দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দান ছাড়ার নির্দেশে বুধবার তা ফাঁকা হতে থাকে
মাওলানা সাদ কান্ধলভি ও মাওলানা জোবায়ের পন্থিদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। এ ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত ও বহু মুসল্লি আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্ধু গ্রামের বাচ্চু মিয়া (৭০), ঢাকার দক্ষিণখানের বেরাইদ এলাকার বেলাল (৬০) ও বগুড়া জেলার তাইজুল ইসলাম (৬৫)। তবে নিহত আরও একজনের পরিচয় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।
মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে সাদপন্থিরা তুরাগ নদীর পশ্চিম তীর থেকে কামারপাড়া ব্রিজসহ বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে থাকেন। এ সময় ময়দানের ভেতর থেকে জোবায়েরপন্থিরা তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। জবাবে সাদপন্থিরাও পাল্টা হামলা চালায়। একপর্যায়ে সাদপন্থিরা ময়দানে প্রবেশ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। মাঠ ও আশপাশের তিন কিলোমিটারের মধ্যে সভা-সমাবেশের ওপর পুলিশের নিষেধাজ্ঞা জারির পর বুধবার সকাল থেকে ময়দান ছাড়তে শুরু করেন মুসল্লিরা। বুধবার গাজীপুরের (জিএমপি) পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকার কথা বলা হয়। এর পর থেকেই আগতরা মাঠ ছাড়া শুরু করেন। গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠ ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। ময়দান ও আশপাশে কোনো জমায়েত করা যাবে না। কোনো ধরনের মাইক ব্যবহারও করা যাবে না।
মাঠ ছাড়া প্রসঙ্গে সাদপন্থি মুয়াজ বিন নূর বলেন, সরকারের সঙ্গে আমাদের মুরুব্বিদের আলোচনার পর মাঠ ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর থেকে মুসল্লিরা চলে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার আসার পথে বিভিন্ন স্থানে মুসল্লিরা বাধার সম্মুখীন হন। এজন্য বুধবার ফেরার পথে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। এই সংঘর্ষের পর ইজতেমা ময়দান ও এর আশপাশের এলাকায় সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ইজতেমা ময়দানের প্রবেশপথ টঙ্গী মুন্নু টেক্সটাইল মিল গেট ও কামারপাড়া মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সদস্যের উপস্থিতি দেখা যায়। এ ছাড়া টঙ্গীর স্টেশন রোড, বাটা গেট এলাকাতেও রয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, তবলিগ জামাতের দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় টঙ্গীতে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে ইজতেমা মাঠে হামলা ও সংঘর্ষ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, হত্যাকা-ের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। তিনি বলেন, জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তবলিগ জামাতের দুই পক্ষ জোবায়ের ও সাদপন্থিদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জোবায়ের ও সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-টঙ্গী বিভাগ) এন এম নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত হয়েছি। অবশ্য বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মো. মামুনুল হক উল্লেখ করেছেন, নিহত হয়েছেন চারজন। তিনি বলেছেন, এটা সংঘর্ষে নিহত হওয়ার ঘটনা নয়। সাদপন্থিরা হামলা করে চারজনকে হত্যা করেছে।
পরবর্তীতে সাদপন্থিরা বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারা দুই পক্ষ যদি আলোচনা করে সমাধান করতে পারে, তাহলে সাদপন্থিরা ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন। ইজতেমার তারিখ সরকার বাতিল করেনি। তারাই আলোচনা করুক। ওদিকে হামলার ঘটনার প্রতিবাদ ও হতাহতের ঘটনার বিচার দাবি ও ইজতেমা ময়দানের দখল জোবায়ের পন্থিদের বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে। জেলার মুলাইদের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি ইস্কান্দার হাবিব জানান, ইজতেমা ময়দান এলাকায় দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি।