ছবি: সংগৃহীত
বিগত দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুম ও হত্যার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে। ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন গত শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া হয়। এতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের নির্যাতন, হত্যার কৌশল এবং লাশ গুমের বিভিন্ন নৃশংস পদ্ধতির বিবরণ উঠে এসেছে।
কমিশন জানিয়েছে, ১ হাজার ৬৭৬টি গুমের অভিযোগের মধ্যে ৭৫৮টি তদন্ত করা হয়েছে। এতে নির্যাতন ও হত্যার ভয়াবহ পদ্ধতি, প্রাতিষ্ঠানিক ‘সংস্কৃতি’, এবং বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বিত অপারেশনের বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়েছে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও সিটিটিসির মতো বেসামরিক বাহিনীগুলো নিয়মিত বন্দিশালায় নির্যাতন চালাত। এ সময় নির্যাতনের জন্য বিশেষভাবে তৈরি যন্ত্র ব্যবহার করা হতো। এক ঘটনায় ২০১০ সালে ধানমন্ডি থেকে এক তরুণকে তুলে নিয়ে ঠোঁট সেলাই করা হয়। আরেক ঘটনায় ২০১৮ সালে এক ব্যক্তিকে যৌনাঙ্গ ও কানে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়।
গুমের পর বেশিরভাগ ভুক্তভোগীকে হত্যা করা হতো। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাথায় গুলি করে হত্যা এবং লাশ নদীতে ফেলা হতো। বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীতে সিমেন্টের বস্তায় বেঁধে লাশ ফেলার জন্য পোস্তগোলা ও কাঞ্চন ব্রিজ ব্যবহার করা হতো।
র্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, ‘ওরিয়েন্টেশনের’ নামে তাদেরকে সেতুতে নিয়ে গিয়ে হত্যার প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। একজন সেনাসদস্যের সাক্ষ্যে উঠে এসেছে, গুমের শিকার এক ব্যক্তিকে রেললাইনে রেখে ট্রেন দিয়ে লাশ নিশ্চিহ্ন করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গুম, হত্যা ও লাশ নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়াগুলো সমন্বিতভাবে পরিচালিত হতো। এতে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে বড় পরিসরের পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুম, হত্যা ও লাশ নিশ্চিহ্ন করার পদ্ধতি এবং এতে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টি দেখে বোঝা যায়, কতটা সমন্বিতভাবে এ কাজ করা হতো। এসব ঘটনার মাত্রা ও ব্যাপকতা পুরোপুরি উদ্ঘাটন করতে হলে বড় পরিসরে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
তাবিব