ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

রূপপুরসহ ৯ প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

শেখ হাসিনা রেহানা জয় ও টিউলিপের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করবে দুদক

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

শেখ হাসিনা রেহানা জয় ও টিউলিপের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করবে দুদক

শেখ হাসিনা, রেহানা, জয় ও টিউলিপ

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ৯টি মেগা প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার দুদকের নিয়মিত বৈঠকে এ অনুসন্ধানের অনুমোদন দেওয়া হয়। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন জানান, শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আশ্রয়ণ প্রকল্প, বেজা ও বেপজার আটটি প্রকল্প বাস্তবায়নের আড়ালে ২১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। এমন অভিযোগে গত ১৪ অক্টোবর একটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়, যেখানে বর্ণিত অভিযোগসমূহ কমিশন হতে অনুসন্ধানের উদ্দেশে মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) বরাবর প্রেরণের জন্য দুদক কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এ ছাড়া রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ (জয়), তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে ববি হাজ্জাজের দাখিলকৃত অভিযোগ ও বিভিন্ন পত্রিকার ক্লিপিংয়ে বর্ণিত অভিযোগসমূহ কমিশন হতে অনুসন্ধানের উদ্দেশে মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) বরাবর প্রেরণের জন্য দুদক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছেন বলে আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে তথ্য প্রকাশ করে গ্লোবাল ডিফেন্স কোর নামের একটি ওয়েবসাইট।
ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ আত্মসাতের কাজে তাকে সহায়তা করেছেন ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও টিউলিপ সিদ্দিক। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা রাশিয়ান কোম্পানি রোসাটমের কাছ থেকে একটি পারমাণবিক চুল্লি কেনার নামে এই বিশাল অর্থ লেনদেন করেন।
প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাটম মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এ অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করে দেয়। যাতে মধ্যস্থতা করেন ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক।
একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার সহযোগিতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণে খরচ ধরা হয় এক হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। প্রয়োজনের তুলনায় যা অনেক বেশি। যাতে মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এই বাজেট থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের সুযোগ করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাটম। নিজের ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে এ চুক্তি করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ মধ্যস্থতার বিনিময়ে পাচার করা অর্থের ৩০ শতাংশ পেয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ রেহানা ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য।
২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাতের সময় সঙ্গী ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। গ্লোবাল ডিফেন্স কোরের দাবি, সে সময় ঢাকা-মস্কোর বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির মধ্যস্থতাও করেন তিনি। ২০০৯ সালে ’প্রচ্ছায়া লিমিটেড’ নামে একটি ভুয়া কোম্পানি চালু করেন টিউলিপ সিদ্দিক, তার মা শেখ রেহানা ও চাচা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক। যুক্তরাষ্ট্রেও ‘জুমানা ইনভেস্টমেন্ট’ নামে একটি কোম্পানি রয়েছে তাদের।
গোবাল ডিফেন্স কোরের অভিযোগ, এ কোম্পানির মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের অফশোর অ্যাকাউন্টে অর্থ পাচার করতেন শেখ হাসিনা। তাদের এ কোম্পানিটি ডেসটিনি গ্রুপ নামে একটি চিটিং ফান্ড কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার পাচার করে।
তবে ২৫ আগস্ট রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের পাঁচ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার ঘুষ দেওয়া হয়েছিল, এমন খবরকে ‘গুজব’ ও ‘মিথ্যা’ বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি।
গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হলে তা নিয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে রিট করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার ববি হাজ্জাজ। ওই রিটের শুনানি নিয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের পাঁচ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলারের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে রুল জারি করেন।

হুমায়ুন কবির

×