উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বুধবার ডেইলি স্টার কার্যালয়ের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে গণস্বাক্ষরতা অভিযান এবং অক্সফাম ইন বাংলাদেশ এর আয়োজনে নারী গৃহকর্মীদের সুরক্ষা ও জীবনমান উন্নয়ন : আমাদের করণীয়, গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
গোলটেবিল বৈঠকে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, শ্রম সংস্কার কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও বিলসের চেয়ারপারসন সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমদ, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরিন পারভিন হক বক্তৃতা করেন।
গৃহকর্মীদের সুরক্ষা ও জীবনমান উন্নয়ন: আমাদের করণীয় বিষয়ে আলোচকদের মধ্যে অক্সফাম ইন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাহমুদা সুলতানা, গণস্বাক্ষরতা অভিযান চেয়ারপারসন ও আরডিআরএস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক তপন কুমার কর্মকার, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডাক্তার ফৌজিয়া মুসলিম ইন ফরমাল সেক্টর ইন্ডাস্ট্রি মিসকলস কাউন্সিলের চেয়ারপারসন মির্জা নুরুল গনি শোভন, এনএসডিসি সাবেক সিইও বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শ মোঃ খোরশেদ আলম গোলটেবিল বৈঠকে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। আলোচকদের মধ্যে কল্যাণপুর পোড়া বস্তি থেকে আগত গৃহকর্মী চম্পা বেগম, লিপি বেগম, গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী আবুল হোসাইন তাদের পেশাগত কর্মের উপর যে অভিঘাত তা বর্ণনা করেন।
বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সমাজ কল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, গৃহকর্মীদের প্রতি আমাদের যে অবহেলা, বিবর্জিত নিষ্ঠুরতার অবমাননাকর আচরণের সংস্কৃতি দূর করতে হবে। তিনি বলেন, মানুষ হিসেবে আমরা কেন তাদের প্রতি নির্যাতন, নিষ্ঠুরতার আচরণ হবে, এটা তো একটি মানবতারবিরোধী বোধ বিবর্জিত একটি নিষ্ঠুর আচরণ। এ আচরণের ফলে মানুষ হিসেবে আমাদের সম্পর্কে কি ধারণা পায় তাদের মনে, যে মানুষটি বাড়িতে কাজ করছে, আমাদেরকে সাহায্য করছে, সার্ফ করছে সে মানুষটিকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। তার স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, ধর্মীয় আচরণ, ছুটি দেওয়া ইত্যাদি দায়িত্ব আমাদের মানবতাবোধের মধ্যে আনতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সরকার গত দুই দশকে মেয়েদের ও মহিলাদের উন্নয়নে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এতে করে নারী গৃহকর্মীরা খুব কমই উপকৃত হয়েছেন। বিবিএস জরিপ ২০২২ অনুসারে, বাংলাদেশে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন মানুষ গৃহকর্মী হিসেবে নিযুক্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ মেয়ে ও মহিলা, যারা নদী ভাঙ্গন, তীব্র দারিদ্র্য ইত্যাদির কারণে গ্রামীণ এলাকা থেকে শহরে উন্নত জীবিকার সন্ধানে চলে এসেছে কিন্তু অভাব প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও দক্ষতার কারণে তারা ভালো চাকরিতে নিযুক্ত হতে পারে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গৃহকর্মীদের একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো শ্রম আইন দ্বারা প্রদত্ত আইনি সুরক্ষা থেকে তাদের বাদ পড়া।
ফলস্বরূপ, তারা ভালো কাজ খোঁজার ক্ষেত্রে বাধা সম্মুখীন হয়, নিয়মিত শোষণ ও অপব্যবহারের ঝুঁকিতে থাকে, ন্যায্য এবং স্বাস্থ্যকর কাজের শর্তের অভাব হয়, সামাজিক সুরক্ষায় তাদের প্রবেশগম্যতা কম। যদিও বাংলাদেশ সরকার গৃহকর্মীদের উন্নয়নের জন্য গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫ প্রণয়ন করেছে কিন্তু সরকার এখনও নীতি বাস্তবায়নের জন্য আইনি কাঠামোর প্রচলন করেনি।
প্রস্তাবগুলো সুনির্দিষ্ট আকারে সরকারের কাছে পেশ করার জন্য গোলটেবিল বৈঠকে তিনি তাগিদ দেন।
রিয়াদ