ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ নেতা নাকি অপরাধী? লাঞ্ছনার রাজনীতিতে জয় কার?

প্রকাশিত: ২২:১০, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ নেতা নাকি অপরাধী? লাঞ্ছনার রাজনীতিতে জয় কার?

ছবি: সংগৃহীত

পূর্বশত্রুতার জেরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা এলাকায় আবদুল হাই কানু নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জুতার মালা পরিয়ে এলাকা ছাড়া করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

 

আগস্টের গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শনিবার (২১ ডিসেম্বর) নিজ এলাকা লুধিয়ারায় ফিরলে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বিক্ষুব্ধ ১০-১২ জন তাকে জুতার মালা পরিয়ে এলাকা ছাড়া করার ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়।


সোশ্যাল মিডিয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে জুতার মালা পরানোর ঘটনাটি রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

 

একজন প্রবীণ কৃষক লীগ নেতা এবং মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনা চলছে। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেশের প্রতি তার অবদান রেখেছেন, কিন্তু একইসঙ্গে তিনি একজন দলীয় নেতা এবং তার বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা মামলাসহ ৯টি মামলা। ঘটনাটি নতুন প্রশ্ন তুলেছে—তিনি লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন তার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ের জন্য, নাকি তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে?

এটি নতুন কিছু নয়। রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ের অপব্যবহার এবং ঘটনাগুলোকে নিজ নিজ পক্ষের এজেন্ডা অনুযায়ী তুলে ধরার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। লাঞ্ছনার শিকার ব্যক্তি যদি কোনো কোন দলের সমর্থক হন, তবে তার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় হয়ে যায় মূল ফোকাস। অপরদিকে, ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তার অতীত এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও সামনে চলে আসে।

 

সিরাজগঞ্জেও ঘটেছে একই রকম ঘটনা। জয় বাংলা স্লোগান দেওয়ার কারণে সাবেক পিপি এবং মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানকে লাঞ্ছিত করেছে ছাত্রজনতা। অভিযোগ, তিনি তার পদে থাকাকালীন সময়ে বিচারিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—তার এই কর্মকাণ্ডের বিচার হবে কোথায় এবং কিভাবে?

লাঞ্ছনার এই রাজনীতি কি শুধু প্রতিহিংসার জ্বালায় জ্বলে ওঠা, নাকি এটি রাজনৈতিক ও সামাজিক বিকৃতির প্রতিফলন? আইন-শৃঙ্খলা এবং বিচারিক প্রক্রিয়া যখন ব্যর্থ হয়, তখনই সাধারণ মানুষ বা দলীয় কর্মীরা এমন মবের আশ্রয় নেয়।

 

অপরাধী যেই হোক তার বিচার হতে হবে আদালতে। কিন্তু লাঞ্ছনার মাধ্যমে কারও মর্যাদা ছোট করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি শুধু ব্যক্তি নয়, সমাজের মানবিক মূল্যবোধকেও আঘাত করে। এমন পরিস্থিতিতে কার জয় হচ্ছে? লাঞ্ছিত ব্যক্তির না তার প্রতিপক্ষের? রাজনীতি এবং নৈতিকতার মানদণ্ডে হেরে যাচ্ছে পুরো জাতি।

তাবিব

×