ছবিঃ সংগৃহীত।
উপসচিব পদে জনপ্রশাসনে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্যান্য ক্যাডারের জন্য বাকি ৫০ শতাংশ কোটা রাখার বিষয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে; তার প্রতিবাদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা আজ বড় জমায়েত নিয়ে সচিবালয়ে গিয়েছিলেন।
পদোন্নতিতে কোটা কমানো হতে পারে এমন শঙ্কার জায়গা থেকে ক্ষোভ বাড়ছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য বিদ্যমান কোটা বহাল রাখার দাবিতে সংস্কার কমিশনের সদস্যসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজেদের দাবির কথা জানিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে, পাল্টা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া অন্যান্য ক্যাডারদের নিয়ে গঠিত সংগঠন 'আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ'।
উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের প্রতিবাদে রোববার সচিবালয়ে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন কর্মকর্তারা। একই সাথে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারকে আলাদা করে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস প্রতিষ্ঠার দাবিতেও সরব হয়েছেন এই কর্মকর্তারা।
এই দাবি নিয়ে রোববার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন সচিব ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যসচিব মো. মোখলেস উর রহমানের সাথে বৈঠক করেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বা বিএএসএ।
বিএএসএ সভাপতি মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেওয়া হয়। এটি একটি মীমাংসিত বিষয়। এ বিষয়ে নতুন করে ভিন্ন সুপারিশ প্রস্তাবের বিষয়টি আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যদি তাদের এই দাবি মেনে না নেয় তাহলে নতুন করে কর্মসূচি দেওয়ার কথাও ভাবছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এখানে কয়েকটা মৌলিক বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি বা দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। চূড়ান্তভাবে সুপারিশ দেওয়ার আগে আমরা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব।
তবে, প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে বাকি ২৫টি ক্যাডার ক্যাডার নিয়ে গঠিত 'আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ' পাল্টা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
জনপ্রশাসন কর্মকর্তাদের অবস্থান:
রোববার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ১১টার দিক থেকেই সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন প্রশাসন ক্যাডারের কয়েকশ’ কর্মকর্তা।
সচিবালয়ের বাইরে যারা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কর্মরত, তাদের অনেকেই যোগ দেন সচিবালয়ের এই কর্মসূচিতে। ঢাকার বাইরে থেকেও কেউ কেউ এসেছিলেন সচিবালয়ে।
ফেনীর একটি উপজেলা থেকে আসা প্রশাসন ক্যাডারের এক কর্মকর্তা বলেন, সংস্কার কমিশন এখন যে প্রস্তাব করছে তাতে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে অন্য ২৬টি ক্যাডারের কারোরই পরীক্ষা দিতে হবে না। উল্টো নিজ ক্যাডারে প্রমোশনের জন্য আমাদের পরীক্ষাও দিতে হবে আবার সেখানে কোটাও থাকবে। এটা কেমন বৈষম্য নিরসন হলো?
রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে প্রশাসন ক্যাডারের কয়েকশ কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান নেন। তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমানের সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।
প্রশাসন ক্যাডারদের ক্ষোভের কারণ:
গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যসচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান।
এসময় কমিশনের সম্ভাব্য সুপারিশের কিছু বিষয় তুলে ধরেন তারা। সেখানে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেছিলেন, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করা হবে। ডেপুটি সেক্রেটারি লেভেলে পরীক্ষা হবে, সেখানে সবাই পরীক্ষা দিতে পারবে।
একইসঙ্গে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যেখানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারের জন্য ২৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়, তা বদলে এই অনুপাত প্রশাসনের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারদের জন্য ৫০ শতাংশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
একই সভায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে না রেখে আলাদা কমিশন করার কথা জানান সংস্কার কমিশনের সদস্যসচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান। তবে সংস্কার কমিশন প্রধান ও সদস্যসচিবের এসব বক্তব্য ইতিবাচকভাবে নেননি ক্যাডারদের কোনো পক্ষই।
ইসরাত