ছবি সংগৃহীত
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন, যখন নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করে। রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি, এবং মিত্রবাহিনীর পক্ষে ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণ দলিলে সই করেন।
তবে ঐতিহাসিক এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সেনাপতি জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানীর উপস্থিতি ছিল না, যা নিয়ে আজও আলোচনা-সমালোচনা হয়। ওসমানী কেন আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না, এই প্রশ্ন দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিতি নিয়ে ১৯৮০ সালে রোববারকে দেওয়া ওসমানীর সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি তখন রণাঙ্গনে সফররত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, বিশেষ করে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী জানতেন আমাকে কোথায় পাওয়া যাবে? তাছাড়া মিত্রবাহিনীর উচ্চতম কর্মকর্তারাও জানতেন আমি কোথায়?
“তা সত্ত্বেও আমাকে কোনও খবর দেওয়া হয় নাই। বরং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রধান আমার ডেপুটি চিফ অব স্টাফ তদানীন্তন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারকে পাঠান।”
জেনারেল ওসমানী তার সাক্ষাৎকারে আরও বলেছিলেন, “ভারতীয় ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ উভয় সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের মহান ব্যক্তিবর্গ (স্ব স্ব কারণে বা উদ্দেশ্যে) চাইতেন না যে এই আত্মসমর্পণ বাংলাদেশ তথা মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়কের নিকট হোক, যদিও মুক্তিবাহিনী (নিয়মিত ও অনিয়মিত) সুদীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করেছিল এবং তাদের সর্বাধিনায়ক কেবিনেট মন্ত্রী সমপর্যায়ের মর্যাদার অধিকারী ছিলেন।” তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু আর সাক্ষাৎকারে বলে যাননি ওসমানী।
এ প্রসঙ্গে জেনারেল ওসমানীর ঘনিষ্ঠজন, সাংবাদিক ইব্রাহিম চৌধুরী খোকন বলেন, “এসব ঘটনা নিয়ে তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলতেন- ‘এখনও অনেক কথা বলার সময় বা পরিবেশ আসেনি। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলীভিত্তিক স্মৃতিকথামূলক ইতিহাস লিখছি আমি; সেখানে সব পাবেন’।”
১৯৮৪ সালে ওসমানীর মৃত্যুর পর তার লেখা পাণ্ডুলিপি আর পাওয়া যায়নি। “এনিয়ে কেউ কেউ খোঁজ-খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কেউ পাণ্ডুলিপিটির খোঁজ পাননি। ধারণা করা হয়, এটি গায়েব করে দেওয়া হয়েছে,” বলেন খোকন।
আশিকুর রহমান