ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

গুচ্ছ ভর্তি বহাল রাখতে ২৪ ভিসিকে নির্দেশনা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:০১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

গুচ্ছ ভর্তি বহাল রাখতে ২৪ ভিসিকে নির্দেশনা

গুচ্ছ ভর্তি বহাল রাখতে ২৪ ভিসিকে নির্দেশনা

গুচ্ছ ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সাধারণ গুচ্ছভুক্ত ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে (ভিসি) একটি জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে স্ব স্ব উপাচার্যের বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। এর আগে সার্বিক পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দফায় দফায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যকে চিঠি পাঠানো হয়। এমনকি শিক্ষা উপদেষ্টা তার অফিসিয়াল প্যাডে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিগুলো তুলে ধরে আধা-সরকারি একটি পত্রও পাঠান। তবুও গুচ্ছে ফিরতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অবশেষে সোমবার এই জরুরি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। 
নির্দেশনায় গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার সুষ্ঠু উন্নয়ন ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য ২০২০ সাল থেকে দেশের সরকারি সাধারণ, কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থীদের আর্থিক ও মানসিক চাপ কমানো, ভর্তি প্রক্রিয়ার সময় সাশ্রয় করা এবং মেধাভিত্তিক, স্বচ্ছ ও সমন্বিত পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী নির্বাচন নিশ্চিত করা।
এতে আরও বলা হয়, উচ্চশিক্ষার উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীবান্ধব একটি কার্যক্রম হিসেবে গুচ্ছ পদ্ধতি ইতোমধ্যে জনমনে আস্থা অর্জন করেছে। এ পদ্ধতিতে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথকভাবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, আবাসন এবং অন্যান্য খরচ বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। গুচ্ছ পদ্ধতির মাধ্যমে একটি মানসম্মত প্রশ্নপত্রের ভিত্তিতে মেধাভিত্তিক ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি অভিভাবকরা একাধিক ভর্তি পরীক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
‘গত ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় এ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব উদ্যোগে পৃথকভাবে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা করছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীদের এবং অভিভাবকদের জন্য তা বাড়তি আর্থিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে এবং জনমনে শিক্ষা প্রশাসনের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবে।’
জরুরি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের পুনরায় গুচ্ছ পদ্ধতির সুফল বিবেচনা করে এ পদ্ধতি বজায় রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে এ সংক্রান্ত একটি সভা করার পাশাপাশি গুচ্ছ পদ্ধতি বহাল রাখার বিষয়ে একটি পত্র জারি করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা উপদেষ্টা স্বাক্ষরিত একটি আধা-সরকারি পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। এ অবস্থায় উপাচার্যদের নেতৃত্বে তার বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
জানা যায়, গত ১ ডিসেম্বর শিক্ষা উপদেষ্টা একটি চিঠিতে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তির ব্যবস্থা অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ জানান। এরপর ১০ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে গুচ্ছ ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়।
গত ২৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তিতে গুচ্ছ পদ্ধতির বিষয়ে জরুরি বৈঠক করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী বেশি এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং তুলনামূলক নতুন প্রতিষ্ঠিত ও জনবল কম থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ পদ্ধতি রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ফলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছিল।
গুচ্ছ ছেড়েছে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ॥  ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া চালু হয়। সবশেষ শিক্ষাবর্ষে সাধারণ গুচ্ছভুক্ত ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করেছে।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ৭টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে গেছে। এরই মধ্যে জগন্নাথ, কুমিল্লা, খুলনা এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
এদিকে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যেতে প্রশাসনকে চাপ দিচ্ছেন। একই দাবিতে সেখানে শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে নেমেছেন।
তাছাড়া প্রকৌশল গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে তিনটি (চুয়েট, রুয়েট ও কুয়েট) বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। কৃষি গুচ্ছ থেকেও বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)।

×