ছবিঃ সংগৃহীত।
জগৎ বিখ্যাত ব্রিটিস সংবাদ সাপ্তাহিক 'দ্য ইকোনমিস্ট' ২০২৪-এর সেরা দেশ হিসাবে বেছে নিয়েছে বাংলাদেশকে। বলাইবাহুল্য, অর্থনৈতিক প্রগতি বা উন্নয়নে সাফল্যের কারণে এই শিরোপা নয়। তারা বাংলাদেশকে সেরার শিরোপা দিয়েছে গণ অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটানোয়।
বৃহস্পতিবার দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে ধনী, সুখী বা নৈতিকভাবে শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকারী কি না, সেই হিসাবে নয়, সেরা দেশ বেছে নেওয়া হয় আগের ১২ মাসে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে কি না, সেই বিচারে।
প্রতি বছরের ডিসেম্বরে দ্য ইকোনমিস্ট ‘কান্ট্রি অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে একটি দেশের নাম ঘোষণা করে। সেক্ষেত্রে দেশটিকে ওই বছর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ছাপ রাখতে হয়। সেই ফল অনুযায়ী ২০২৪ সালের বর্ষসেরা দেশ বাংলাদেশ।
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে বর্ষসেরা দেশ হিসেবে নির্বাচিত করার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান। শেখ হাসিনা তার শাসনামলে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ, গুম ও নির্যাতন চালিয়েছে। তাঁর ১৫ বছরের শাসনকালে দেশটির ১৭ কোটি মানুষ ভোটাধিকার হারিয়েছেন বলে অভিযোগ। এছাড়া, দুর্নীতি ছিল মাত্রাছাড়া। তাই জনরোষের মুখে হাসিনা সরকারের পতন হয়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ক্ষমতার পরিবর্তনের সময় প্রায়ই প্রতিশোধমূলক সহিংসতা দেখা যায়। তবে বর্তমান পরিবর্তন আশাবাদী। বর্তমান সরকার সকলের সমর্থন পেয়েছে। এই সরকার শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেছে।
আগামী দিনের দিকে লক্ষ্য রেখে প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন এবং ২০২৫ সালের নির্বাচনের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৫ সালে এই সরকারকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করতে হবে এবং কবে নাগাদ নির্বাচন আয়োজন করা হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। এর আগে নিশ্চিত করতে হবে যে, দেশটির আদালত নিরপেক্ষভাবে চলছে এবং বিরোধী দলগুলোকে সংগঠিত হওয়ার সময় দেওয়া হয়েছে। এর কোনোটিই সহজ হবে না। তবে, একজন স্বৈরশাসককে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং আরও উদার সরকার গঠনের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য আমাদের এ বছরের সেরা দেশ বাংলাদেশ।
এবারের সেরা দেশ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত তালিকায় ছিল পাঁচটি দেশ। বাংলাদেশ ছাড়াও সিরিয়া, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পোল্যান্ড রয়েছে এই তালিকায়। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকেই বেছে নেওয়া হয়।
সম্প্রতি বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা সিরিয়া এ বছরের রানারআপ নির্বাচিত হয়েছে।এ ছাড়া, অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য আর্জেন্টিনা, খারাপ সরকারের বিপক্ষে গিয়ে নতুন সরকার গঠনের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা ও পোল্যান্ড এই চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পায়।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের বিজয়ী ছিল গ্রিস। দেশটি দীর্ঘ আর্থিক সংকট থেকে নিজেদের টেনে তোলায় এবং একটি সংযত মধ্যপন্থী সরকার পুনর্নির্বাচিত করায় সেরা দেশ নির্বাচিত হয়।
ইসরাত