ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

‘রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে দুর্নীতি হয়েছে’

প্রকাশিত: ১৯:০৭, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৯:০৮, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

‘রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে  দুর্নীতি হয়েছে’

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিনিময় ছাড়া কোন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হয়নি। রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীদের যোগসাজশেই বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে দুর্নীতি হয়েছে যার বিস্তার ঘটেছে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও তার দপ্তরের একক ক্ষমতার কারণে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হলে দুনীর্তি কমানো সম্ভব। 
বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ও খাতের দুনীর্তি নিয়ে গতকাল শনিবার আয়োজিত এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন অভিযোগ করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম. তামিম। রাজধানীর এফডিসিতে ছায়া সংসদটির আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
ম. তামিম বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে মাফিয়াদের আইনের আওতায় না আনলে মাফিয়াতন্ত্র দমন হবে না। এস আলম ও সামিট গ্রপের মত প্রতিষ্ঠানগুলির দুর্নীতি অনুসন্ধানে ‘ফরেনসিক স্ক্রুটিনি’ প্রয়োজন। 
তিনি বলেন, তিন দিনের মধ্যে কোন আলাপ আলোচনা ছাড়াই তড়িঘড়ি কওে ভারতের আদানির সাথে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করা হয়। শতভাগ ক্যাপাসিটি চার্জ পেমেন্টের পরেও ৪০ ভাগ আরো অতিরিক্ত বিদ্যুতের মূল্য দিতে হয় বাংলাদেশকে। অসম এই চুক্তিটি পুণর্বিবেচনা করা দরকার।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) দেশের সবচেয়ে অস্বচ্ছ প্রতিষ্টান এমন অভিযোগ তুলে ম তামিম বলেন, এই অস্বচ্ছতার পিছনে বিগত সরকারের স্বার্থ জড়িত ছিলো। লোকসান দেখিয়ে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য নির্ধারণের জন্যই প্রতিষ্ঠানটিকে অস্বচ্ছ রাখা হতো। বর্তমান সরকার এসেও এখন পর্যন্ত প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ করতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন না করে কমিশনের লোভেই এলএনজির দিকে ঝুঁকে পড়া ছিলো ভুল উদ্যোগ। জবাবদিহিতাকে এড়ানোর জন্য বিগত সরকার গণশুনানির পরিবর্তে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম নির্ধারণ করতো, যা ছিলো অস্বচ্ছ। 
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বিগত সরকার সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন না করেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। ফলে যতটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো তা সঞ্চালন লাইনের অভাবে বিতরণ সম্ভব হতো না। তাই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হওয়া স্বত্বেও লোডশেডিং থেকে মুক্তি মিলেনি। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসার পর কারিগরি ত্রæটি লেগেই রয়েছে। 
তিনি বলেন, ফেরি করে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলা হলেও বিদ্যুতের ফেরিওয়ালারা এখন জেলে অথবা পলাতক। বিদ্যুতের এমন মিটার বসিয়েছে যে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলেও মিটার ঘোরে। প্রিপেইড মিটারে রিচার্জ করার সাথে সাথে এক চতুর্থাংশ টাকা মিটার খেয়ে ফেলে। শিল্প কারখানাগুলোতে গ্যাসের পাইপে গ্যাসের পরিবর্তে বাতাস দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। 
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির জন্য বিগত সরকারের রাজনীতিবিদ অপেক্ষা আমলারাই বেশি দায়ী” শীর্ষক ওই ছায়া সংসদে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর বিতার্কিকদের পরাজিত করে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক শাহনাজ বেগম, ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক রফিকুল বাসার, সাংবাদিক রিশান নসরুল্লাহ।

নাহিদা

×