো আলোচিত শতাধিক দুর্নীতির মামলা কোনো গতি হয়নি। সংস্থাটির বক্তব্য ফুলঝুরি ছড়াল কাজের কাজ কিছু হয়নি। ফলে দুর্নীতি দমনে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে জনমনে।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর দুর্নীতি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এরপরই সংস্থাটি সংস্কার শুরু হয়। গত ১১ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ও দুই কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলী আকবার আজিজীকে নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব নেওয়ার পরই দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজে গতি বেড়ে যায়। দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, সাত দিনের মধ্যে তার নিজের সম্পদের হিসাব জমা দেবেন এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন। তিনি তার কথা রেখেছেন। 
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, যেখান থেকে গণঅসন্তোষের সৃষ্টি, সেটা হচ্ছে বৈষম্য। বৈষম্য মানেই দুর্নীতি। আমরা যদি দুর্নীতিকে কাত করতে পারি, কমিয়ে আনতে পারি তাহলে  বৈষম্য ক্রমাগত কমে যাবে। একেবার নির্মূল হয়তো হবে না। বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। এতে রাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই কাজগুলো যারা ঘটিয়েছেন তারা যাতে শেষ পর্যন্ত ছাড় না পান আমরা সে বিষয়টিই চেষ্টা করব। এর পরই সাবেক প্রধানমন্ত্রী  ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্ত শুরু করে। এমনকি দুদকের সাবেক কমিশনার জহুরুল হকের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করে।
গত ২৪ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৮ প্রকল্পে দুর্নীতির নথি চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এদিকে হাসিনা রেহানা পরিবারের দেশে-বিদেশে লেনদেনের যাবতীয় নথি তলব করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। এ ছাড়া পদ্মা সেতু দুর্নীতি ষড়যন্ত্র মামলা পুনরায় তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 
দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিশেষ অগ্রাধিকারের আট প্রকল্পে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নথি চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। মঙ্গলবার এসব প্রকল্পের তথ্য চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চিঠি পাঠানো হয়েছে। এসব অগ্রাধিকারের এ প্রকল্পগুলোতে ২১ হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে।
প্রকল্পগুলো হচ্ছেÑ মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২, মীরসরাই বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, প্রথম পর্যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন, বঙ্গবন্ধু শেখ শিল্পনগরে দুটি মডার্ন ফায়ার স্টেশন স্থাপন, মীরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্প।  
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহানা ও তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরদিন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি দলকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুদকের পাঁচ সদস্যের এ দল আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকারের আট প্রকল্পে শেখ হাসিনাসহ অন্যান্যের বিরুদ্ধে ওঠা ২১ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করবে। একই দল অনুসন্ধান করবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ৫৯ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে হাইকোর্ট রুল জারির দুইদিন পর দুদকের পক্ষ থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি ডলার পাচারের আরেকটি অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
১৭ ডিসেম্বর প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
গত ২৩ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের দেশে-বিদেশে লেনদেনের যাবতীয় নথি তলব করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো চিঠিতে সংস্থাটির অনুসন্ধান টিম সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের নামে পরিচালিত অফশোর ব্যাংকের হিসাব বিবরণীসহ সব অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে। একই সঙ্গে টিম নির্বাচন কমিশন অফিস এবং ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসেও তাদের ব্যক্তিগত নথিপত্র তলব করে চিঠি দিয়েছে বলেও জানা গেছে। দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান। 
দুদক বর্তমানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ নয়টি প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের পৃথক আরেকটি অভিযোগ অনুসন্ধান করছে সংস্থাটি।
অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিনের নেতৃত্ব পাঁচ সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের অন্য সদস্যরা হচ্ছেন উপ-পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, সহকারী পরিচালক এসএম রাশেদুল হাসান ও সহকারী পরিচালক একেএম মর্তুজা আলী সাগর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল হয়ে যায় দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অভিযোগে। পরে নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে হাত দেয় বাংলাদেশ সরকার। দুর্নীতির ওই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হন সেই সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী আবুল  হোসেন। অভিযোগ ছিল সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। তবে তাদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির  কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে দুদকের পক্ষ থেকে সে সময় জানানো হয়। 
দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন জানান, পদ্মা সেতুর দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মামলা পুনরায় তদন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। ইতোমধ্যে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
গত ২৬ ডিসেম্বর ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে ৬টি প্লটে ৬০ কাঠা জমি বরাদ্দ নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা। এই অভিযোগে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অপর সদস্যরা হচ্ছেন, শেখ তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ (জয়), মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), শেখ রেহানার ছেলে রেদোয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি এবং রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকী। দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন জানান, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের ১৩/এ ধারার ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ (জয়), মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), ছোট বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রেদোয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি এবং রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকীর নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নং রোডে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ৬টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এ নিয়ে কমিশন থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২২ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ওঠা ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। তারও আগে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের টিম গঠন করে কমিশন। ওই দুটি অভিযোগ একই অনুসন্ধান টিম অনুসন্ধান করছে। তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ করছে বলে জানা গেছে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর এ অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ।
গত ৭ সেপ্টেম্বর বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাচার হওয়া লাখ কোটি টাকার খোঁজে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এসব টাকা পাচারের পেছনে রয়েছেন সাবেক ৩১ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য। এদের মধ্যে আটজন মন্ত্রী, ছয়জন প্রতিমন্ত্রী, একজন উপমন্ত্রী এবং ১৬ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। তারা হলেনÑ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সাবেক নৌ-পরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, সাবেক মৎস্য ও প্রাণি সম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান, সাবেক রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম, সাবেক মৎস্য ও প্রাণি সম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সাবেক নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, সাবেক উপমন্ত্রী ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব।
এ ছাড়া খুলনা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আকতারুজ্জামান বাবু, সাবেক হুইপ ও নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, সাবেক হুইপ সামশুল হক চৈৗধুরী, সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল ও তার স্ত্রী অপু উকিল, সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী, শাহ আলম তালুকদার, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, ডা. মনসুর রহমান, মো. আবুল কালাম আজাদ, সোলায়মান হক জোয়ার্দার (ছেলুন), সাইফুজ্জামান শিখর, তানভীর ইমাম, শফিকুল ইসলাম শিমুল ও সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। এ ব্যাপারে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, সাবেক এমপি-মন্ত্রীদের অর্থ পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। কোন কোন দেশে কার কী পরিমাণ সম্পদ পাচার হয়েছে সেগুলোর খোঁজে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং হবে।
সাবেক কমিশনার জহুরুল হকের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু ॥ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের সদ্য সাবেক কমিশনার জহুরুল হকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ২৪ ডিসেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 
দুদকের জনসংযোগ সূত্রে জানায়, দুদকের ইতিহাসে কমিশনার পদ মর্যাদার কোনো কর্মকর্তাকে আজ পর্যন্ত অনুসন্ধানের মুখোমুখি হতে হয়নি। এবারই প্রথম দুদকের সাবেক কোনো কমিশনারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অবৈধ সম্পদ ও দুর্নীতির অভিযোগ দুদক থেকে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার সাবেক কমিশনার মো. জহুরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু হওয়া ওই চিঠি ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর ও স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) বাংলাদেশ পুলিশ দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল।
২০২১ সালের ১০ মার্চ কমিশনার হিসেবে মো. জহুরুল হক দুর্নীতি দমন কমিশনে যোগদান করেন। গত ৩০ অক্টোবর পদত্যাগ করেন। ওইদিন দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং কমিশনার আছিয়া খাতুনও পদত্যাগ করেন।
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ ॥ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাচার হওয়া প্রায় এক লাখ কোটি টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে এখন পর্যন্ত ১২ দেশে ৭১টি মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে ২৭টি এমএলএআরের জবাব পেয়েছে সংস্থাটি। মঙ্গলবার দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।
দুদক মহাপরিচালক জানান, বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, মালয়েশিয়ায়, সিঙ্গাপুরে মানি লন্ডারিং বেশি হয়। পাচার হওয়া অর্থের তথ্য চেয়ে দুদক ৭১ টি চিঠি পাঠিয়ে জবাব পেয়েছে মাত্র ২৭টির। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে দুদক কীভাবে সহযোগিতা পেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই), ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস ফর ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি), বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ধারাবাহিকভাবে দুদকের সঙ্গে পাচারকৃত অর্থ ফেরতসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সভা করেছেন।
এর আগে বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আলোচিত কয়েক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। 
যার মধ্যে রয়েছে ‘ছাগল কাণ্ডে’ নাম আসা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। এ ছাড়া করোনা রিপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ডে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. আবুল কালাম আজাদ, সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনের নামে মামলা করেছে দুদক। 
মধ্য জুলাই থেকে দুদকের কার্যক্রমে কিছুটা ধীরগতি দেখা যায়। এ সময় কমিশনের মামলা, অভিযোগপত্র কিংবা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত ছিল কম। পরে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরই দুদক নড়েচড়ে বসে। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনের পর দুদকের গতি বাড়তে থাকে।   

×