ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে মহা লুটপাট, পাইপে গ্যাসের বদলে বাতাস!

প্রকাশিত: ২২:২৫, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে মহা লুটপাট, পাইপে গ্যাসের বদলে বাতাস!

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের যা অবস্থা এ অবস্থার দায় আসলে কাকে দেয়া যাবে, কে বেশি দায়ী, কে কত বড় চোর ছিল, কে কত বড় ডাকাত ছিল এইটা এখন নির্ণয় করার সময় এবং সুযোগ এসেছে। 

ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মহালুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি পাইপে গ্যাসের বদলে বাতাস দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটতো প্রায়ই।

দায়মুক্তির আইন পাশ করে এসব বিষয়ে বিচারের পথ রুদ্ধও করে রেখেছিল তৎকালীন সরকার। ওই আইনটি এখনো বহাল রয়েছে। জানা যায়, এত বছর সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রভাবশালীরা মিলেমিশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে লুটপাট করেছে। প্রকল্পগুলোর অধিকাংশের মালিকানার সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও রাজনৈতিক নেতাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। গত সাড়ে ১৫ বছরে কোনো দরপত্র ছাড়াই বেসরকারি খাতে শতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই কাজে আসেনি। সরকারি হিসাবে উৎপাদনক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বলা হলেও লোডশেডিং থেকে মুক্তি মেলেনি দেশবাসীর। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদ্যুৎ বিভাগ এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ আমলের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে বিদ্যুৎ খাতে মোট ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার বিবেচনায় (১ ডলার সমান ১১৮ টাকা) বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এ সময় শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামেই লুটপাট হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকা। অন্যদিকে বিদ্যুৎ খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ক্রয় এবং ভূমি অধিগ্রহণ ও রক্ষণাবেক্ষণেও ভয়াবহ অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সর্বনিম্ন খরচে বিদ্যুৎ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলেও তৎকালীন সরকার সে পথে না গিয়ে চুক্তির শর্তের মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার শর্তটি বহাল রেখেছে। অতীতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কেন বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, সেসব খতিয়ে দেখা দরকার। বছরের পর বছর বিদ্যুতের বাড়তি ব্যয়ের দায় নিয়েছে ভোক্তাশ্রেণি। আর লাভবান হয়েছে কতিপয় লুটেরা। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে দাম এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যে, প্রথম তিন বা পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের বিনিয়োগ ব্যয় উঠে গেছে। পরবর্তীকালে মেয়াদ বৃদ্ধির সময়ও একই দাম অব্যাহত রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে তা কতটা যৌক্তিক, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। বস্তুত ২০১০ সাল থেকে অনুমোদন দেওয়া ছোট-বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ থাকলেও দায়মুক্তি আইনের কারণে এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দায়মুক্তির যে আইন রয়েছে, তা সংশোধন করে এ খাতের সব লুটপাটকারীকে আইনের আওতায় আনা দরকার। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কেউ যাতে পার পেতে না পারে, তাও নিশ্চিত করা দরকার।

শিহাব

×