হোসে রামোস হোর্তা
প্রথমবারের মতো চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসলেন পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস হোর্তা। শনিবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ রবিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একান্তে ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে অফিসিয়াল এবং কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এ ছাড়া প্রেসিডেন্টের সফরকালে ঢাকায় পূর্ব তিমুরের অনারারি কনস্যুলেট খোলার বিষয়ে ঘোষণা আসবে।
পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টকে বরণ করে নিতে রাজধানী ঢাকা সেজেছে বর্ণিল সাজে। রাজধানীর সড়কের বিভাজনগুলোতে দুই দেশের পতাকা ওড়ানোসহ বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে। ব্যানারগুলোতে পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টকে ঢাকায় প্রাণঢালা শুভেচ্ছাসহ নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয়েছে।
র্প্বূ তিমুরের প্রেসিডেন্টকে বরণ করতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় সুসজ্জিত করা হয়। শনিবার রাতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে প্রেসিডেন্ট হোর্তা বিমানবন্দরে পৌঁছলে তাঁকে গার্ড অব অনার ও লাল গালিচা অভ্যর্থনা দেওয়া হয়। এরপর তাকে গার্ড অব অনার দিয়ে হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
সফরের দ্বিতীয় দিন রবিবার সকালে পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। আজ দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দুই শীর্ষ নেতা একান্তে আলাপ-আলোচনা করবেন। পরে প্রতিনিধি দল নিয়ে বৈঠকে বসবেন ইউনূস-হোর্তা। বৈঠক শেষে তারা যৌথ প্রেস কনফারেন্স করবেন। এরপর দুই শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি ও ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই হবে। একই দিন বিকেলে পূর্ব তিমুরের অনারারি কনসাল কুতুবউদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সভাপতি ও বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল সফররত প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
তৃতীয় দিন সোমবার প্রেসিডেন্ট হোর্তা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তিনি ওইদিন সাভার জাতীয় স্মৃতি সৌধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন। তিনি বাংলাদেশের ৫৪তম বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন।
শেষ দিন মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট হোর্তা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএস) অডিটরিয়ামে ‘দ্য চ্যালেঞ্জেস অব পিস ইন দ্য কনটেম্পোরারি ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক থিমের ওপর বক্তৃতা করবেন। পরে তিনি বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ও তরুণ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন। একই দিন বিকেলে তিনি বাংলাদেশের ছাত্র এবং তরুণদের উদ্দেশ্যে তার দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অভিজ্ঞতা, তার নেতৃত্ব, দীর্ঘ সংগ্রামে জনগণের ভূমিকা ও স্বাধীনতা পরবর্তী তিমুর লেস্তের জনগণের আকাক্সক্ষা ও তার বাস্তবায়ন সম্পর্কে সম্যক বক্তব্য রাখবেন। এদিন তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।
পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টের সফর নিয়ে গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন জায়েছেন, তাঁর সফরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। যার মধ্যে রয়েছে অফিসিয়াল এবং কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তি। এ ছাড়া দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় পরামর্শমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক।
হোর্তার সফরকালে বাংলাদেশে তিমুর-লেস্তে অনারারি কনস্যুলেট খোলার বিষয়ে ঘোষণা আসবে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। তিনি জানান, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিমুর লেস্তের একজন তরুণ কূটনীতিককে বছরব্যাপী বিশেষ কূটনীতিক প্রশিক্ষণ কোর্স এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং কূটনীতির ওপর প্রফেশনাল মাস্টার্স ২০২৫-এ অংশগ্রহণের জন্য বৃত্তি প্রদান করেছে। কূটনৈতিক প্রশিক্ষণটি ফরেন সার্ভিস একাডেমি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ যৌথভাবে পরিচালনা করে থাকে।