ছবি: সংগৃহীত
১৯৭১ সালের আগে অখণ্ড পাকিস্তানের সম্পদের বড় একটি অংশ (প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার) ছিল পূর্ব পাকিস্তানের। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর হিসাব করলে সুদসহ সেই সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৯৪.৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১ লাখ ৩২ হাজার ৩৬ কোটি টাকারও বেশি।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে এই পাওনা নিয়ে আওয়াজ উঠলেও কোনো সমাধান হয়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নতুন কূটনৈতিক সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে আবারও এই দাবি উত্থাপন করা উচিত। দাবি আদায়ে ব্যর্থ হলে আন্তর্জাতিক ফোরামে আইনি লড়াইয়ের কথা ভাবা যেতে পারে।
১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভূট্টোর বাংলাদেশ সফরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কাছে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার পাওনা দাবি করেন। কিন্তু ভূট্টো সেই দাবি কৌশলে এড়িয়ে যান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অখণ্ড পাকিস্তানে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪.৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সুদসহ সেটি এখন দাঁড়িয়েছে ৯৪.৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই হিসাব করা হয়েছে বার্ষিক ৬ শতাংশ সুদের ভিত্তিতে।
আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, উত্তরসূরি রাষ্ট্র হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদের আইনি অংশীদার বাংলাদেশ। পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পূর্বাঞ্চলের অবদান এবং সমতার ভিত্তিতে সম্পদের ৫০-৫৬ শতাংশ পাওনার ন্যায্য অধিকার রয়েছে বাংলাদেশের।
এ ছাড়া ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় গোর্কির সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রায় ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু ও শত কোটি টাকার ক্ষতির পরও কেন্দ্রীয় সরকার কোনো সহায়তা দেয়নি। বরং, আন্তর্জাতিক সাহায্য হিসেবে আসা ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আত্মসাতের উদ্দেশ্যে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের লাহোর শাখায় স্থানান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রাসহ সম্পদের এই ন্যায্য হিস্যা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন আলোচনার মাধ্যমে এই পাওনা আদায়ের উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায়, আন্তর্জাতিক ফোরামে এই বিষয়ে শক্ত আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
মেহেদী কাউসার