ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেশষ্টা 

নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো তালিকা করা হবে না

প্রকাশিত: ১৮:৫৪, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো তালিকা করা হবে না

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম। 

নতুন করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো তালিকা করা হবে না। যে তালিকা আছে সেটি যাচাই বাছাই করে একটি ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম। 

বুধবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা চাই যারা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা, কোনোভাবে যাতে তাঁদের মর্যাদা নষ্ট না হয়। সেটা অক্ষুণœ রেখেই বাকি কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এটা আমাদের জন্য দুরুহ কাজ। প্রচেষ্টা রাখছি, আশা করছি, এক্ষেত্রেও সফলতা আসবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা কী হওয়া উচিত সে বিষয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা। যুদ্ধে সরাসরি অংশ না নিয়েও যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন তাদের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ব্যাপকভাবে যাঁরা রণাঙ্গণে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন তাঁদের প্রবল আপত্তি আছে সবাইকে মুক্তিযোদ্ধা করার ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার যে সূত্র সে সূত্রে পরিবর্তন আনা দরকার। আইন সংশোধনের প্রয়োজন আছে। উপদেষ্টা কাউন্সিলে বিষয়টি উপস্থাপিত হবে। আইন সংশোধনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান তিনি। 

সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর অবদান স্মরণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের আলোচিত প্রকল্পটি এই ডিসেম্বরেই শেষ হবে বলে জানানো হয়। লিখিত বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের ৩ হাজার ৬৩০ জন কর্মকর্তা ও জোয়ান তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আহত হয়েছিলেন প্রায় ৯ হাজার ৮৫৬ জন। ২১৩ জনের বেশি নিখোঁজ ছিলেন। ১ হাজার ৬৭৭ জন ভারতীয় সেনা শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে শহীদ হয়েছিলেন। তাঁদের বেশিরভাগই আশুগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। মিত্রবাহিনীর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরনীয় করে রাখতে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পাশে প্রায় ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ চলমান আছে। এই কাজ বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই শেষ হবে।    

বিগত সময়ে অনেক প্রতারক দুর্নীতিবাজ মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বাগিয়ে নিয়েছেন। এদের ব্যাপারে কী ভাবা হচ্ছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, আমরা একটা ইনডেমনিটিও হয়তো দেবো, যারা অমুক্তিযোদ্ধা, এভাবে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে এসেছেন, তারা যাতে স্বেচ্ছায় এখান থেকে চলে যান। যদি যান, তারা হয়তো তখন সাধারণ ক্ষমাও  পেতে পারেন। আর যদি সেটা না হয়, আমরা যেটা বলেছি, প্রতারণার দায়ে আমরা তাদের অভিযুক্ত করবো। 

তিনি বলেন, বহু অভিযোগ আছে যে, মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও অনেকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তালিকাভুক্ত হয়েছেন, গেজেটভুক্ত হয়েছেন এবং সুবিধাদি গ্রহণ করছেন। আমার দৃষ্টিতে এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা। এটা ছোটখাটো অপরাধ নয়, অনেক বড় অপরাধ।

তিনি জানান, ১২ বছর ছয় মাস বয়সী ২ হাজার ১১১ জন মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করার পর এ বিষয়ে আদালতে মামলা চলছে। উপদেষ্টা বলেন, আদালতের কাছ থেকে যখন এই বিষয়টি নির্ণীত হবে, তখন তাদের সনদও বাতিল করা হবে। এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সাজার জন্য আমরা ব্যবস্থা করবো। এরা যাতে শাস্তি ভোগ করে। অন্য যেসব মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অমুক্তিযোদ্ধারা তালিকাভুক্ত হয়েছেন, আমরা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্ট করতে পারলে, তাদের ক্ষেত্রেও একই রকমের ঘটনা ও বিষয় হবে। 

উপদেষ্টা বলেন, আমাদের নীল, তালিকা, লাল তালিকা, ভারতীয় তালিকা- অনেকগুলো তালিকা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অনুরাগের বশে বা কারও আত্মীয়তার বশে বা অন্য কোনও প্রলোভনে এখানে বহু মানুষকে মুক্তিযোদ্ধা করা হয়েছে। তবে তাদের চিহ্নিত করতে একটু সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।

রাজাকারদের একটি তালিকা তৈরিরও কাজ করছিল আগের সরকার। সে তালিকার কাজ অব্যাহত থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজারদের তালিকা মুক্তযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। তিনি বা সচিব মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার পর এ রকম কোনো ফাইল পাননি। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধদের তালিকা করা অসম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

                  
 

আর কে

×