নাগরিক কমিটি
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং তাদের সমর্থিত যে নাগরিক কমিটি তাদের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বাড়ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে বিরোধ তৈরি হচ্ছে। আর তৃণমূল পর্যায়ে কোথাও কোথাও সংঘাতের আলামতও পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি অপসারিত সিটি ও পৌর কাউন্সিলদের সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন অংশ নিয়েছে এবং একাত্মতা প্রকাশ করে তাদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপি পরিষ্কার ভাবে বলেছে, বিগত সময়ে শেখ হাসিনার যে নির্বাচন ছিল সেই নির্বাচন কোনো নির্বাচন না, সেই ভোট কারচুপির ভোট, জালিয়াতির ভোট। পরে সেই নির্বাচনে যারা অংশ নিয়েছে তারা আসলে স্বৈরাচারের সহযোগী, তারা শেখ হাসিনার সহযোগী। সুতরাং তাদেরকে নিয়ে তাদের সহায়তা চাওয়া, তাদের পুনর্বাসন করা এক ধরনের আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়কের দেওয়া এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা আলোচনা সমালোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এই বিষয়টিকে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হিসেবে উল্লেখ করে সমালোচনায় মুখর হয়েছে।
অবশ্য জাতীয় নাগরিক কমিটি বলছে, আওয়ামী লীগের সহযোগী না হওয়া সত্ত্বেও সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কাউন্সিলরদের মধ্যে যাদের সরানো হয়েছে, তাদের অনেকেই জুলাই আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিলেন। আর নাগরিক কমিটি যা বলছে সেটা কারও পুনর্বাসন নয়, এটা একটা সাধারণ আহ্বান ছিল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে মিসকমিউনিকেশন হচ্ছে।
এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। ছাত্র গণহত্যা ও বৈষম্য বিরোধী সিটি ও পুরো কাউন্সিলরদের জনস্বার্থে পুনর্বহালের দাবিতে এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে গত বুধবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি সমাবেশ হয়। এই সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ সিটিও পুরো কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশন।
মূলত এই সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী ও মুখ্য সংগঠক সার্জিস আলমের বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। সমাবেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বক্তব্য দেন।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারি বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে যে নতুন রাজনৈতিক দল আসছে, সেই দলে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা আশা করি সেই রাজনৈতিক দলে আপনাদের এই ত্যাগ তিতিক্ষা মূল্যায়ন করব। জনতা এবং মানুষের মধ্যে প্রতিম সম্পর্ক সেখানে আমরা আপনাদের পাশে পাব আশা করি। এই কমিটমেন্ট এর মধ্যে যেতে পারলে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী দল হিসেবে আমরা উপহার দিতে পারব।
অন্যদিকে সার্জিস আলম বলেছেন, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যারা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন তারা জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে থাকুক। ফ্যাসিস্টদের সময়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাদের সহায়তা যারা করছে, আমরা যদি এমন কাউকে আপনাদের ওই লিস্টে দেখি তাহলে মনে রাখবেন, আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে আমাদের সঙ্গে ওই কমিটমেন্টের বিরুদ্ধে চলে যাবেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এ নিয়ে বিএনপি নেতা ইশাক হোসেন ফেসবুকে লিখেছেন, খুনি হাসিনার ফিল্ড কমান্ডার এবং জুলাই আগস্ট গণহত্যায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের পুনর্বহালের দাবি জানানো শহীদদের রক্তের সঙ্গে সরাসরি বেইমানি করা। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, যারা খুনিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তাঁদেরকেও এখন কাউন্সিলর পুনর্বাসন চাচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার আগে আমাকে লাশ বানিয়ে তার উপর দিয়ে যেতে হবে।
এদিকে, এই নাগরিক কমিটি এবং ছাত্র আন্দোলন তাদেরকে সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করছে, কেউ কেউ সংগঠিত করছে? নেপথ্যে তারাই কি বিএনপির বিকল্প একটি রাজনৈতিক দলকে মাঠে নামছে? নানান প্রশ্ন, ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মধ্যে।
এম হাসান