জাতীয় নাগরিক কমিটির ৩ নেতাকে মারধর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মামলা মীমাংসার সালিশে কথা-কাটাকাটির জেরে জাতীয় নাগরিক কমিটির ৩ নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।
আহতরা হলেন— জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংগঠক জিহান মাহমুদ ও সদর উপজেলা সংগঠক হাসান নাসিমুল ওরফে রাসেল।
আহতদের অভিযোগ, আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানসহ অন্য আইনজীবীরা কক্ষের বাতি নিভিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাদের মারধর করেছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন।
পুলিশ, নাগরিক কমিটি ও আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কুটি লিশিয়ারা গ্রামের রাবেয়া খাতুন নামের এক নারী তিন-চার মাস আগে জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্বামী মো. হাবিবুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করেন। রাবেয়া খাতুন সম্পর্কে নাগরিক কমিটির নেতা মো. আতাউল্লাহর খালা। ওই মামলার তিনটি শুনানির পর আদালত উভয়পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি মীমাংসার জন্য দুই পক্ষের আইনজীবীকে নির্দেশ দেন।
তাই রবিবার বিকেল ৫টার দিকে মফিজুর রহমানের কক্ষে মীমাংসায় বসার সময় নির্ধারণ করা হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুল আদালতে আসামি হাবিবুল্লাহর পক্ষের আইনজীবী।
আইনজীবী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বিকেল ৫টার দিকে উভয়পক্ষের লোকজন আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে পৌঁছাতে শুরু করেন। তবে রাবেয়া খাতুনের পক্ষের লোকজন কিছুটা বিলম্বে পৌঁছান। বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে মফিজুর রহমান বাবুলের কক্ষে পৌঁছান আতাউল্লাহ, জিহান মাহমুদ ও হাসান নাসিমুল। বিলম্বে পৌঁছানোর বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে আতাউল্লাহসহ অন্যদের কথা–কাটাকাটি হয়। সঙ্গে থাকা হাসান নাসিমুল আইনজীবীদের উদ্দেশে আতাউল্লাহকে পরিচয় করিয়ে দেন। এতে আইনজীবীরা রেগে যান। একপর্যায়ে আইনজীবী ও তাদের সহকারীরা আতাউল্লাহসহ জাতীয় নাগরিক কমিটির জিহান মাহমুদ ও হাসান নাসিমুলকে মারধর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এর আগেই আইনজীবীরা ঘটনাস্থল থেকে সরে যান।
মো. আতাউল্লাহ বলেন, একজনের জামিনের জন্য আদালতে যাই। পরে কসবার এক আত্মীয় পরিচয় করিয়ে দিতে আমাকে ডেকে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে নিয়ে যান। সরল মনে সেখানে গিয়েছি। আমাদের পরিচয় শুনে তারা মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে বাতি নিভিয়ে ও দরজা বন্ধ করে আমাদের মারধর করেছে। এসপিকে ফোন দিয়ে আমি ফেসবুক লাইভে গিয়েছি।’
তার অভিযোগ, মফিজুর রহমান জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক। তিনি ইন্ধন দিয়ে পরিকল্পিতভাবে মারধর করেছেন। নাসিমুলের মাথায় ছয়টি সেলাই লেগেছে। তিনি বলেন, এসপিকে কল দিলেও তিনি আসেননি। আমি তার অপসারণ চাই।
সদর উপজেলার সংগঠক হাসান নাসিমুল ওরফে রাসেল বলেন, আতাউল্লাহ ভাইয়ের আত্মীয়ের পক্ষে আমরা গিয়েছিলাম। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার আগে আতাউল্লাহ ভাই নিজের পরিচয়পর্ব শুরু করেন। এর পরপরই আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য আইনজীবীরা উত্তেজিত আচরণ শুরু করেন। কথা-কাটাকাটির সময় তারা মারধর শুরু করেন। এ বিষয়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও মফিজুর রহমান ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সদর থানার ওসি মো. মোজাফফর হোসেন বলেন, এ ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনে পৌঁছে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, রাবেয়া খাতুন ও তার স্বামী হাবিবুল্লাহ’র যৌতুকসংক্রান্ত পারিবারিক বিষয়টি মীমাংসার জন্য জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে দুই পক্ষের আইনজীবীরা বসেন। খালার কথায় হয়তো আতাউল্লাহ সালিস সভায় পৌঁছান। এটি নেহায়েত একটি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক মামলা।
পরিষ্কার করে বলছি, এখানে দলাদলির বা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নেই। দুই পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও মারামারি হয়। আতাউল্লাহসহ জাতীয় নাগরিক কমিটির তিনজন আহত হন। আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুত তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি। তারা অভিযোগ দিলে আমরা আমলে নেব।
শহীদ