ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ পৌষ ১৪৩১

প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় জড়িতরা ছাড় পাবে না

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় জড়িতরা ছাড় পাবে না

.

টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে তবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংকট নিরসনে তবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের মধ্যে আলোচনা চলছে। তারা একটা সমাধানে আসার চেষ্টা করছেন। তাদের আলোচনার পর আমরা একটা সিদ্ধান্তে আসব বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
টঙ্গীতে তবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনায় সাদপন্থিদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বিবদমান গ্রুপগুলো আলোচনার মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত নিক। এ সময় ইজতেমা মাঠ এলাকায় সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় জড়িতরা ছাড় পাবে না বলেও জানান তিনি। বুধবার জোবায়েরপন্থিদের সঙ্গে এক বৈঠকশেষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সাদপন্থিরা ইজতেমা করতে পারবে কি না সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তাদের (তবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের) ভেতরে কিন্তু একটা আলোচনা চলছে। তারা যদি আলোচনা করে একটা সমাধানে আসতে পারেন। সরকারের অবস্থান কী জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ভাই উনারা আলোচনা করছেন, আলোচনার পর আমরা একটা সিদ্ধান্তে আসব।  
ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষে তিনজন নিহতের ঘটনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যারা হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। এদের তো ছাড় দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। খুনিদের তো কোনো অবস্থায়ই ছাড় দেওয়ার কোনো অবকাশ নাই। তিনি বলেন, জোবায়েরপন্থিরা মামলা করবে। মামলার সঙ্গে সঙ্গে যারা প্রকৃত দোষী তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।  
এর আগে সচিবালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন মাওলানা মামুনুল হকসহ জুবায়েরপন্থি কয়েকজন আলেম। বৈঠকে ভূমি উপদেষ্টা, তথ্য উপদেষ্টাসহ সাত উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সাদপন্থিদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ এবং তাদেরকে ইজতেমা করার অনুমতি না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন  জোবায়েরপন্থিরা।
বৈঠক শেষে মামুনুল হক বলেন, সাদপন্থিরা ঘুমন্ত মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে চারজনকে শহীদ করেছে, অসংখ্য মানুষকে আহত করেছে। এটা কোনো সংঘর্ষ ছিল না, এটা ছিল একপক্ষীয় হামলা। এই হামলায় কারা কারা জড়িত, আমাদের সর্বপ্রথম দাবি এসব হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সব ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে হবে। আজকের মধ্যেই যেন সেই গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে আমরা তা দেখতে চাই।
তিনি বলেন, আমাদের জোরালো একটা দাবি-এই সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে সাদপন্থিরা যে বার্তা বাংলাদেশকে দিয়েছে সেটা হলো, আজকে যারা বাংলাদেশবিরোধী শক্তি আমাদের কাছে এটাই স্পষ্ট, তারা (সাদপন্থিরা) সেই শক্তির দোসর হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। কাজেই আমাদের স্পষ্ট দাবি, এই সাদপন্থিদেরকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করে তাদেরকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছি। আশা করি, সে বিষয়ে যত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা সরকার গ্রহণ করবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মামুনুল হক বলেন, সাদপন্থিদের ইজতেমা হওয়ার এখন আর কোনো অবকাশ নাই। মঙ্গলবারের ঘটনার পরে তাদের এখানে ইজতেমা তো দূরের কথা বরং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমি আশা করছি। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করব, আশা করছি সরকার এই ধরনের ভুল করবে না।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, টঙ্গীতে যা ঘটেছে তা কোনো সংঘর্ষ ছিল না, এটি একপক্ষীয় হামলা। ঘুমন্ত মানুষের ওপর সাদপন্থিরা হামলা চালিয়ে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। এ জঘন্য কর্মকান্ড জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, সাদপন্থিরা জোরপূর্বক সন্ত্রাসী কায়দায় ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করে। তাদের এ হামলার ফলে  জোবায়েরপন্থিদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তবে জোবায়েরপন্থিরা প্রশাসনের নির্দেশ মেনে যথাসময়ে ইজতেমা আয়োজনের জন্য সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। সাদপন্থিরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। যার যা দাবি ছিল, তা আলোচনা করে সমাধানের কথা থাকলেও তারা সব সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ঘুমন্ত মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে। এই শত্রুকে প্রতিহত করতে হবে। মামলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

×