শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজারে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানান
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করেছে দেশের মানুষ। শোষিত আর পরাধীন বাঙালিকে মুক্তির পথে নিয়ে গিয়েছিলেন যাঁরা, অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন নিজের প্রাণ, জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেছে দেশবাসী। জাতীয় জীবনের বেদনাঘন দিন শনিবার রাজধানী মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানিয়েছে কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি। তাঁদের হাতে ছিল ফুল আর কণ্ঠে ছিল বৈষম্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক শান্তিময় বাংলাদেশ বিনির্মাণের দৃপ্ত শপথ।
এদিন শোকে আপ্লুত মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ঊষালগ্নে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান অসংখ্য বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞের মর্মন্তুদ যন্ত্রণার স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় জগন্নাথ হলের স্মৃতিস্তম্ভে নিবেদন করেছেন প্রাণের শ্রদ্ধার্ঘ্য। স্বজনহারা মানুষের চাপা কান্নায় আর্দ্র হয়ে উঠেছিল বেদীমূল।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবারের বুদ্ধিজীবী দিবসে নতুন প্রজন্মের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। পথে পথে ছিল নতুন প্রজন্মের উচ্ছ্বাস। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস জানিয়ে ‘সচেতন নতুন প্রজন্ম’ গড়ে তুলতে সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তানরা। শহীদদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সর্বস্তরের জনগণও।
বেদনায় আচ্ছন্ন মন, শোকে মুহ্যমান হƒদয়Ñ এমনই এক বেদনাবিধুর পরিবেশে জাতি স্মরণ করেছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। তবে ছিল না কোনো আক্ষেপের সুর কিংবা হতাশার বাণী। শোক যেন এখন পরিণত হয়েছে শক্তিতে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভোর থেকে রাজধানীর রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। ফুলে ফুলে ভরে যায় স্মৃতিসৌধের বেদী। রাজধানী ও আশপাশের এলাকার সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রথমে দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শনিবার মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে তারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করেন তাঁরা।
এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। পাশাপাশি বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধান উপদেষ্টা অন্যান্য উপদেষ্টা, উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আগত অন্যান্যের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার পর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ সমাধিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাঙালি জাতির চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এই দেশীয় দোসররা জাতিকে মেধা শূন্য করতে এই দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করেছে। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
এদিকে, রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাজধানীর রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী সমাধিসৌধে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের মানুষ শহীদদের স্মরণে নির্মিত বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছিল মিরপুর ও রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। শোকার্ত মানুষ মিরপুর এবং রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুলে ফুলে নিবেদন করেছেন তাদের প্রাণের অর্ঘ্য।
সকালে কালো পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন, শোক শোভাযাত্রা, শ্রদ্ধা নিবেদন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছিল। ভোরের সূর্য ওঠার আগেই হাজারো মানুষ ভিড় করে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সামনে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ছাড়াও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, আমরা একাত্তর, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, ছায়ানটসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য, ছাত্র, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ ব্যক্তিগত উদ্যোগে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ ও দেশ গড়ার স্বপ্ন ধারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। ’৭১-এর হানাদার বাহিনীর জুলুমের পুনরাবৃত্তি হয়েছে ২৪ এর জুলাইয়ে। যে নতুন বাংলাদেশ আমরা স্বপ্নে দেখছি, যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এগিয়ে যাচ্ছেন, এটা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যে স্বপ্ন ছিল তারই একটা চলমান প্রক্রিয়া। সেই আলোকেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তাঁরা যে জন্য যুদ্ধ করেছিলেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর সরকার ধারণ করে।
একাত্তরের সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানের মিল খুঁজে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যেভাবে বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা, এ রকম পুনরাবৃত্তি আমরা জুলাইতে দেখেছি। আপনারা দেখেছেন, আমাদের ছয়জন শীর্ষ ছাত্রনেতাকে কীভাবে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বুদ্ধিজীবীরা তাদের উত্তরসূরিদের জন্য যেভাবে তাদের লেখা লিখে গিয়েছিলেন, আহনাফ বা শিক্ষার্থীরাও তাদের মায়ের কাছে চিঠি লিখছে যে, তারা যুদ্ধ করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা যারা পুরো জুলাই গণআন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানে ছিলাম তারা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মতাদর্শ, তাদের দেশ গড়ার স্বপ্ন পুরোপুরি ধারণ করি এবং সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাই-আগস্টের শহীদরা যতদিন আমাদের হৃদয়ে থাকবেন, তত দিন এই একতাবদ্ধতাকে কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারবে না। যত ষড়যন্ত্রই করা হোক না কেন, সেই ষড়যন্ত্রকে বাংলাদেশের জনগণ প্রতিহত করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসকে যে আওয়ামীকরণ করা হয়েছে, তার থেকে মুক্ত রাখার যে বুদ্ধিদীপ্ত লড়াই চলছে, তাতে তরুণরা নিয়োজিত হয়েছেন। আমাদের তরুণদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধকে আওয়ামীকরণের জায়গার মধ্য থেকে বের করে আনতে হবে।
লালমাটিয়া থেকে নিজের শিশুকন্যাকে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেছিলেন সরকারি চাকরিজীবী বাবুল ইসলাম। তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, নতুন প্রজন্মকে এই দেশের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। তাই এখানে এসেছি, যাতে এটা তাদের মননে গেঁথে যায়। বুদ্ধিজীবীরা আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান।
খিলগাঁও থেকে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন ব্যবসায়ী আফসার আহমেদ। তিনি বলেন, একাত্তরে জাতির বুদ্ধিজীবী এবং মেধাবীদের ঘর থেকে ডেকে নিয়ে এনে নির্মমভাবে গণহত্যা চালানো হয়। সেই স্মৃতির বেদীতে শ্রদ্ধা জানাতেই আজ এখানে এলাম আমরা।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে এসেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এবাদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি ওই সময়ে দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা ছিল একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফল। জাতিকে মেধাশূন্য করার এক গভীর চক্রান্ত ছিল এই হত্যাকাণ্ড। সেই নির্মম ঘটনার স্মৃতি ধরে রাখতেই আজ এখানে আসা।’ পরে বেলা বাড়তেই ধীরে ধীরে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ভিড় কমতে থাকে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।
শ্রদ্ধায় সিক্ত রায়েরবাজার বধ্যভূমি ॥ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমি-স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। শনিবার প্রথম প্রহরে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে বিভিন্ন দলের ব্যানারে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়।
সূর্যোদয়ের প্রথম প্রহরে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে সর্বপ্রথম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মোহাম্মদপুর থানা ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সাধারণ মানুষ। বিএনপি ছাড়াও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী দল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
শ্রদ্ধা জানানো শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আজকের এই দিনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করি। এ দিবসগুলো আমাদের মূল পরিচয়ের স্মারক। আমরা এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থান এ বছর আলাদা তাৎপর্য বহন করছে। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ জাতি আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে, অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করে কীভাবে রুখে দাঁড়াতে হয়। তারা আমাদের যে দায়িত্ব দিয়ে গেছে, সেটি পালন করাই আমাদের কাজ।
সকালে সোয়া ১০টার দিকে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফ সোহেল বলেন, ’৭১ এবং ২৪ নিয়ে একটি মহল জল ঘোলা করা চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফ্যাসিস্টের দোসররা বার বার দেখানোর চেষ্টা করছে, আমরা তরুণ প্রজন্ম যারা রক্ত দিয়ে নতুন বাংলাদেশকে নিয়ে এসেছি, তারা ’৭১-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা ২৪-কে মনে করি ’৭১-এর ধারাবাহিকতা। আমরা ’৭১-এর লড়াইকে একটি চলমানতার সঙ্গে দেখতে চাই।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময় দেখানোর চেষ্টা করেছে ’৭১-এ যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে এবং তারা ক্ষমতায় এসে দেখানোর চেষ্টা করেছে এটাই হলো বাঙালি চূড়ান্ত পরিণতি। তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে কৌশল অবলম্বন করেছে। মুক্তিযুদ্ধকে তাদের দলীয় ব্যানারে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমরা বারবার বলার চেষ্টা করছি, ’৭১ ছিল পুরো জনগোষ্ঠীর লড়াই। এ দেশের ছাত্র-জনতা, কৃষি, দিনমজুর সবার লড়াই। এটা শুধু আওয়ামী লীগের লড়াই নয়।’
বিশেষ দোয়া বায়তুল মোকাররমে ॥ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে কুরআন খানি আলোচনা সভা এবং বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টায় বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে আলোচনা সভায় দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান।
এ সময় ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেশের জন্য আত্মদানকারী সকল শহীদ বুদ্ধিজীবীর রুƒহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন।