ছবি: সংগৃহীত
হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণ থেকে ব্যবস্থাপনা, সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি-অনিয়ম চলমান। দেশের সবচেয়ে বড় ফ্লাইওভারটি ঘিরে দুর্নীতির মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন গ্রুপের ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার।
রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার (গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার) নির্মাণে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ফ্লাইওভার নির্মাণ কিংবা বিনিয়োগের সঙ্গে ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকা সত্বেও পাঁচ অর্থবছরে এই বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগে বলা আছে।
ওরিয়ন গ্রুপের মালিক ওবায়দুল করিম রাজনৈতিক দাপট দেখিয়ে দেশছাড়া করেছে প্রধান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেলহাসাকেও। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী কাজ পায় দুবাই ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বেলহাসা ও একম। চুক্তি অনুযায়ী একমের ৮০ শতাংশ শেয়ারের মালিক বেলহাসা হলেও ওবায়দুল করিম প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে করে নেন। ভুয়া চুক্তির মাধ্যমে কোম্পানির রেজিস্ট্রেশনও করেন তিনি। পরে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে হয় 'ওরিয়ন'।
ওরিয়ন গ্রুপের মালিক ওবায়দুল করিম ওই প্রকল্প দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় ৪টি ব্যাংকসহ মোট ৬টি ব্যাংক থেকে ঋণ ও বিনিয়োগ হিসেবে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা নিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এখন চরম লোকসানের মুখে পড়েছে। গত ১৪ বছরে শুধু নির্মাণকাজ বা ব্যাংকঋণ নয়, রাষ্ট্রের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে ফ্লাইওভারের টোল আদায়েও। ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রতিবছর টোল থেকে ৩৫০ কোটি টাকা আদায় করলেও কাগজে-কলমে দেখানো হয়েছে মাত্র ১৭৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রতিবছর হানিফ ফ্লাইওভার থেকে ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে রাষ্ট্র। একইভাবে অর্থ লোপাট হচ্ছে এখনো। অর্থাৎ ওরিয়নের আগ্রাসনে সব লোকসান রাষ্ট্রের। তেমনিভাবে সীমাহীন অপকর্মের মাধ্যমে সব লাভ শুধুই ওরিয়নের। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তদন্ত প্রতিবেদন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ওরিয়ন গ্রুপের মালিক ওবায়দুল করিম ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের অনুকূলে অগ্রণী ব্যাংক থেকে মোট ৫০০ কোটি টাকা নিয়েছেন। এর মধ্যে ২০০ কোটি টাকা ঋণ এবং বাকি টাকা বিনিয়োগ হিসেবে দিয়েছে ব্যাংকটি। এই বিনিয়োগ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। তবে ব্যাংকটি ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ঋণকে শ্রেণিবদ্ধ করেনি। অবশ্য পরবর্তী সময়ে এটিকে মন্দ ঋণ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছিল।
ওরিয়ন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল থেকে প্রতিবছর অন্তত ৩৫০ কোটি টাকা আদায় করলেও কাগজে-কলমে তা দেখানো হয় ১০৫ থেকে ১৭৬ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং কিছু ব্যক্তিগত গাড়ির টোল আদায় করেও তার হিসাব দেওয়া হয়নি। এই হিসাব সিটি করপোরেশন ব্যাংক ও বিনিয়োগকারীদের কাছে সব সময় আড়াল করা হচ্ছে বলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
নাহিদা