.
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যে মেসেজ দিয়েছে সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্বাচন বিলম্বিত হলে সরকারের জন্য খারাপ, জনগণের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে। বর্তমান সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ না বানানোর জন্যও আহ্বান করা হয়। ছাত্র-জনতা বুক পেতে দিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে সেই বিজয়কে ধরে রাখতে হবে বলেও জানান বক্তারা।
শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গত ১৫ বছর একাত্তরের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে, এখন যেন আবার ইতিহাস বিকৃত করা না হয়। মেধাবী মানুষগুলোকে সরিয়ে দিতে চায় স্বৈরাচাররা একনায়কতন্ত্রের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য। সেটি করেছে পাকিস্তান ’৭১ সালে। বর্তমান সময়ের রাজনীতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা কি আমাদের ধ্বংস করতে চাচ্ছি? এমন কথা বলছি, নিজেদের ধ্বংস করছি। তারা হয়তো জানে না। আমরা একটা ক্লান্তি সন্ধিক্ষণ সময় পার করছি। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। আমরা সেগুলো থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।
‘রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে’ তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উনি কেন, কী বুঝাতে চাচ্ছেন? জানি না। গভীরতা কী? জানি না। এ সরকারকে তো আমরা সকলে মিলে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। জনগণ সমর্থন দিচ্ছে। বিএনপি সমর্থন দিচ্ছে। তাদের কাজ একটা পরিবেশ তৈরি করা। তিনি বলেন, দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। প্রতিটা কথা মেপে বলা দরকার। এমন কথা বলবেন না, যাতে পতিতরা সুযোগ পেয়ে যায়। তারা যেন ফিরে আসতে না পারে সেজন্য ঐক্য ও মেধা দিয়ে কাজ করতে হবে। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘উনি (তথ্য উপদেষ্টা) যদি না বুঝে বলে থাকেন, তাতে কোনো মত নেই। তবে যদি বুঝে বলে থাকেন, সেটি প্রত্যাহার
করতে হবে।’ তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে ও ভয় পাইয়ে দিতে তরুণ ও বুদ্ধিজীবীদের আয়না ঘরে নিয়েছিল। একে মারো, একে ধরো, এটা হতে দেওয়া যায় না। গণতন্ত্র হচ্ছে, পরমতসহিষ্ণুতা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নেতা-কর্মীদের প্রতি আবারও নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, আপনারা মনে করছেন হাসিনা পালিয়ে গেছে, শেষ। না, আমাদের সামনে আরও বেশি কাজ। নির্বাচন শেষ হলেই কাজ শেষ নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না করা পর্যন্ত কাজ করতে হবে, আমাদের কাজ দীর্ঘসময়ের।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তিনটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছিল। এদেশের মানুষ ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা পেলে সরকার পরিবর্তন করতে পারে। মানুষ চায়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক মুক্তি। ‘অন্তর্বর্তী সরকার যে মেসেজ দিয়েছে সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্বাচন বিলম্বিত হলে সরকারের জন্য খারাপ, জনগণের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে। সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে নির্বাচনকে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কেউ ষড়যন্ত্র করতে পারবে না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘পাকিস্তানি যখন আর আমাদের কন্ট্রোল করতে পারছিল না, তখন তারা এদেশের যারা ইন্টেলেকচুয়াল ব্যক্তিদের হত্যার ষড়যন্ত্র করে এবং তার বাস্তবায়ন করা হয়। ২৪-এ বিজয়ের আগে কিন্তু ইন্টেলেকচুয়াল ব্যক্তিদের টার্গেট করা হয়নি তবে, ইন্টেলেকচুয়াল উদীয়মান তরুণদের হত্যা করে পালিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা। এদের দেশে নিয়ে এসে আইনানুগ বিচার দাবি করছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, আজকের যারা বুদ্ধিজীবী তারা তোষামোদি বুদ্ধিজীবী, আমরা তাদের মতো বুদ্ধিজীবী দেখতে চাই না। আমরা তাদের ধ্বংস কামনা করি। আর যারা জনগণের বুদ্ধিজীবী তাদের মঙ্গল কামনা করি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, পাকিস্তান পরাজিত হওয়ার পূর্বে সব জ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে দেশকে মেধাশূন্য করা হয়েছিল। ফ্যাসিবাদ তার শাসন আমলে দেশের শিক্ষা, শিক্ষিত ব্যক্তি, আমলাতন্ত্র সকল সেক্টর ধ্বংস করার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল, সেটির বাস্তবায়ন করেছে এই ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আমরা পারি নাই, কিন্তু ছাত্র-জনতা বুক পেতে দিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে সেই বিজয় আমাদের ধরে রাখতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর অব হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, জিয়াউর রহমানের কথা প্রমাণ পেয়েছি, বিজয়ের প্রাক্কালে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানিদের তাড়িয়ে বিজয় অর্জন করতে পেরেছি, আমাদের কি আবার ভারতকে তাড়াতে যুদ্ধ করতে হবে?’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ড. মাহমুদ হাসান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।