ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

পাকিস্তান থেকে কত টাকা পায় বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ২২:০৯, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২২:১২, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

পাকিস্তান থেকে কত টাকা পায় বাংলাদেশ?

ছবি: ইন্টারনেট

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কের জটিল সমীকরণে রয়েছে বহু বছরের বকেয়া পাওনার হিসাব। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, স্বাধীনতা অর্জনের পাঁচ দশক পরও বাংলাদেশ কি পাকিস্তানের কাছ থেকে এই অর্থ আদায় করতে পারবে? পাকিস্তানিদের আগ্রাসন এবং মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার পরও বাংলাদেশের প্রাপ্য অর্থ ও সম্পদের কোনো সমাধান হয়নি। এর পেছনে দায়ী পাকিস্তানের একগুঁয়েমি ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতা।

তবে গত বৃহস্পতিবার কায়রোতে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি নতুনভাবে এসব পাওনা পাওয়ার আশা জোগাচ্ছে।

পাওনার হিসাব
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে ৪০০ কোটি ডলার দাবি করেন। ভুট্টো কৌশলে এ দাবি এড়িয়ে যান। এরপরের সরকারগুলোও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তৎকালীন পাকিস্তান আমলের মুদ্রার মান অনুযায়ী ৪০০ কোটি ডলার বর্তমান ডলারের বিনিময় হার অনুসারে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকার সমান। যদি সুদের হিসাব ধরা হয়, তাহলে তা আরও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়।

অর্থনীতিবিদদের মতে, মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাটের কারণে সরকারি ও বেসরকারি খাতে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। পাশাপাশি, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য প্রাপ্ত ২০ কোটি ডলার সহায়তাও পশ্চিম পাকিস্তানে স্থানান্তরিত হয়।

বৈষম্যের চিত্র
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের রপ্তানি আয়ের ৫৪.৭ শতাংশ অর্থ লুটপাট করে। এই সময় বাংলাদেশের কৃষক-শ্রমিকদের আয় থেকে সংগ্রহ করা অর্থে করাচি, লাহোর ও ইসলামাবাদে অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়। পাকিস্তান শাসনামলে বৈদেশিক ঋণ ও রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ পশ্চিম পাকিস্তান ভোগ করেছে, যা বৈষম্যের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।

অর্থ আদায়ের উপায়
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পাকিস্তান থেকে এই অর্থ আদায়ের জন্য সরকারকে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বিষয়টি তুলে ধরতে হবে। সঠিক হিসাব-নিকাশ করে দাবি পেশ করলে প্রক্রিয়া আরও গতিশীল হবে। এছাড়া দক্ষ কূটনৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালানো এবং প্রয়োজন হলে ভারতসহ আন্তর্জাতিক মিত্রদের সমর্থন নিয়ে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

অতীতে বৈষম্যের এই হিসাব আজও অনাদায়ী রয়ে গেছে। বর্তমান সরকার যদি কৌশলগতভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে পাওনার বিষয়টি মীমাংসা করতে উদ্যোগী হয়, তবে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও নৈতিক বিজয় হিসেবে বিবেচিত হবে। সাধারণ জনগণের দাবি, বৈষম্যের এই হিসাব এবার কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নিতে হবে।

নাহিদা

×