ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
দু’বছরের কাজ চার বছরেও শেষ হয়নি। আরও কত বছর লাগে, সেটাও বলতে পারছে না সিভিল এভিয়েশন। এমন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে- দেশের অন্যতম সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের প্রকল্পে। বেঁধে দেওয়া সময়ে কেন সম্পন্ন হয়নি প্রকল্পটির কাজ, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জনকণ্ঠের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এক প্রকল্প পরিচালকের অদক্ষতা, গাফিলতি ও অনৈতিক কর্মকা-, ভুল নক্সা তৈরি, এক নারী ঠিকাদারের রহস্যময় কর্মকা- আর নক্সার ভুল সংশোধন করার অজুহাতে ৭শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টার দরুন প্রকল্পের সব কাজ থমকে যায়। সর্বশেষ জানা গেছে, প্রকল্পটির সংশোধিত নক্সায় ব্যয় বরাদ্দের একটা প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটা চলতি সপ্তাহেই অনুমোদন হয়ে গেলে, আগামী দু’মাসের মধ্যে কাজ পুনরায় শুরু করা সম্ভব।
তখন বাকি কাজ শেষ করতে অন্তত আরও দু বছর লাগবে। অর্থাৎ শুধু অদক্ষ অপেশাদার প্রকল্প পরিচালকের অনৈতিক কর্মকা-ের দরুন দু বছরের কাজে ৬ বছর লাগছে। এতে ব্যয় ও সময় দুটোই বাড়ছে। বেবিচক জানিয়েছে, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের নকশা তৈরির কাজ সম্পাদিত করে দুই কোরিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইয়োশিন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন ও হীরীম আর্কিটেক্টস অ্যান্ড প্ল্যানার্স কোং। ২০১৭ সালে বেবিচক-এর সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের পর ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি ডিজাইন কাজ শুরু করে।
ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের ডিজাইন রিপোর্ট, দরপত্র দলিল ও ড্রয়িং দাখিল করে। বেবিচক কর্তৃপক্ষ এটা যাচাই বাছাইয়ের পর ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত অনুমোদন এবং দুদিন পর দরপত্র ডাকা হয়। ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল ঠিকাদারের সঙ্গে কাজের চুক্তির পর ২৭ অক্টোবর কাজ শুরু করা হয়- ২ হাজার ১১৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি।
প্রকল্পের আওতায় এখানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ফুয়েলিং সিস্টেম স্থাপন করার কথা রয়েছে। এ ছাড়াও পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিকমানের টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পৃথক সাবস্টেশন স্থাপন, নিরাপত্তার জন্য ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম, যাত্রীদের জন্য এস্কেলেটরসহ আরও কিছু কাজ রয়েছে।
প্রকল্প অনুমোদনের পর কাজের দরপত্র ও পুনঃদরপত্র প্রক্রিয়াকরণ, মূল্যায়ন, চুক্তি সম্পাদন মোবিলাইজেশন অ্যাডভান্স পরিশোধ ও সাইট হস্তান্তর করতেই কাজের মূল সময়ের ২০ মাস লেগে যায়। তবে কাজের রিভিউ করার সময় ধরা পড়ে (উচ্চতা কমবেশি) নকশার ত্রুটি। এ নিয়ে দেখা দেয় হুলস্থূল। এ সময় প্রকল্প পরিচালক ভুল সংশোধন করার অজুহাতে ৭শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য বেবিচককে চাপ সৃষ্টি করেন। শেষ পর্যন্ত পরামর্শক কোম্পানি নিজ ব্যয়েই সেটা সংশোধন করে দেয়।
একদিকে নক্সার ভুল, অন্যদিকে নানা ব্যর্থতায় ও কেলেঙ্কারির মুখেও প্রকল্প পরিচালক জুলফিকার হায়দার ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহাল তবিয়তে থাকায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ অবস্থায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ প্রকল্প নিয়ে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। শেষ পর্যন্ত তাকে সরিয়ে দিয়ে বেবিচকের নিজস্ব প্রকৌশল মহিদুর রহমান মাওদুদকে প্রকল্প পরিচালক করা হয়।
এ বিষয়ে বেবিচক জানায়, ২০২০ সালে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা মহামারির মাঝেও তিনি ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় শুভ উদ্বোধনের পর সেদিন বলেছিলেন, পরবর্তী দুবছর অর্থাৎ ২০২২ সালে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। কাজও চলছিল সেভাবেই বেশ তোড়জোরে। কিন্তু শুরুতেই বিপত্তি দেখা দেয়। বড় ধরনের ত্রুটি ধরা পড়ে নকশায়। ত্রুটির কারণে কাজের সিকি ভাগও এগোয়নি সাড়ে তিন বছরেও। অথচ ২২ শতাংশ কাজ শেষ না হতেই ব্যয় বেড়েছে ৪১ শতাংশ অর্থাৎ আরও ৮০০ কোটি টাকা।
বর্তমানে এই প্রকল্পের খরচ ৪১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯০০ কোটি টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। তবে নতুন নির্ধারিত সময়েও কাজ শেষ হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। অভিযোগ রয়েছে, নক্সায় এত বড় ত্রুটি না ধরে যারা এই নকশা বুঝে নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য হাতের ইশারায় থেমে গেছে সব।
ডিজাইন ত্রুটি ধরতে না পারার সঙ্গে জড়িত বেবিচক প্রকৌশলীদের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণের জন্য ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিট গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় বেবিচক সদস্য (অর্থ) মো. আজিজ তাহের খানকে। কিন্তু এই কমিটি দায়িত্ব পাওয়ার পর কোনো কার্যক্রমই চালায়নি। এ ত্রুটির দায় দায়িত্ব নির্ধারণের জন্য গত বছর ৩১ আগস্ট কমিটি গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তদন্ত রিপোর্ট।
চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ (বিইউসিজি) কাজটি করছে। ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার সিভিল ডিভিশন ৩-এর অধীনে কাজ সুপারভিশন করা হচ্ছে। এই ডিভিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতি থাকার অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি উল্লেখ করে বেবিচককে একাধিক চিঠি দিয়েছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ। এর আগে এই প্রকল্পে পরিচালক হিসেবে ২ জন যুগ্ম সচিবকে দায়িত্ব¡ দেওয়া হয়। যাদের প্রকল্প সম্পর্কিত কারিগরি দক্ষতা ও যোগ্যতা ছিল না। তারা ছিলেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। তাদের অ্যাভিয়েশন সংক্রান্ত কোনো কারিগরি জ্ঞান ছিল না।
প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয় শাহ জুলফিকার হায়দার নামের একজন উপ-সচিব মর্যাদার ম্যাকানিক্যাল প্রকৌশলীকে। যিনি বিশ বছর আগে প্রকৌশল পেশা ছেড়ে প্রশাসন ক্যাডারে চাকরিতে যোগ দেন। তারপরই হঠাৎ তদ্বিরের জোরে করা হয় এত বড় প্রকল্পের পিডি।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বেবিচক-এর একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকল্পটির শুরুতেই ধরা পড়ে ভুল নক্সা। যে কারণে পিডি জুলফিকার বিপাকে পড়েন। এ সময় তার সঙ্গে পরিচয় ঘটে ফারজানা নামের এক নারী ঠিকাদারের যিনি নিজেকে এক মন্ত্রীর বোন হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রকল্পের বড় নিয়ন্ত্রণ কর্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি হাতিয়ে নেন শত শত কোটি টাকার ইট বালু সরবরাহের কাজ। নক্সায় ত্রুটি আর অদক্ষ পরিচালকের দুর্নীতির কারণে অচল হয়ে পড়ে সব কাজ।
নক্সায় যে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল তা সংশোধন করার জন্য তৎকালীন পিডি জুলফিকার সিভিল এভিয়েশন থেকে কমপক্ষে ৭ শত কোটি টাকা অতিরিক্ত লাগবে বলে প্রস্তাব দেন। কিন্তু তৎকালীন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমানের বিচক্ষণতা ও দৃঢ়তায় জুলফিকার এ বাড়তি ব্যয় হাতিয়ে নিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৫০ কোটি টাকা ব্যয়েই সেই ত্রুটি সংশোধন করে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের শুরুতেই অনিয়ম করা হয়েছে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে। ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর প্রকল্প পরিচালক হিসেবে শাহ জুলফিকার হায়দারকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়ে তখন হৈচৈ পড়ে যায়। কারণ তিনি ছিলেন একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বিশ বছর আগেই তিনি সেই পেশা ছেড়ে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন।
এমন একজনকে অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ প্রশাসন ক্যাডারকে ওসমানির মতো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়ায় তখন তোলপাড় দেখা দেয়। এটা শুধু অনিয়মই নয়, আইকাও রুলসেরও পরিপন্থি। কেননা এ প্রকল্পের ৭৫ ভাগ কাজ হচ্ছে অবকাঠামোগত বাকি পঁচিশভাগ হচ্ছে ইলেকট্রিক্যাল অর্থাৎ ইএম। এ দুটোর কোনো কাজই তিনি সারাজীবনেও করেননি। অথচ তাকেই এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। রাজনৈতিক বিবেচনার এ নিয়োগের দরুন এখন খেসারত দিতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে বেবিচক-এর একজন প্রকৌশলী বলেন, জুলফিকার কাজে যোগ দেওয়ার পর পরই জড়িয়ে পড়েন নানা কেলেঙ্কারি। ফারজানা নামের এক নারীকে সাব কন্ট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া ইট বালু সিমেন্ট সরবরাহের জন্য। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর পর প্রকল্পের কাজে শ্লথগতি দেখা দেয়। জুলফিকারের পরিবর্তে ফারজানাই হয়ে ওঠেন শক্তিধর নারী হিসেবে যার ভয়ে তটস্থ থাকতেন বেবিচক কর্মকর্তারাও। এক পর্যায়ে ধরা পড়ে প্রকল্পের নক্সায় বড় ধরনের ত্রুটি। সেটা সংশোধন করতে কমপক্ষে ৭ শত কোটি টাকা বাড়তি ব্যয়ের আবেদন করে সেটা অনুমোদন নেওয়ার জন্য প্রচ- চাপ করেন তিনি।
সে সময়কার তত্ত্বাবধায়ক ও বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমানের কাছে নকশার ত্রুটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই সময়ে আমি ছিলাম না। আমি ডিডিশন-৩ এ যোগ দেই ২০১৯ সালের ৬ মার্চ। অথচ তার আগেই ড্রয়িং ডিজাইন সবই চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে দরপত্র ডাকা হয়। কাজেই এখানে আমার কোন দায় ছিল না।
পিডি যা বলেছেন ॥ এ প্রকল্পের পিডি, সে সময়ে বিমান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও বর্তমানে প্রবাস কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত, শাহ জুলফিকার হায়দার দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, এই প্রকল্পটি বিলম্ব হওয়ার মূল কারণ ড্রয়িং ডিজাইনের ভুল। এটা হয়েছে আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই। আমাকে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) করার আগেই ড্রয়িং ডিজাইন চূড়ান্ত করে সেটা বুঝে নিয়ে কার্যাদেশ দেয় সিভিল এভিয়েশন। বরং এটা স্পষ্ট করে বলতে চাই সে সময় ডিভিশন-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান পরামর্শক কোম্পানির কাছ থেকে ড্রয়িং ডিজাইন বুঝে নিয়েছেন। কাজেই এখানে আমার কোন দায় দায়িত্ব নেই।
আপনি এ ভুল সংশোধন করার জন্য সিভিল এভিয়েশন থেকে ৭০০ কোটি বাড়তি ব্যয় বরাদ্দ নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছেন কিনা এ প্রশ্নে জুলফিকার হায়দার বলেন, প্রশ্নই ওঠে না। এমন চেষ্টা কেউই করেনি। এটা পরামর্শক কোম্পানি ইয়ুনশিয়নের কাছে জিজ্ঞাসা করলে জানা যাবে।
ফারজানা নামের সাব কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক থাকায় তাকে কোটি কোটি টাকা কাজ প্রদানের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে জুলফিকার হায়দার বলেন, আমি কিভাবে কাজ দিব? পিডির কোনো ক্ষমতা নেই, ছিলও না। পিডি শুধু প্রকল্পের সার্বিক পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ করে। কাজ দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত বা চাপ দিয়েছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। তৎকালীন বিমান প্রতিমন্ত্রী ওই নারীকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলের বোন হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাকে প্রকল্পে পাঠান। সে সময়ের সেই তদ্বির উপেক্ষা করার মতো শক্তি বা বাস্তবতা আমার ছিল না।
সিভিল এভিয়েশন থেকেও ফারজানাকে কাজ দেওয়ার জন্য আমাকে বলা হয়েছে। এভাবে সে কাজ পেয়েছে এবং করেছে। তার সঙ্গে আমার কোন ধরনেরই সম্পর্ক ছিল না। এগুলো শুধুই এক তরফা অভিযোগ ছাড়া আর কিছু নয়। আসলে পিডি হিসেবে আমার কোনো ক্ষমতা ছিল না।
হুমায়ুন কবির