এবিএম খায়রুল হক
বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট বলেছেন, ২০১১ সালে প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ যে রায় দেয় তাতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়েছিলো। তবে সংক্ষিপ্ত রায়ে দুটি মেয়াদের জন্য এই ব্যবস্থা বজায় রাখার সুপারিশ করা হয়। সম্পূর্ণ রায়ে যেটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এক্ষেত্রে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের দায় দেখছেন বর্তমান অ্যাটর্নী জেনারেল।
সম্প্রতি,জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সম্পর্কে বলেন,শেখ হাসিনার সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে বিচারপতি খায়রুল হক দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাত্তোর ইতিহাসে বিচারপতি খায়রুল হকের মতো জ্ঞানপাপী আর দ্বিতীয় কেউ নেই বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নী জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান।
অ্যাটর্নী জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান বলেন, সাত জনের মধ্যে তিন জন পরবর্তীতে পল্টি মেরেছিলেন, জ্ঞান পাপী একজন জাজ ছিলেন খায়রুল হক নামে তিনি রায় দিলেন পরবর্তী নির্বাচন কিভাবে হবে তা পার্লামেন্ট ঠিক করবে বলে। যদিও পূর্ণাঙ্গ রায়ে আপিল বেন্সের অন্য তিন জনের মতামতকে অগ্রাহ্য করা হয়।যার মূল নায়ক বিচারপতি খায়রুল হক।
তথ্য সুত্র বলছে বিচারপতি খায়রুল হক ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি এবং সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলামের মতো বিশিষ্ট আইনজ্ঞদের জোরালো আবেদন উপেক্ষা করে নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারকে 'অবৈধ' ঘোষণা করে রায় দেন।
প্রয়াত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার তার ‘নির্বাচননামা: নির্বাচন কমিশনে আমার দিনগুলো’ বইতে বিচারপতি খায়রুল হক সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করেন। সেখানে তিনি লিখেন, বাংলাদেশের অস্থিতিশীল রাজনীতির স্থপতি একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি- সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। আমি তাকে অরাজনৈতিক ব্যক্তি বললেও মূলত তিনি পর্দার অন্তরাল থেকে দলীয় রাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে দাবার চাল দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতির আসনে থেকে তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যে ঘটনাটি ঘটান, তার নাম সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত রায়। এই রায়ের ফলে ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাদ দেয়া হয়। তিনি আরও লিখেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বিচার বিভাগ। গণতান্ত্রিক দেশে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পক্ষে অনেক যৌক্তিকতা প্রদর্শন করা যেতে পারে। কিন্তু এই ব্যবস্থার স্থলাভিষিক্ত করার জন্য যে নতুন আইনি কাঠামোর প্রয়োজন ছিল, বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ে তা অনুপস্থিত।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর সৈরাচার হাসিনা সরকারের তদবিরের আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বিচারপতি খায়রুল হককে। মাঝে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলে তার পদোন্নতি কিছুটা থেমে থাকলেও ২০০৮ সালে পুনরায় হাসিনা সরকার তাকে সুযোগ সুবিধা দিতে থাকেন তারই ফলাফল স্বরূপ অবসরের মাত্র এক সপ্তাহ আগে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আপিল বেন্সের তিন বিচারপতি না চাইলেও জোরপূর্বক তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
ইসরাত