.
রাজধানীর বনানীর কে ব্লক বস্তিতে শনিবার ভোরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনার কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। আগুনে ৩৩টি ছোট ছোট টিনের ঘর পুড়ে গেছে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, শনিবার সকালে মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম দোলন বলেন, বনানী কে ব্লকের ২২ নম্বর সড়কের বস্তিতে ভোর সাড়ে ৫টায় আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট পৌঁছায় ৫টা ৪১ মিনিটে। পরে পর্যায়ক্রমে বারিধারা, তেজগাঁও ও কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের মোট ৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। সকাল ৬টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর সাড়ে ৮টায় পুরোপুরি নির্বাপণ সম্ভব হয়েছে। তবে এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তাৎক্ষণিকভাবে আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
বস্তির ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা জানান, শীতের সকালে সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। কেউ কেউ কর্মে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক সে সময় আগুন আগুন চিৎকারে ঘুম ভাঙে বস্তির বাসিন্দাদের। তখন সবাই ঘুম থেকে জেগে ওঠেন এবং বাহিরে বের হয়ে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখেন। আগুন আতঙ্কে সবাই নিরাপদ স্থানে চলে যান। অনেকে বাচ্চাদের নিয়ে এক কাপড়ে বের হয়ে যান। কেউ কেউ ঘরের জিনিসপত্র বের করতে ব্যস্ত হয়ে যান। আবার কেউ আগুন নেভাতে থাকেন। তবে বাঁশ, কাঠ আর টিনের ঘর হওয়ায় দ্রুত আগুন ধরে যায়। এতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয় বস্তিবাসীর। কিছুক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পাশের ঘরগুলোতেও যেন আগুন না ধরে তাই শুকনো ঘরগুলো পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া হয়। এতে ঘরের ভেতরের আসবাবপত্র, জামাকাপড়সহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নষ্ট হয়। তাদের ধারণা, শীতের দিনের গ্যাসের সংকট থাকায় বস্তির প্রায় সকল বসিন্দা ভোরে ঘুম থেকে উঠে রান্না করেন। আর রান্না করতে গিয়ে গ্যাসের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। বস্তির ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা লোকমান শেখ জানান, প্রায় ৮ বছর ধরে ওই বস্তিতে বসবাস করে আসছেন তিনি। ছোট্ট টিনের ঘরে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকেন। তিনি পেশায় রিক্সাচালক। যে ঘরে প্রথমে আগুন লেগেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেটি তার ঘর থেকে কয়েকটি ঘর পরই। ঘুমে থাকায় তারা কেউ টের পাননি। পরে চিৎকার শুনে তার ঘুম ভাঙে। তবুও ঘরের মালামাল কিছুই রক্ষা করতে পারেননি। আগুনে সব পুড়ে গেছে। এই শীতের দিনে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে কিভাবে কাটাবেন সেই চিন্তায় লোকমান।
ক্ষতিগ্রস্ত আরেক বসিন্দা ইয়ানুর বেগম। তিনি বস্তির আশপাশে বাসাবাড়িতে বুয়ার কাজ করেন। তাই রান্না করার জন্য ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন। এ কারণে তিনি ঘরের অনেক মালামাল রক্ষা করতে পেরেছেন। তবে তার ঘর পুড়ে গেছে। তিনি জানান, ছোট্ট ঘরের একেক রকম ভাড়া। তিনি মাসে ৩ হাজার টাকা ভাড়া দেন। সেখানে সন্তান এবং স্বামীকে নিয়ে থাকেন।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক সালেহ উদ্দিন বলেন, আগুনে ৩৩টি ছোট টিনের ঘর পুড়ে গেছে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে আগুন লাগার কারণ তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। আগুন লাগার কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতি তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে। তিনি বলেন, ছোট ঘরগুলো বাঁশ, কাঠ আর টিন দিয়ে তৈরি হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
তবে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কর্মীরা যাওয়ায় আগুন বেশি ছড়াতে পারেনি।
এর আগে বুধবার বিকেলে বনানী ও গুলশান লাগোয়া কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকান্ড ঘটে। আয়তনের দিক থেকে ঢাকার সবচেয়ে বড় এই বস্তিতে সেদিন চলতি বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। আর শুক্রবার দুপুরে উত্তরার এক রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের চেষ্টায় সোয়া ৩ ঘণ্টায় সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। সেদিনই রাত সাড়ে ৮টার দিকে বনশ্রীতে একটি আবাসিক ভবনে আগুন লাগার পর পৌনে এক ঘণ্টার চেষ্টায় তা নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস।