ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২ পৌষ ১৪৩১

এবারের বিজয় দিবস দিল্লীর আধিপত্যবাদমুক্ত প্রথম বিজয় দিবস: নাগরিক কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২০, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২৩:২৩, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

এবারের বিজয় দিবস দিল্লীর আধিপত্যবাদমুক্ত প্রথম বিজয় দিবস: নাগরিক কমিটি

দিনভর নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মহান বিজয় দিবস উদ্‌যাপন করেছেন।

বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভে মোমবাতি প্রজ্বলন এবং দোয়া-মোনাজাত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের উদ্যাপন শুরু হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭১ ও ২০২৪-এর শহীদদের স্মরণে সমবেত কণ্ঠে ‘মুক্তির মন্দির সোপানও তলে’ গানটি গাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। মোমবাতির আলোয় আলোকিত হয় ’৭১, ২৪ এর শহীদদের আমরা ভুলবো না’ বলেও কন্ঠে উচ্চারণ করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মানজুর-আল-মতিন। এতে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। বক্তৃতা শেষে দোয়া পরিচালনা করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। 

নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন- “আজকের এই বিজয় দিবস দিল্লীর আধিপত্যবাদমুক্ত প্রথম বিজয় দিবস। মোমবাতির আলোয় লেখা ৭১ ও ২৪ আমাদের মধ্যকার দ্রোহের আগুনকে প্রতিনিধিত্ব করে। এই দ্রোহের আগুন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে। তরুণরা সদা জাগ্রত আছে।” কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তাজনূভা জাবীন বলেন- “এই কর্মসূচি শুধু বিজয়ের আনন্দ উদ্যাপন নয়, এটি জাতীয় ঐক্যের প্রতি সম্মান জানানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনঃ সকাল সাড়ে দশটায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, যুগ্ম সদস্য সচিব এস এম সাইফ মোস্তাফিজ, অলীক মৃ, সংগঠক মাজহারুল ইসলাম ও সাইফুল্লাহ হায়দার প্রমুখ। 

বিজয় র‍্যালিঃ রাজধানীর বাংলামোটরস্থ জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বেলা তিনটায় একটি বর্ণিল ‘বিজয় র‍্যালি’ বের হয়। র‍্যালিটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শহীদ মিনার অভিমুখে রওয়ানা হয়। র‍্যালিটি কাঁটাবন মোড় ও পলাশীর মোড় হয়ে শহীদ মিনার অতিক্রম করে শাহবাগে গিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। বিজয় র‍্যালিতে ঢাকা মহানগর, ঢাকা জেলা এবং ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। 

র‍্যালিতে অংশগ্রহণ করেন তুরাগ, উত্তরা পশ্চিম, উত্তরা পূর্ব, খিলক্ষেত, এয়ারপোর্ট, উত্তরখান, দক্ষিণখান, যাত্রাবাড়ি, কদমতলী, শ্যামপুর, ডেমরা, লালবাগ, চকবাজার, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, কলাবাগান, নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, হাতিরপুল, রামপুরা, খিলগাঁও, সবুজবাগ, টঙ্গী পূর্ব, টঙ্গী পশ্চিম, গাজীপুর সদর, নরসিংদী সদর, নারায়ণগঞ্জ সদর, সিদ্ধিরগঞ্জ, সোনারগাঁও, ফতুল্লা, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, বন্দর থানা এবং নাগরিক কমিটির প্রকৌশলী উইংয়ের প্রতিনিধিরা। এই সময় ‘৭১ মরে না, ২৪ হারে না; ৭১-এর পতাকা, ২৪ দিবে পাহারা; ৭১-এর শহীদেরা, লও লও লও সালাম; ২৪-এর শহীদেরা, লও লও লও সালাম; ফ্যাসিবাদের দিনশেষে, শান্তি এলো বাংলাদেশে’ ইত্যাদি স্লোগানে র‍্যালিটি মুখরিত হয়ে ওঠে। র‍্যালি শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সংগঠক আলী নাছের খান, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক নিজাম উদ্দিন, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এস এম শাহরিয়ার, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।    

সমাবেশে সারজিস আলম বলেন- “ইতোপূর্বে এই জনপদের রাষ্ট্র হয়ে ওঠার সুযোগ এসেছিল কয়েকবার। ৪৭ সালে সে-ই সুযোগ কাজে লাগানো যায়নি। ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে শেখ মুজিবর রহমান মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছিল। মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সংবিধান ধ্বংস করেছিল, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে ভারতের কাছে লিজ দিয়েছিল। এই মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে খুনি হাসিনা বিগত ১৬ বছরে বাংলাদেশের মানুষকে নাগরিক হয়ে উঠতে দেয়নি। ২৪-এর অভ্যুত্থানের পর আমাদের আবার সুযোগ এসেছে নাগরিক হয়ে ওঠার। ছাত্র-জনতা এবার সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে।”

সমাপনী বক্তব্যে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন- “আমরা একটি দীর্ঘ ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ঘাড়ে দিল্লীর হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন নিশ্বাস ফেলছে। এই বিজয় দিবসে আমাদের দুইটি শত্রু থেকে সচেতন থাকতে হবে। দিল্লীর হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসী শক্তি এবং দিল্লীর এক্সটেনশন মুজিববাদ। ঢাকা এই দুই শত্রুকে পরাজিত করে দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্ব দিবে, ইনশাআল্লাহ। ২৪-এর বিজয় দিবসে আমরা শপথ নিতে চাই, আমাদের শরীরে যতো দিন রক্ত থাকবে, আমরা ততো দিন এদেশে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হতে দিবো না, মুজিববাদ পুনর্বাসন হতে দিবো না, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি হতে দিবো না, বাংলাদেশে কোনো বিশ্বমোড়লদের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে দিবো না। আমরা বারবার বলি, তোমাদের আছে ক্ষমতা আর টাকা, আমাদের আছে তাজা রক্ত। আমরা নিজেদের জীবন ও রক্তকে বাংলাদেশের জন্য উৎসর্গ করে দিলাম।” 

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনাঃ সন্ধ্যা ছয়টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে একটি বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এতে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, অনিক রায় এবং সংগঠক প্রীতম দাস। এতে ১৯৭১ ও ২০২৪-এর শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় শ্রীমদ্ভগবত গীতা পাঠ করা হয়। প্রার্থনায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনার পাশাপাশি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান করা হয়। প্রার্থনা করান ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত নিখিল চক্রবর্তী।  

মিলাদ মাহফিল ও দোয়াঃ সন্ধ্যা সাতটায় বাংলামোটরস্থ রূপায়ন টাওয়ার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। দোয়ায় অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা হয় এবং ৭১ ও ২৪-এর শহীদদের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। মিলাদ মাহফিল ও দোয়া পরিচালনা করেন মোহাম্মদপুর থানার প্রতিনিধি মাওলানা জোবায়ের আহমেদ।

নুসরাত

×