ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

নারীদের কর্মসংস্থানে প্রতিবন্ধকতা দূর করার তাগিদ সিপিডির

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:১৫, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৯:১৬, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

নারীদের কর্মসংস্থানে প্রতিবন্ধকতা দূর করার তাগিদ সিপিডির

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)

দেশের প্রচলতি শিক্ষা ব্যবস্থায় কর্মমুখী শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সময় এসে গেছে পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শ্রমের বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা বাড়াতে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ ও ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।  আর এসব পরিকল্পনা বাতস্তবায়নে বিদ্যমান প্রতিনবন্ধতা দুর করতে হবে।

বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থানে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম অধিকার কমিশনকে উদ্যোগ নিতে বিলম্ব করা ঠিক হবে না। যতটা সম্ভব নারী ও যুবকদের কমংসংস্থান বাড়াতে শিক্ষাক্রমে কর্মমূখী শিক্ষায় সংযোজন করতে হবে। 


গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে সিপিডি আয়োজিত ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা, কিশোরী ও যুবাদের কাজের সুযোগ ও কর্মব্যবস্থা’ বিষয়ক সংলাপে এসব কথা বলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার মোয়াজ্জেম।


খন্দকার মোয়াজ্জেম বলেন, নানামুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে জেলা পর্যায়ে কিশোরী ও তরুণীদের জন্য চাকরির বাজার অনেক চ্যালেঞ্জিং। যে কারণে শহুরে নারীদের চেয়ে গ্রামীণ নারীরা পিছিয়ে রয়েছে। কিন্তু সেই বিষয়ে তেমন কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। 
হাওড় অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জেলা কিশোরগঞ্জের শ্রমবাজার নিয়ে একটি জরিপ তুলে ধরে খন্দকার মোয়াজ্জেম বলেন, প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমের আওতা বাড়াতে হবে। নারীদের কর্মসংস্থান বাড়াতে ফ্রি ট্রেনিং, উপজেলা লেভেলে  ইনসেন্টিভের ব্যবস্থা করা এবং কৃষি ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকাগুলোতে পেইড ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তো ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে যতেষ্ঠ উদাসীনত রয়েছে। তার যদি ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কৃপনতা দেখায় তবে একাডিমিক কোর্স শেষ বা প্রশিক্ষণ শেষে বাস্তব অভিজ্ঞতা আসবে কোথায় থেকে। অভিজ্ঞতা তো  ক্লাশে অজর্নন করা যায় না। সেজন্য শিল্পগ্রুপগুলোর উচিত যেসব যুবক এ কিশোর একাডেমিক শিক্ষা শেষে ইন্টার্নশিপ করতে আগ্রহী, তাদের সেই সুযোগ নিশ্চিত করা। 


নারীর উন্নয়ন এবং পিছিয়ে পড়া গ্রামাঞ্চল নারীদের এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম অধিকার কমিশনকে নারীদের কর্মসংস্থানে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূরীকরণের তাগিদ দেন সিপিডির এই গবেষনা পরিচালক।  তিনি আরও বলেন, নারীদর নিয়ে নানা কুসংস্কার রয়েছে। রয়েচে নানা বাধা। এসব বাধা দূর না হলে দেশের কর্মসংস্থান ও উন্নয় উভয় বাধার মুকোমুখি হবে। কেননা, নানামুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে জেলা পর্যায়ে কিশোরী ও তরুণীদের জন্য চাকরির বাজার অনেক চ্যালেঞ্জিং। যে কারণে শহুরে নারীদের চেয়ে গ্রামীণ নারীরা পিছিয়ে রয়েছে।  
 
খন্দকার মোয়াজ্জেম কিশোরগঞ্জ জেলার শ্রমবাজার নিয়ে একটি জরিপ তুলে ধরে বলেন, প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এসব দূর করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। নারীদের কর্মসংস্থান বাড়াতে ফ্রি ট্রেনিং, উপজেলা লেভেলে  ইনসেন্টিভের ব্যবস্থা করা এবং কৃষি ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকাগুলোতে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করতে হবে।  এসময় কিছু সম্মানি বা যেভাবেই হোক বেতন টা পরিশোধ করতে হবে। 

তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সরকারের একটি গুর্রুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতায় বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে গুরুত্ব দিতে হবে। এক্সেত্রে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা পরিষদ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এর আওতায় শিক্ষিত-স্বল্পশিক্ষত যুব নারী-পুরুষদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। আবার শিক্ষার মান, হালনাগাদকরণ, বাজারচাহিদা অনুযায়ী উপযোগী কোর্স চালু করা, পাঠদান মান, পরিবীক্ষণ, ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এখনও অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। এছাড়াও কারিগরি শিক্ষার প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও এই ক্ষেত্রে একটি বড় অন্তরায়।


অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে সুপারিশগুলো হলো-- সমস্ত উপজেলায়য় চাকররি সুযোগ সর্ম্পকে সচতেনতা বাড়াতে রোল মডলে এবং ক্যারযি়ার কাউন্সেলরদের সঙ্গে কর্মশালার আয়োজন করা। ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং সারা দেশে রোল মডেলদের কর্মশালার ব্যবস্থা করা। তরুণ মহিলাদের জন্য ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং ব্যবসায়িক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করতে হবে।  

চাকরির জন্য জীবনবৃত্তান্ত লেখা, সাক্ষাৎকারের দক্ষতা, এবং তরুণ মহিলাদের জন্য চাকরির আবেদনে সহায়তা প্রদানকারী একটি ক্যরিয়ার কেন্দ্র স্থাপন করা। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকার, এবং বেসরকারী খাতের প্রতিনিধিদের সাথে বাজারের চাহিদার সাথে সারিবদ্ধ করার জন্য মাল্টি স্টেকহোল্ডার ফোরাম গঠন করা।

সবশেষে, যুব মহিলাদের নিয়োগ বা চাকরিকালীন প্রশক্ষিণ প্রদানকারী ব্যবসাগুলির জন্য বিভিন্ন উপজেলায় প্রণোদনা (ট্যাক্স, ভর্তুকি) প্রদানের ব্যবস্থা করা।

রিয়াদ

×