.
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এর আগে নিজেদের ওপর হামলার প্রতিবাদে পালন করেছেন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’র মতো কঠোর কর্মসূচিও। এবার ট্রেইনি চিকিৎসকদের ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার দাবিতে রাজপথে নেমেছেন তারা। এ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রবিবার দিনভর রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বিএসএমএমইউ) সব হাসপাতালের বেসরকারি ট্রেইনি চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকদের এই কর্মবিরতির ফলে দিনভর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ। বৃহস্পতিবারের মধ্যে দাবি আদায় না হলে চলমান কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
রবিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে শাহবাগের অবরোধ ছাড়ার ঘোষণা দেন ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটির সভাপতি ডা. জাবির হোসেন। তিনি বলেন, আজকে (রবিবার) আমরা আন্দোলন চলাকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বসেছিলাম। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। তাই আমরা আগামী বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভাতা বৃদ্ধির আল্টিমেটাম দিচ্ছি এবং আজকের মতো আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করছি। তবে এই সময় আমাদের কর্মবিরতি চলবে।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আমরা পোস্ট গ্রাজুয়েট ডক্টরদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করছি। এই আন্দোলন শতভাগ যৌক্তিক। এ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা হয়েছে। নবম গ্রেড সমমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমরাও চাই বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে দাবি বাস্তবায়নের ঘোষণ আসতে হবে। যদি ঘোষণা না আসে, তা হলে চিকিৎসকদের সঙ্গে আমরাই রাজপথে নামব।
অবরোধকারীরা বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে একজন ট্রেইনি চিকিৎসককে ২৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়। এ টাকায় পরিবারের খরচ বহন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ ভাতা ৫০ হাজার টাকা করতে হবে। তারা আরও বলেন, গত তিন বছর ধরে এই আন্দোলন চলছে। এতদিন আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের দাবির বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। উল্টা জামায়াত-শিবির ট্যাগ দিয়ে আন্দোলনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছে। প্রশাসনকে দ্রুততার সঙ্গে দাবি মেনে নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এ সময় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তারা।
এদিকে চিকিৎসকদের অবরোধ কর্মসূচির কারণে দিনভর অবরুদ্ধ থাকে সায়েন্স ল্যাব, কাওরান বাজার, মৎস্য ভবনসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা।
এ সময় অতিষ্ঠ হয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পথচারীদের তর্ক-বিতর্ক ও বাগ্বিতন্ডা হতেও দেখা গেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে পথচারীরা বলছেন, আপনাদের দাবি আদায়ের জন্য আমাদের কেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিম্মি করে রাখতে হবে?
পথচারী ফাওজুল করিম বলেন, মোটরসাইকেল নিয়ে দুপুর থেকে একই জায়গায় বসে আছি। অথচ আমার একটা চাকরির ইন্টারভিউ ছিল। কোনোদিকেই আমি যেতে পারছি না। চতুর্দিকে ব্লক হয়ে আছে। এভাবে যদি আমাদের জিম্মি করে ফেলা হয়, তা হলে আমরা কোথায় যাব?
তিনি বলেন, এটা তো সরকার পতন বা রাষ্ট্রীয় কোনো বড় আন্দোলন নয়, তা হলে কেন শাহবাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা সারাদিন অবরুদ্ধ থাকবে? চিকিৎসকদের ভাতা বাড়ানোর আন্দোলন, এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। পেছনে অসংখ্য রোগী, অ্যাম্বুলেন্সের গাড়িও আটকে আছে। এভাবে চলতে পারে না।
রফিক উদ্দিন নামে এক উবার চালক বলেন, এই আন্দোলনের কারণে আজকে আমার সারাটা দিন শেষ। এখান থেকে কখন বাসায় ফিরতে পারব, সেটাও বুঝতে পারছি না। দিন শেষে আমার খালি হাতেই বাসায় ফেরা লাগবে, এখন কি পেটের দায়ে আমাদেরও আন্দোলনে নামতে হবে?
হাসপাতাল এলাকায় হওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। রাজধানীর খিলগাঁও থেকে বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা হার্টের রোগী হাসান আরিফ বলেন, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি হার্টেও কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। তাই সকাল সকাল বারডেমে আসি ডাক্তার দেখাতে। ডাক্তার তো দেখাতেই পারলাম না। জ্যামের কারণে বাড়ি কিভাবে ফিরব তাও বুঝতে পারছি না।
সাধারণ মানুষের ভোগান্তি এড়াতে আন্দোলনরত প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের শাহবাগ মোড় ছাড়ার আহ্বানও জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের ভাতা বৃদ্ধির দাবি যৌক্তিক এবং উপাচার্য হিসেবে দাবি আদায়ে সব ধরনের চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। এমনকি ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়েই রয়েছে, যা এই সপ্তাহের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন চলে আসবে বলে আশা করছি।
উপাচার্য বলেন, চিকিৎসকদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যের একটি বিষয় হলো সেবা ছেড়ে রাজপথে এসে আন্দোলন করা। আমরা চাই আর কখনই যেন চিকিৎসকদের দাবি-দাওয়া আদায়ে এভাবে রাজপথে নামতে না হয়। আমরা চাই আজকের মতো আপনারা ঘরে ফিরে যান। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শাহবাগের চতুর্দিকে যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে সাধারণ মানুষ যেমন ভোগান্তিতে পড়েছে, বিভিন্ন দিক থেকে হাসপাতালে আসা রোগীরাও দুর্ভোগে পড়েছে।