ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ও সচিবালয়ে জানাজা

কাল বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে হাসান আরিফের দাফন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:১২, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

কাল বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে হাসান আরিফের দাফন

.

অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফের তৃতীয় জানাজা সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় প্রিয় প্রাঙ্গণ সুপ্রিম কোর্ট থেকে অন্তর্বর্তী  সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল বিশিষ্ট আইনজীবী এএফ হাসান আরিফকে শেষ বিদায় জানাল তাঁর দীর্ঘ দিনের সহকর্মী, স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষীগণ। আইনজীবীগণ তঁাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, দেশপ্রেমী ও সৎ
হাসান আরিফকে কখনোই ভোলা সম্ভব নয়। অন্যদিকে  পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, মরহুম এএফ হাসান আরিফ ছিলেন একজন আদর্শ আইনজীবী। তিনি শুধু পেশাগত দায়িত্বে নয়, পরিবেশগত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায়ও অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আজ তাঁর একমাত্র কন্যা ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে এসে শেষবারের মতো তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর পর সোমবার মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে অনুষ্ঠিত জানাজায় তার সহকর্মী, সচিবসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী এবং গুণগ্রাহী  রেখে গেছেন। শনিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সালেহ আহমেদ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম অন্যদের মধ্যে জানাজায় অংশ নেন। জানাজা শেষে মরহুমের প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের  পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরিবেশ, বন ও জলবাযু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের  উপদেষ্টা সৈয়দা  রিজওয়ানা  হাসান এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের  উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের পক্ষে মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম খান মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে  শ্রদ্ধা জানান।
 সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্মৃতি চারণ ॥ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, মরহুম এএফ হাসান আরিফ ছিলেন একজন আদর্শ আইনজীবী। তিনি শুধু পেশাগত দায়িত্বে নয়, পরিবেশগত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায়ও অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। তার পেশাগত সততা, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরিবেশ সংরক্ষণে আইনের প্রয়োগে তার অবদান আমাদের সামনে একটি আদর্শ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শনিবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে মরহুম এএফ হাসান আরিফের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, একজন পরিবেশ আইনজীবী হিসেবে যখনই তার কাছে গিয়েছি ব্যক্তিগত মামলা রেখে তিনি বালু, পাহাড়, নদী দখলকারীদের মামলার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। শুধু আইনজীবী হিসেবে নয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবেও তিনি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সকল কাজে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহযোগিতা করেছেন। পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, মরহুম ভূমি উপদেষ্টা তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে মানবিক ও সামাজিক দায়িত্বশীলতার প্রতিফলন দেখা গেছে। পরিবেশ রক্ষায় তার অবদান সকলের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তার মৃত্যু দেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে শেষ বিদায় ॥  শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় প্রিয় প্রাঙ্গণ সুপ্রিম কোর্ট থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল বিশিষ্ট আইনজীবী এএফ হাসান আরিফকে শেষ বিদায় জানাল তাঁর দীর্ঘ দিনের সহকর্মী, স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষীগণ। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফের দ্বিতীয় জানাজা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজায় অংশ নেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীন, প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও ড. কামাল হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলামসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, আইনজীবীসহ অসংখ্য মানুষ।
হাসান আরিফকে ভোলা সম্ভব নয় ॥ সুপ্রিম কোর্টে হাসান আরিফের জানাজা শেষে আইনজীবীগণ গণমাধ্যমকে বলেন, দেশপ্রেমী ও সৎ হাসান আরিফকে কখনোই ভোলা সম্ভব নয়। তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও দীর্ঘদিনের সহকর্মীকে হারিয়ে ভারাক্রান্ত প্রবীণ আইনজীবী ও সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী ও ভালো বন্ধুকে আমরা হারিয়েছি। তাঁকে হারানোর ফলে সুপ্রিম কোর্ট বারে একটি শূন্যতা সৃষ্টি হলো। দেশের প্রতি দরদ নিয়ে কাজ করা আইনজীবীদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, হাসান আরিফকে সবাই শ্রদ্ধা করত। তিনি একটি বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন পার করেছেন। তাঁর সততা সম্পর্কে কেউ কোনো দিন প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন অতীতের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ২০০১ সালে আমাকে বেগম খালেদা জিয়া অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগের জন্য একজন ভালো আইনজীবী খুঁজে নিয়ে আসতে বলেন। আমি তখন হাসান আরিফকে নিয়ে তাঁর কাছে গিয়েছিলাম। পরবর্তীতে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচিত হন ও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এই অঙ্গনে একজন ভালো আইনজীবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর অকাল মৃত্যুতে জাতির, দেশের ও আইন অঙ্গনের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, এমন খুব কম মানুষই আছেন যিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও অন্তর্বর্তী সরকার- এই দুই সময়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি অত্যন্ত বিদগ্ধ, সৎ ও বড় মাপের মানুষ ছিলেন। বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আইন ও বিচারের ক্ষেত্রে তিনি ভূমিকা রেখেছেন।
বর্ণাঢ্য জীবন ॥ উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশসেবায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৪১ সালের ১০ জুলাই হাসান আরিফ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক এবং পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএলবি সম্পন্ন করেন। তিনি কলকাতা হাইকোর্টে ১৯৬৭ সালে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর ঢাকায় এসে বাংলাদেশ হাইকোর্টে কাজ শুরু করেন। ২০০১ থেকে ২০০৫ সালের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
হাসান আরিফ ২০০৮ সালের জানুয়ারি  থেকে ২০০৯ জানুয়ারি পর্যন্ত  ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের  উপদেষ্টা ছিলেন। এরপর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের  উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান। একই বছরের ২৭ আগস্ট তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের  উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান।

 

×