ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গোপালগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায় ১০.২ ডিগ্রি ঘন কুয়াশা ও শীতে জবুথবু দেশ

ঘন কুয়াশা ও শীতে জবুথবু দেশ ॥ ১৫ ডিসেম্বরের পর শৈত্যপ্রবাহ

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

ঘন কুয়াশা ও শীতে জবুথবু দেশ ॥ ১৫ ডিসেম্বরের পর শৈত্যপ্রবাহ

রাজধানীতে হঠাৎ বেড়েছে শীতের তীব্রতা। প্রচ- ঠান্ডায় একটু উষ্ণতা পেতে গরম কাপড় জড়িয়ে রেখেছে দুই ভাইবোন

হঠাৎ করেই দেশের আকাশ থেকে যেন সূর্য উধাও। ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় সারাদেশ। এর সঙ্গে বইছে কনকনে ঠান্ডা হিমেল হাওয়া। তীব্র ঠান্ডায় ঘর থেকেও বের হওয়া দায়। নগর-মহানগরে তাপমাত্রার পারদ নেমে আসায় কমেছে মানুষের আনাগোনা। ঘন কুয়াশার কারণে নৌচলাচলেও ঘটছে বিঘ্ন। সড়কে হেডলাইট জ্বালালিয়ে চলছে গাড়ি। হাসপাতালগুলোতেও বেড়েছে শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডার রোগী। সব মিলিয়ে শীতের দাপটে জবুথবু হয়ে পড়ে সারাদেশ। আবহাওয়াবিদরা বলেন, তীব্র কুয়াশায় শীতের অনুভূতি বাড়িয়েছে। শীতের এই প্রভাব আগামী ২-৩ দিন পর্যন্ত থাকবে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে দেশের কোথাও কোথাও শৈত্যপ্রবাহ দেখা যাবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা জনকণ্ঠকে জানান, তাপামাত্রা খুব বেশি কমেনি। কিন্তু শীতের অনুভূতিটা অনেক বেশি। এর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা  নেই। এ ছাড়া সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে এসেছে। এসব কারণে শীতের দাপট বেড়েছে, যা আরও কিছুদিন চলবে।

বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গোপালগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কর্মচাঞ্চল্য কম দেখা গেছে। শীতের প্রকোপে সড়কেও মানুষের উপস্থিতি ছিল কম। হঠাৎ তাপমাত্রা কমে আসায় মানুষ গরম কাপড় পরে বাসা থেকে বের হয়েছেন। চায়ের দোকানগুলোতে শীত নিবারণের জন্য মানুষের উপস্থিতি ছিল অন্যদিনের চেয়ে বেশি। তবে বেলা ১২টার সময় সূর্য হাল্কা উঁকি দিলেও সারাদিনই প্রায় সূর্যের কিরণ দেখা যায়নি। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস হওয়ায় অনেকেই শীত উদযাপনে ঢাকা ছেড়েছেন। যে কারণে বাস টার্মিনালগুলোতেও মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সারাদেশে আগামী ২৪ ঘণ্টায় রাত ও দিনের তাপমাত্রা কমতে পারে। এ ছাড়া কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশার সঙ্গে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলামের সই করা ওই বার্তায় জানানো হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিরাজমান লঘুচাপটি বর্তমানে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এই অবস্থায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-উত্তর পূর্বাংশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশার দেখা মিলতে পারে। এ অবস্থায় সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা কমতে পারে। এ ছাড়া পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টাতেও তাপমাত্রা কমার ধারা অব্যাহত থাকার আভাস মিলেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-উত্তর পূর্বাংশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
চুয়াডাঙ্গা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় প্রচন্ড শীতে চুয়াডাঙ্গা জেলা থমকে  গেছে। শীত ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় জেলার মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। স্বাভাবিক কর্মজীবনে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। গত ১৯ নভেম্বর হতে এ  জেলায় তাপমাত্রা কমতে থাকে। গত এক সপ্তাহে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে  গেছে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, জেলায় সর্বনিঘ্ন তাপমাত্রা রেকর্ড  থাকায় প্রচন্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। শীত ও কুয়াশা কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। আসছে সপ্তাহ  থেকে শীতের প্রকোপ আরও  বেশি হবে বলে তিনি জানান।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস  রেকর্ড করা হয়। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। এর আগে  সকাল ছয়টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ওই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। গত ২৫ দিন ধরে জেলায় তাপমাত্রা কমছে। সকাল  থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকায় সূর্যের  দেখা মিলছে না। প্রত্যেক দিন রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমে হাঁড় কাঁপানো শীত অনূভূত হচ্ছে। এর ফলে জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়ছে।  বৈরী আবহাওয়ার কারণে সকাল  থেকেই যানবাহন চলাচল কম করছে। টানা কয়েক দিরে শীতের কারনে উপার্জন করতে না পারায় মানুষ তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকটা না  খেয়ে দিন যাপন করছেন।
চুয়াডাঙ্গা  জেলা প্রশাসক  মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান,  জেলা পরিষদ ও এনজিওদের কাছ  থেকে পাওয়া প্রায় ৭০০ কম্বল শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণের উদ্যোগ
নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চাহিদা পাঠানো হয়েছে  সেগুলো  পৌঁছলে বিতরণ করা হবে। আর শীতে কর্মহীন মানুষের খাবারের ব্যবস্থার জন্য চেষ্টা চালানো হবে।
মানিকগঞ্জ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা শিবালয় থেকে জানান, গত কয়েক দিন যাবৎ শীতের তীব্রতার সঙ্গে রাত ও ভোরে বাড়ছে কুয়াশা। কুয়াশার তীব্রতায় নৌপথ আছন্ন হয়ে পড়ায় প্রায়শই বন্ধ হচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট রুটের নৌযান চলাচল। সড়ক পথেও হেডলাইট জ্বালিয় চলছে নানা ধরনের যানবাহন। এতে যোগাযাগ ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
জানা গেছে, গত কয়েক দিনের ন্যায় বুধবার রাতের ঘনকুয়াশায় পাটুরিয়া ও আরিচা রুটের মার্কিং পয়েন্ট ঢেকে যাওয়ায় মধ্য রাত থেকে বন্ধ রাখা হয় ফেরি চলাচল। পাটুরিয়া রুটের মাঝ পদ্মায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে যানবাহন বোঝাই দুটি ফেরি। উভয় রুটের বাকি ফেরিগুলো নোঙ্গর করে ঘাটের পন্টুনে। দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় পারের অপেক্ষায় উভয় ঘাটে আটকে পড়ে অসংখ্য যানবাহন। শীতের তীব্রতায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় আটকে পড়া যানবাহন শ্রমিক ও ঘাট সংশ্লিষ্টরা।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম নাসির আহম্মেদ জনকন্ঠকে জানান, গত কয়েক দিনের ন্যায় বুধবার রাত সাড়ে ১১টার পর নদীতে কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে চ্যানেলে স্থাপিত মার্কিং পয়েন্ট অস্পষ্ট হয়ে যায়। এমতাবস্থায় নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়। এরই মধ্যে পাটুরিয়া রুটের পদ্মার মাঝে আটকে পড়ে শাহ-পরান ও এনায়েতপুরী নামে দুটি রো-রো ফেরি। সকাল ১০টার পর কুয়াশার ঘনত্ব কমে এলে পুনরায় উভয় রুটের ফেরি সার্ভিস চালু হয়। দীর্ঘ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় উভয় ঘাটে পারের অপেক্ষায় আটকে পড়া যানবাহনগুলো সিরিয়াল অনুযায়ী পারাপার করা হয়। অপরদিকে, কুয়াশার তীব্রতায় মাহাসড়কেও স্বাভাবিক যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ লিঙ্ক রোডেও দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
সুত্র জানায়, কুয়াশার মধ্যে স্বাভাবিক পথ চলার জন্য পাটুরিয়া ও আরিচা নৌপথের বেশ কয়েকটি ফেরিতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ফগ লাইট’ স্থাপন করা হয়।  এতে সরকারের মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় হলেও তা কোনো কাজেই আসেনি।
শেরপুর ॥ সংবাদদাতা নালিতাবাড়ী থেকে জানান, নালিতাবাড়ীতে বেড়ে চলেছে শীতের তীব্রতা। শীতে কাঁপছে ভারত সীমান্তঘেঁষা জেলার গারো পাহাড়ি জনপদের মানুষ।  জেঁকে বসা শীতে কষ্ট বেড়েছে দরিদ্র ও নিম্ন-আয়ের মানুষের। বিশেষ করে করে গারো পাহাড়ের ঢালে, অভ্যন্তরে ও পাদদেশে বসবাসকারী মুসলিম সম্প্রদায়সহ উপজাতি গারো ও কোচ সম্প্রদায়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে দ্বিগুণ। হিমেল ঠান্ডা শীতের মাঝে কাজে যোগ দিতে পারছে না অনেক শ্রমিক। হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়া শীতার্তরা ভিড় করছেন পুরাতন শীত নিবারনের কাপড়ের দোকানে। এদিকে, শীতের পাশাপাশি চলছে  বোরো আবাদের বীজতলা  তৈরির কাজ। টানা শীত আর মৃদু  শৈত্য প্রবাহ অব্যাহত থাকলে আসন্ন বোরো আবাদের বীজতলার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষকরা জানান।
উত্তরে ভারতের  মেঘালয় রাজ্যের হিমালয় পর্বতের হিমবায়ু আর ঘন কুয়াশায় এখন এলাকায়  জেঁকে বসেছে প্রচ- শীত। এতে  খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষগুলো প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে পড়েছেন।
গারো আদিবাসী নেতা ও সাবেক ট্রাইবাল  চেয়ারম্যান লুইস  নেংমিনজা জানান, পাহাড়ি এলাকায় দিন দিন শীত বাড়ছে। প্রচ- শীতের কারণে সীমান্ত এলাকার গারো আদিবাসীরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। প্রতিবছর এভাবেই শীতের সঙ্গে লড়াই করে তাদের  বেঁচে থাকতে হয়। এসব অঞ্চলের শীতার্ত মানুষ পাহাড়  থেকে লাকড়ি ও খরকুটা সংগ্রহ করে আগুন দিয়ে তা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের  চেষ্টা করছেন।
আন্ধারুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শাহজামাল বলেন, ভেতর এলাকার চেয়ে সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় শীত পড়েছে বেশি। সেই হিসেবে এই এলাকার গরীব দরিদ্র অসহায় মানুষ তেমন শীতবস্ত্র পায় না। তাই পাহাড়ি এলাকায় বেশি পরিমান শীতবস্ত্র বিতরণ করা প্রয়োজন। সীমান্তবর্তী পোড়াগাঁও ইউনিয়নের পাহাড়ি খলচান্দা গ্রামের বাসিন্দা কোচ আদিবাসী পরিমল কোচ বলেন, সমতলের চেয়ে গারো পাহাড়ে শীত পড়েছে বেশি। বেলা ৯/১০টার আগে সুর্যের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে রাত জেগে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছে মানুষ।
এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা জানান, সরকারিভাবে এ উপজেলায় শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শীঘ্রই শীতার্ত মানুষের মাঝে এই কম্বল বিতরন করা হবে।
নাটোর ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা লালপুর থেকে জানান, অগ্রহায়ণের শেষে আর পৌষ মাসের আগমনে বাড়তে শুরু করেছে শীতের তীব্রতা। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশায় শীতের অনুভূতি বেড়ে গেছে। ফলে শীতজনিত কারণে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ সর্দিকাশি জ¦র, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বেসরকারি হাসপাতালে রোগী বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে ছোটবড় যানবহন চলাচলে বিষ্ন ঘটছে। এছাড়া নিম্ন-আয়ের মানুষেরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এতে পদ্মাপাড়ের মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে শীতবস্ত্র এখন পর্যন্ত মেলেনি এই অঞ্চলের মানুষের।
পদ্মা নদীর তীরবর্তী তিলকপুর গ্রামের বৃদ্ধ নুরজাহান বেগম বলেন, খুব ঠান্ডা লাগছে। কিন্তু অর্থের অভাবে একটি কম্বল কিনতে পারচ্ছি না। বিষ্টপুর গ্রামের গৃহিণী ছফুরা বেগম বলেন, শীতবস্ত্র তেমন না থাকায় ঠান্ডাতে রাতে ঘুমাতে পারচ্ছি না। বাওড়া গ্রামের অটোভ্যান চালক আলতাফ হোসেন বলেন, শীতের কারণে যাত্রী কমে গেছে।
বাওড়া পূর্বপাড়া গ্রামের মহিষের গাড়ির গাড়োয়ান বাচ্চু বলেন, সুগার মিলে ভোরে আখ বোঝাই গাড়ি নেওয়ার সময় ঘন কুয়াশা আর প্রচন্ড শীতে খুবই সমস্যায় পড়তে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাহাবুদ্দিন বলেন, শীতজনিত কারণে শ^াসকষ্ট ও ডায়রিয়ার রোগী বেড়ে গেছে। ইউএনও মো. মেহেদী হাসান বলেন, সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের। তিনি আরও বলেন, সরকার থেকে অসহায় ও  দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ হঠাৎ করেই দেশের আকাশ থেকে যেন সূর্য উধাও। ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় সারাদেশ। এর সঙ্গে বইছে কনকনে ঠান্ডা হিমেল হাওয়া। তীব্র ঠান্ডায় ঘর থেকেও বের হওয়া দায়। নগর-মহানগরে তাপমাত্রার পারদ নেমে আসায় কমেছে মানুষের আনাগোনা। ঘন কুয়াশার কারণে নৌচলাচলেও ঘটছে বিঘ্ন। সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। হাসপাতালগুলোতেও বেড়েছে শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডার রোগী। সব মিলিয়ে শীতের দাপটে জবুথবু হয়ে পড়ে সারাদেশ। আবহাওয়াবিদরা বলেন, তীব্র কুয়াশায় শীতের অনুভূতি বাড়িয়েছে। শীতের এই প্রভাব আগামী ২-৩ দিন পর্যন্ত থাকবে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে দেশের কোথাও কোথাও শৈত্যপ্রবাহ দেখা যাবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা জনকণ্ঠকে জানান, তাপামাত্রা খুব বেশি কমেনি। কিন্তু শীতের অনুভূতিটা অনেক বেশি। এর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা  নেই। এ ছাড়া সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে এসেছে। এসব কারণে শীতের দাপট বেড়েছে, যা আরও কিছুদিন চলবে।

বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গোপালগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কর্মচাঞ্চল্য কম দেখা গেছে। শীতের প্রকোপে সড়কেও মানুষের উপস্থিতি ছিল কম। হঠাৎ তাপমাত্রা কমে আসায় মানুষ গরম কাপড় পরে বাসা থেকে বের হয়েছেন। চায়ের দোকানগুলোতে শীত নিবারণের জন্য মানুষের উপস্থিতি ছিল অন্যদিনের চেয়ে বেশি। তবে বেলা ১২টার সময় সূর্য হাল্কা উঁকি দিলেও সারাদিনই প্রায় সূর্যের কিরণ দেখা যায়নি। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস হওয়ায় অনেকেই শীত উদযাপনে ঢাকা ছেড়েছেন। যে কারণে বাস টার্মিনালগুলোতেও মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সারাদেশে আগামী ২৪ ঘণ্টায় রাত ও দিনের তাপমাত্রা কমতে পারে। এ ছাড়া কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশার সঙ্গে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলামের সই করা ওই বার্তায় জানানো হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিরাজমান লঘুচাপটি বর্তমানে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এই অবস্থায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-উত্তর পূর্বাংশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশার দেখা মিলতে পারে। এ অবস্থায় সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা কমতে পারে। এ ছাড়া পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টাতেও তাপমাত্রা কমার ধারা অব্যাহত থাকার আভাস মিলেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-উত্তর পূর্বাংশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
চুয়াডাঙ্গা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় প্রচ- শীতে চুয়াডাঙ্গা জেলা থমকে  গেছে। শীত ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় জেলার মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। স্বাভাবিক কর্মজীবনে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। গত ১৯ নভেম্বর হতে এ  জেলায় তাপমাত্রা কমতে থাকে। গত এক সপ্তাহে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে  গেছে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড  থাকায় প্রচন্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। শীত ও কুয়াশা কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। আসছে সপ্তাহ  থেকে শীতের প্রকোপ আরও  বেশি হবে বলে তিনি জানান।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস  রেকর্ড করা হয়। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। এর আগে  সকাল ছয়টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ওই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। গত ২৫ দিন ধরে জেলায় তাপমাত্রা কমছে। সকাল  থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকায় সূর্যের  দেখা মিলছে না। প্রত্যেক দিন রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমে হাঁড় কাঁপানো শীত অনূভূত হচ্ছে। এর ফলে জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়ছে।  বৈরী আবহাওয়ার কারণে সকাল  থেকেই যানবাহন চলাচল কম করছে। টানা কয়েক দিরে শীতের কারনে উপার্জন করতে না পারায় মানুষ তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকটা না  খেয়ে দিন যাপন করছেন।
চুয়াডাঙ্গা  জেলা প্রশাসক  মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান,  জেলা পরিষদ ও এনজিওদের কাছ  থেকে পাওয়া প্রায় ৭০০ কম্বল শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণের উদ্যোগ
নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চাহিদা পাঠানো হয়েছে  সেগুলো  পৌঁছলে বিতরণ করা হবে। আর শীতে কর্মহীন মানুষের খাবারের ব্যবস্থার জন্য চেষ্টা চালানো হবে।
মানিকগঞ্জ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা শিবালয় থেকে জানান, গত কয়েক দিন যাবৎ শীতের তীব্রতার সঙ্গে রাত ও ভোরে বাড়ছে কুয়াশা। কুয়াশার তীব্রতায় নৌপথ আছন্ন হয়ে পড়ায় প্রায়শই বন্ধ হচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট রুটের নৌযান চলাচল। সড়ক পথেও হেডলাইট জ্বালিয় চলছে নানা ধরনের যানবাহন। এতে যোগাযাগ ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
জানা গেছে, গত কয়েক দিনের ন্যায় বুধবার রাতের ঘনকুয়াশায় পাটুরিয়া ও আরিচা রুটের মার্কিং পয়েন্ট ঢেকে যাওয়ায় মধ্য রাত থেকে বন্ধ রাখা হয় ফেরি চলাচল। পাটুরিয়া রুটের মাঝ পদ্মায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে যানবাহন বোঝাই দুটি ফেরি। উভয় রুটের বাকি ফেরিগুলো নোঙ্গর করে ঘাটের পন্টুনে। দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় পারের অপেক্ষায় উভয় ঘাটে আটকে পড়ে অসংখ্য যানবাহন। শীতের তীব্রতায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় আটকে পড়া যানবাহন শ্রমিক ও ঘাট সংশ্লিষ্টরা।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম নাসির আহম্মেদ জনকন্ঠকে জানান, গত কয়েক দিনের ন্যায় বুধবার রাত সাড়ে ১১টার পর নদীতে কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে চ্যানেলে স্থাপিত মার্কিং পয়েন্ট অস্পষ্ট হয়ে যায়। এমতাবস্থায় নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়। এরই মধ্যে পাটুরিয়া রুটের পদ্মার মাঝে আটকে পড়ে শাহ-পরান ও এনায়েতপুরী নামে দুটি রো-রো ফেরি। সকাল ১০টার পর কুয়াশার ঘনত্ব কমে এলে পুনরায় উভয় রুটের ফেরি সার্ভিস চালু হয়। দীর্ঘ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় উভয় ঘাটে পারের অপেক্ষায় আটকে পড়া যানবাহনগুলো সিরিয়াল অনুযায়ী পারাপার করা হয়। অপরদিকে, কুয়াশার তীব্রতায় মাহাসড়কেও স্বাভাবিক যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ লিঙ্ক রোডেও দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
সুত্র জানায়, কুয়াশার মধ্যে স্বাভাবিক পথ চলার জন্য পাটুরিয়া ও আরিচা নৌপথের বেশ কয়েকটি ফেরিতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ফগ লাইট’ স্থাপন করা হয়।  এতে সরকারের মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় হলেও তা কোনো কাজেই আসেনি।
শেরপুর ॥ সংবাদদাতা নালিতাবাড়ী থেকে জানান, নালিতাবাড়ীতে বেড়ে চলেছে শীতের তীব্রতা। শীতে কাঁপছে ভারত সীমান্তঘেঁষা জেলার গারো পাহাড়ি জনপদের মানুষ।  জেঁকে বসা শীতে কষ্ট বেড়েছে দরিদ্র ও নিম্ন-আয়ের মানুষের। বিশেষ করে করে গারো পাহাড়ের ঢালে, অভ্যন্তরে ও পাদদেশে বসবাসকারী মুসলিম সম্প্রদায়সহ উপজাতি গারো ও কোচ সম্প্রদায়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে দ্বিগুণ। হিমেল ঠান্ডা শীতের মাঝে কাজে যোগ দিতে পারছে না অনেক শ্রমিক। হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়া শীতার্তরা ভিড় করছেন পুরাতন শীত নিবারনের কাপড়ের দোকানে। এদিকে, শীতের পাশাপাশি চলছে  বোরো আবাদের বীজতলা  তৈরির কাজ। টানা শীত আর মৃদু  শৈত্য প্রবাহ অব্যাহত থাকলে আসন্ন বোরো আবাদের বীজতলার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষকরা জানান।
উত্তরে ভারতের  মেঘালয় রাজ্যের হিমালয় পর্বতের হিমবায়ু আর ঘন কুয়াশায় এখন এলাকায়  জেঁকে বসেছে প্রচন্ড শীত। এতে  খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষগুলো প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে পড়েছেন।
গারো আদিবাসী নেতা ও সাবেক ট্রাইবাল  চেয়ারম্যান লুইস  নেংমিনজা জানান, পাহাড়ি এলাকায় দিন দিন শীত বাড়ছে। প্রচন্ড শীতের কারণে সীমান্ত এলাকার গারো আদিবাসীরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। প্রতিবছর এভাবেই শীতের সঙ্গে লড়াই করে তাদের  বেঁচে থাকতে হয়। এসব অঞ্চলের শীতার্ত মানুষ পাহাড়  থেকে লাকড়ি ও খরকুটা সংগ্রহ করে আগুন দিয়ে তা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের  চেষ্টা করছেন।
আন্ধারুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শাহজামাল বলেন, ভেতর এলাকার চেয়ে সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় শীত পড়েছে বেশি। সেই হিসেবে এই এলাকার গরীব দরিদ্র অসহায় মানুষ তেমন শীতবস্ত্র পায় না। তাই পাহাড়ি এলাকায় বেশি পরিমান শীতবস্ত্র বিতরণ করা প্রয়োজন। সীমান্তবর্তী পোড়াগাঁও ইউনিয়নের পাহাড়ি খলচান্দা গ্রামের বাসিন্দা কোচ আদিবাসী পরিমল কোচ বলেন, সমতলের চেয়ে গারো পাহাড়ে শীত পড়েছে বেশি। বেলা ৯/১০টার আগে সুর্যের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে রাত জেগে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছে মানুষ।
এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা জানান, সরকারিভাবে এ উপজেলায় শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শীঘ্রই শীতার্ত মানুষের মাঝে এই কম্বল বিতরন করা হবে।
নাটোর ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা লালপুর থেকে জানান, অগ্রহায়ণের শেষে আর পৌষ মাসের আগমনে বাড়তে শুরু করেছে শীতের তীব্রতা। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশায় শীতের অনুভূতি বেড়ে গেছে। ফলে শীতজনিত কারণে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ সর্দিকাশি জ¦র, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বেসরকারি হাসপাতালে রোগী বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে ছোটবড় যানবহন চলাচলে বি ঘটছে। এছাড়া নিম্ন-আয়ের মানুষেরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এতে পদ্মাপাড়ের মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে শীতবস্ত্র এখন পর্যন্ত মেলেনি এই অঞ্চলের মানুষের।
পদ্মা নদীর তীরবর্তী তিলকপুর গ্রামের বৃদ্ধ নুরজাহান বেগম বলেন, খুব ঠান্ডা লাগছে। কিন্তু অর্থের অভাবে একটি কম্বল কিনতে পারচ্ছি না। বিষ্টপুর গ্রামের গৃহিণী ছফুরা বেগম বলেন, শীতবস্ত্র তেমন না থাকায় ঠান্ডাতে রাতে ঘুমাতে পারচ্ছি না। বাওড়া গ্রামের অটোভ্যান চালক আলতাফ হোসেন বলেন, শীতের কারণে যাত্রী কমে গেছে।
বাওড়া পূর্বপাড়া গ্রামের মহিষের গাড়ির গাড়োয়ান বাচ্চু বলেন, সুগার মিলে ভোরে আখ বোঝাই গাড়ি নেওয়ার সময় ঘন কুয়াশা আর প্রচন্ড শীতে খুবই সমস্যায় পড়তে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাহাবুদ্দিন বলেন, শীতজনিত কারণে শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ার রোগী বেড়ে গেছে। ইউএনও মো. মেহেদী হাসান বলেন, সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের। তিনি আরও বলেন, সরকার থেকে অসহায় ও  দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।

×