ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫ পৌষ ১৪৩১

সাদ অনুসারীদের সংবাদ সম্মেলন

মামুনুল হকদের নৃশংস হামলা, অপপ্রচার ও তাবলীগ নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই

প্রকাশিত: ১৯:০৯, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৯:১০, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

মামুনুল হকদের নৃশংস হামলা, অপপ্রচার ও তাবলীগ নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই

গত ১৭ ডিসেম্বর জোড়ের কাজ করার জন্য আসার পথে টঙ্গীতে জুবায়েরপন্থীদের হামলার শিকার হয় সাদপন্থী তাবলীগের সাথীরা। রাত আনুমানিক দুইটার দিকে টঙ্গী কামারপারায় ইজতেমা ময়দানের পাশে গাড়ি বহরে হামলা করলে বগুড়ার বেলাল আহমদসহ (৬৫) একজন সাথী নিহত হন। আমাদের সাথীদের উপর নৃশংস হামলা হওয়ার পরেও হেফাজত নেতা মামুনুল হক এর নেতৃত্ব এক চাটিয়েভাবে তাবলীগের একপক্ষের পুরো নেতৃত্ব রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মিথ্যাচার, অপপ্রচার,  হুমকী ধমকী দিয়ে দেশকে অস্তিতিশীল ও গৃহবিবাদ এবং সম্প্রাদায়িক ভয়াবহ সংঘাতের দিকে টেলে দিচ্ছেন। এর আগে বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে গত ১৪ ডিসেম্বর মামুনুল হক সমাবেশ করে তুরাগ নদী রক্তে লাল করার ঘোষনা দেন। এর আগে বিনা ইস্যুতে ৫নভেম্বর সরওয়ার্দী উদ্যানে চিহ্নিত জন বিচ্ছিন্ন  রাজনৈতিক দলের নেতারা কওমী মাদরাসার পরীক্ষা বন্ধ করে হঠাৎ করে সারাদেশের মাদরাসার ছাত্রদের এনে মহাসমাবেশ করে সম্পূর্ণ ফ্যাসিবাদী কায়দায় গায়ের জোড়ে এক পক্ষের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, কাকরাইল মসজিদ ও বিশ্ব ইজতেমার ময়দান দখল করার ঘোষনা দেন। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলছি, দেশকে হঠাৎ করে অস্থতিতশীল করে তুলতে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে এই ভয়াবহ  সংঘাতময় পরিস্থিতি কারা তেরি করছে এটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে জাতীর সামনে পেশ করা হোক। পাশাপাশি গনমাধ্যমের সাংবাদিক ভাইদেরকেও সবিনয় অনুরোধ করবো আপনারা তদন্ত ও বিশ্লেষণ করে সঠিক তথ্য জাতীর সামনে পেশ করার জন্য। কেউ মিডিয়ার সামনে এসে মিথ্যা গুজব ও অপপ্রচার আর হুংকার দিলেই তাদের কথা প্রচার করলে দেশের ধর্মীয় পরিবেশ আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। আপনারা জানেন আমরা সব সময় শান্তি ও অহিংস পথচলায় বিশ্বাসী।  পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য এবং তারা যেভাবে কয়েকদিন পূর্বে টঙ্গীর ময়দয়নে পাঁচ দিনের জোড় করেছিলপন, সেভাবে যেন কোন প্রকার বাধা ছাড়া আমরা জোর করতে পারি এবং সংঘাত এড়ানোর জন্য ২৫টির বেশি আবেদন আমরা সরকারী বিভিন্ন দপ্তর ও সেনাবাহিনী সহ বিভিন্ন সংস্থা ও বাহিনীকে প্রেরন করেছি। আপনারা জানেন, আমরা বারবার বসে আলেচনা করে সমস্যা সমাধানের যারপরনাই আন্তরিক চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়েছি। আমরা এখনো মনে করি সারাদেশে কওমী মাদরাসার ছাত্রদের উস্কে দিয়ে আমাদের সাথীদের উপর যে জুলুম নির্যাতন শুরু হয়েছে, এটি বসে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান করার কোন বিকল্প নেই। নয়তো নির্যাতিত হতে হতে দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যেতে পারে। আমরা আর কোন সংঘাত ও বৈষম্য চাই না। এর আগেও ঐক্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরির জন্য জুবায়েরপন্থীদেরকেও একাধিক চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু অত্যান্ত দু:খজনক বিষয় হলো সরকার তাদের দখল থেকে মাটকে খালি করতে পারে নি। আমরা সরকারী সিদ্ধান্ত মেনে গতকাল ময়দান খালি করলেও, আজকে সরকার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে না রেখে তাদেরকেই আবার বুঝিয়ে দিয়েছে। 

গত ১৬ তারিখ রাতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর দুই নেতা  সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য চেষ্টা করেন। যখন আমাদের দীর্ঘদিন এর দাবী অনুযায়ী বিষয়টি মিমাংসার দিকে যাচ্ছিল তখনি এই বিষয়টিকে সংঘাতের দিকে উস্কে দিয়ে পরিবেশকে উত্তাপ করে চিহ্নিত তৃতীয়পক্ষ সেরাতে সংঘাত তৈরি করেছে আমাদপরকে কোনটাসা করার জন্য। তাবলীগে মামুনুল হকদের মতো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ও সংঘাত তৈরির ষড়যন্ত্র বন্ধ না করলপ আমরা দেশের ধর্মীয় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করি। গত তিনদিন ধরেই মামুনুল হকের প্রকাশ্যে উস্কানীমূলক বক্তব্যের পর থেকে সারাদেশে আমাদের সাথীরা নির্যাতনে শিকার হচ্ছেন।গতকাল রাতেও আমাদের মুরুব্বি মুফতী মুআজ বিন নূর এর নিকুঞ্জ মাদরাসায় ছাত্র শিক্ষকদের অর্তকিত হামলা চালিয়ে মাদরাসা ভাঙ্গচুর করেছে হেফাজত ও জুবায়েরপন্থীরা। ঢাকায় আমাদের অনেকগুলো মাদরাসা ও প্রতিষ্ঠান চরম ঝুকি ও তাদের হামলার আশংকায় আছে। আমরা সরকারের কাছে সবার নিরাপত্তা কামনা করছি। এভাবে একটি পক্ষের প্রকাশ্যে উস্কানী ও অরাজকতার ভিতর দিয়ে দেশ চলতে পারে না।

সেদিন রাতে আমরা জোরে প্রস্ততি নিতে এলে তারা যখন আমাদের উপর হামলা করে এর পর খবর পেয়ে ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে সাদপন্থী লক্ষাধিক সাথী টঙ্গী ময়দানের নিয়ন্ত্রণ নেয় জুবায়েরপন্থীদের হামলায় একাধিক সাথী নিহত হওয়ার আশংকা করছি। আমাদেরকে গতকাল কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ও যেতে দেয়া হয় নি। আমাদের লাশগুলো চিহ্নিত করা যায় নি। ঢাকা মেডিকেল থেকে একাধিক আহত ও নিহতের স্বজনকে কিডনাফ করা হয়, যার ভিডিও ফুটেজ গনমাধ্যমে এসেছে। হাসপাতালে আহতদের উপর হামলা করা হয়।  মারাত্মক আহত হয়ে বিভিন্ন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে শতাধিক।  আমরা গতকাল মামুনুল হকের বিভিন্ন বক্তব্য লক্ষ্য করছি, যা ছিল চরম মিথ্যাচার ও উস্কানীমূলক।  আমরা তাদের এই উগ্রতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।  ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। কারা হুমকী ধমকী ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে একপক্ষের সকল কাজ বন্ধ করে, দেশে ধর্মীয় সংঘাত তৈরি করতে চাচ্ছে, তাদের চিহ্নত করে বিচারের আওতায় আনাহোক। হতয়াকান্ডের সাথে সরাসরি যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হোক। কিন্তু কোন পক্ষের চাপে সরকার নতুজানু হয়ে কোন পক্ষের কেউ বিষয়টি মিমাংসার জন্য মিডিয়ার সামনে আলেচনায় থাকা কাউকে যেন কেন প্রকার  হয়রানী যেন না করা হয়। 
আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে আমাদের দাবী হলো:

১. আগামি বিশ্ব ইজতেমায় সাদপন্থীদের প্রধান মুরুব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভীর আসা নিচিত করতে হবে।
২. আগামি সাপ্তাহ থেকে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী  কাকরাইল মসজিদ আমাদেরকে স্বাভাবিক নিয়মে কার্যক্রম পরিচলনা যেন করতে দেয়া হয়। কোম অস্তিতিশীল পরিবেশ যেন তৈরি করা না হয়।

৩.টঙ্গীর ময়দান সরকারে হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের ইজতেমার আগে আমাদের ইজতেমা করার জন্য বুজিয়ে দিতে হবে।

৪. আগামি বিশ্ব ইজতেমা সুন্দর ও সুষ্ঠ পরিবেশে করার জন্য পরিবেশ তৈরি করে দেয়ার জোড় দাবী জানাচ্ছি। 

৫.সারাদেশে আমাদের উপর আক্রমন নির্যাতন, মসজিদে মসজিদে বাধা দপয়াআইন করে বন্ধ করা হোক। সবার ধর্মীয় ও সংবিধানিক মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হোক। এবিষয় সরকার, মানবাধিকার সংগঠন, জাতিসংঘসহ সকলের সহযোগিতা আমরা কামনা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, তাবলীগের মুরুব্বি মাওলানা জিয়া বিন কাসেম, মুফতী মুআজ বিন নূর, মুফতী শফিউল্লাহ, মুফতী আজিমুদ্দীন, মাওলানা আনাস প্রমূখ।

লাবু/ রাজু

×