তাবলিগের সাদপন্থি নেতা মুয়াজ বিন নূরের নিঃশর্ত মুক্তি
তাবলিগের সাদপন্থি নেতা মুয়াজ বিন নূরের নিঃশর্ত মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার মাঠে সংঘর্ষের ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিও করা হয়েছে। সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সাদপন্থি পক্ষের মাওলানা শফিক বিন নাঈম এসব দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাওলানা শফিক বিন নাঈম জানান, ১৮ ডিসেম্বর টঙ্গীর ময়দানে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, সেজন্য আমরা মর্মাহত। আমরা লক্ষ্য করেছি, এই ঘটনাকে রাজনৈতিক আলেমরা তাদের স্বার্থসিদ্ধির প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করছেন। সারা দেশে অহিংস ও শান্তিপ্রিয় তাবলিগ জামাতের মাওলানা সাদের অনুসারীদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাট ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন জায়গায় আমাদের সাথীদের ওপর বর্বরোচিত আক্রমণ হচ্ছে। সোমবার ফজরের নামাজের সময় রাজধানীর লালবাগের নিউ পল্টন আল হেরা জামে মসজিদ থেকে জোবায়েরপন্থিরা তৌকিরসহ ১০-১২ জন সাদপন্থিদের মুসল্লিকে বের করে দিচ্ছে। তিনি জানান, মামলা ছাড়াই সাথীদের গ্রেপ্তার, বিভিন্ন মসজিদে সাথীদের নামাজ ও ইবাদত করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের সহযোগিতায় একদল উগ্রপন্থিরা বাসাবাড়িতে গিয়ে তাবলিগের সাথীদের মারধর করছেন। অন্যায়ভাবে একপক্ষের মুখপাত্রকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, বিদেশী মেহমানমানদের ওপরও তারা হামলা করছেন।
মাওলানা শফিক বলেন, গত ২০ ডিসেম্বর টঙ্গীর তুরাগ তীরে আমাদের পূর্ব নির্ধারিত জোড় (পুরানা তাবলিগের সাথীদের বাৎসরিক সম্মেলন) করার লক্ষ্যে ইজতেমা মাঠের পশ্চিম পাশে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছিলেন। যে কোনো সংঘাত এড়াতে আমরা ইতোপূর্বে প্রশাসনকে বার বার অবহিত করে ৩৬টি চিঠি দিয়েছি। তা ছাড়া যোবায়েরপন্থি ও হেফাজতের নেতাদের কাছে আমরা শান্তি ও সমঝোতার প্রস্তাব জানিয়েছি। কিন্তু তারা সমঝোতা করেননি। এমনকি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকেও আমাদের তাবলিগের সাথীদের পুলিশ ও সাংবাদিকদের সামনে তারা প্রকাশ্যে অপহরণ করে কাকরাইল মসজিদে নিয়ে নির্যাতন করেছেন।
তিনি জানান, টঙ্গীর ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করার জন্য আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাই। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, উস্কানিদাতা ও পরিকল্পনাকারী। তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক? এটাই আমাদের চাওয়া। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন এমনভাবে গঠন করা হোক? যেখানে পূর্বের ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতিনিধিরা অবশ্যই থাকবে না! থাকবেন সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সাবেক বিচারপতি, সুশিল সমাজ ও মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধগণ।
যেহেতু বিষয়টি বিশ্ব ইজতিমা সংক্রান্ত এবং এর সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তির সম্পর্ক, কাজেই বিশ্ব ইজতেমা যদি না হয় বা সুষ্ঠুভাবে না হয়, তাহলে বিদেশী মেহমানগণ আমাদের দেশে আসবেন না। এতে সরকারের সম্মান ও সুনাম সারা বিশ্বে, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে চরমভাবে ক্ষুণœ হবে।
তাই সরকার ঘোষিত আগামী বছর ৭-৯ ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব ইজতিমার দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি ও বিদেশী মেহমানদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়ে মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীদের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে সব রকমের সহযোগিতা আশা করছি। কারণ গত বছরের ইজতেমায় ‘যোবায়েরপন্থিদের বিদেশী মেহমান ছিল ১২ শত জন, আর নিজামুদ্দীনের অনুসারীদের মেহমান ছিলেন নয় হাজারের বেশি।
এই সংবাদ সম্মেলন থেকে ১০ দফা দাবিও তুলে ধরেন মাওলানা শফিক। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের নামে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, মুফতি মুয়াজ বিন নূরকে দ্রুত নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে, সারা দেশে মসজিদভিত্তিক তাবলিগের কাজকে সমান অধিকারের ভিত্তিতে পরিচালনার পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে, তাবলিগের যে কোনো বিষয়ে হেফাজত বা যোবায়েরপন্থি এমন একপক্ষের ব্যক্তিদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পরিহার করতে হবে, সঠিক সময়ে কাকরাইল মসজিদ এবং টঙ্গী ইজতেমা ময়দান বুঝিয়ে দিয়ে নির্দিষ্ট তারিখে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠান করার সব কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে, নিজামুদ্দীনের অনুসারীদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, তাবলিগের উভয়পক্ষকে নিয়ে সমঝোতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মঞ্জরুল হক, মাওলানা মাসুদুল হকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।