নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রকাশ্যে স্বাধীনভাবে সব ধরণের কার্যক্রমে বাধাগ্রস্ত হয় ইসলামি ছাত্রশিবির। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতিবছর সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব বাছায় করে ছাত্রশিবিরের সদস্যরা। সারাদেশ থেকে আসা সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটের নির্বাচিত হয় ছাত্র সংগঠনটির সভাপতি। ২০০৯ সালে সর্বশেষ বাধাহীন সম্মেলন করে ছাত্রশিবির। পরবর্তী ২০১০ সালে সম্মেলন করত গেলে ব্যাপক বাধার মুখে সম্মেলন শেষ করতে হয় তাদের। এরপর থেকে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের দমন নিপীড়নে বাধাগ্রস্ত হয়েছে ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রম।
ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রকাশ্যে স্বাধীনভাবে সংগঠন কার্যক্রম শুরু করেছে ছাত্রশিবির। আগামী ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েছে ইসলামী ছাত্র শিবির।
২০০৯ সালে সর্বশেষ বাধাহীন সম্মেলনে ছাত্রশিবিরের সভাপতি নির্বাচিত হন ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন। তার সঙ্গে সেক্রেটারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টেরে আইনজীবী হিসাবে আছেন। ২০১০ সালে ছাত্রশিবিরের সভাপতি হিসেবে পুনরায় সভাপতি হন ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। সে সময় সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব নেন ডা. মুহাম্মদ ফকরুদ্দিন মানিক।
২০০৮ সালে তৎকালীন সেনা প্রধান মঈন ইউ আহমেদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.ফখরুদ্দীন আহমদের সঙ্গে মিলে ভারতের প্রেসক্রিপশনে নির্বাচনে জয় লাভ করে ক্ষমতায় বসেন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে বিপরীত মতের ওপর একের পর আক্রমণ চালাতে শুরু করে হাসিনা সরকারের প্রশাসন। যার প্রথম আঘাতটি আসে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর। ক্ষমতায় বসার পর থেকে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে হল দখল থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর চালাতে শুরু করে নারকীয় নির্যাতন।
২০০৯ সালের ৯মার্চ মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসায় যাওয়ার পথে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে হত্যা করে ছাত্রশিবিরের সাথি হাফেজ রমজান আলীকে। এই ঘটনার তিনদিন পর ১৩ মার্চ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সন্ত্রসীরা নির্মমভাবে হত্যা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সেক্রেটারি শরীফুজ্জামান নোমানীকে। ক্যাম্পাসে সেই হত্যার রাজনীতি সর্বশেষ ২৪ সালের অভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত চালিয়েছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রশিবিরের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুসারে দেখা যায়- ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৯৯ জন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীকে হত্যা করে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা।
২০১০ সালে দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত হওয়া ছাত্রশিবিরের সভাপতি বর্তমান ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের সেক্রেটারি ড.মুহাম্মদ রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেন, ২০০৮ সালে মঈন ইউ ও ফখরুদ্দীনের সহযোগিতায় ক্ষমতায় বসেন শেখ হাসিনা। তার পর থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা শুরু করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ২০০৯ সালে সদস্য সম্মেলন করতে পারলেও ২০১০ সালে সম্মেলনের আগের দিন রাতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও প্রশাসন। এরপর থেকেই প্রকাশ্যে ছাত্রশিবিরের সম্মেলন বন্ধ হয়। ২০১১ সাল থেকে অনেকটা ঘরোয়াভাবেই সম্মেলন শেষ করতে হয় ছাত্রশিবিরের।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের হাতে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। ক্ষমতায় বসার পরপরই প্রথম থাবাটা দেয় ছাত্রশিবিরের ওপর। ক্ষমতায় বসার পরই মানুষের ভোটের অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার নষ্ট করে আওয়ামী লীগ। যার পরিণতি তারা এখন ভোগকরছে। আমরা চাই না ভবিষ্যতে কেউ এমন পথ বেছে নিক। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে যাতে করে আর কেউ যেন কারও কোনো প্রকার অধিকার হরণ করতে না পারে।
২০১১ সালে দায়িত্ব নেওয়া ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল এবং দুইবারের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, ফ্যাসিবাদ শাসনের কারণে ২০১১ সাল থেকে আমরা প্রকাশ্যে কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন করতে পারিনি। ২০১১ সালের সদস্য সম্মেলনের ভোট অনলাইনে নেওয়া হয়। সে সময় শুধু আমাদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি বাছাইকৃত দায়িত্বশীলদের নিয়ে সরাসরি ঘরোয়া পরিবেশে করা হয়।
তিনি বলেন, এবারের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলনের অনুভূতি হবে ভিন্ন আগের চেয়ে ভিন্ন। যেহেতু ছাত্রশিবির সাধারণ ছাত্রদের বড় একটি অংশের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে তাই এবার সবাইকে নিয়েই এবারের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন হবে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রশিবিরের ভূমিকা ছিল অন্যতম। ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা সম্মুখ সাড়িতে থেকে লড়াই করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থেকে আন্দোলন করে বাংলাদেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করেছে। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান সব বারের চেয়ে এবারের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে ভিন্নমাত্রা যোগ করবে।
কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন নিয়ে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সাদেক আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, সম্মেলনের জন্য অন্তর্রবর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুমিত দেওয়া হয়েছে। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।