ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

৮ মাসে ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ ১৯

অনলাইন রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪

৮ মাসে ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ ১৯

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে স্বজনদের আহাজারি ।

ভাগ্যবদলের স্বপ্ন নিয়ে অবৈধভাবে ইতালি পাড়ি জমাচ্ছেন শরীয়তপুরের শত শত যুবক। শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নে দালাল চক্রের মাধ্যমে অবৈধ পথে ইতালি পাড়ি দিতে গিয়ে আট মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন ১৯ যুবক।

ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, ইতালি যাওয়ার কথা বলে তাদের লিবিয়া নিয়ে আটক করে চালানো হয় নির্যাতন। স্বজনদের ভয়ভীতির ভিডিও দেখিয়ে আদায় করা হয় মুক্তিপণের টাকা। তবে তাতেও মুক্তি মেলেনি শরীয়তপুরের ভাগ্যাহত এসব যুবকের। এদিকে টাকা নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে দালাল চক্রের সদস্যরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ দরিচর দাদপুর গ্রামের হাতেম শেখের ছেলে জাফর শেখ, চর নিয়ামতপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান খানের ছেলে আতিকুর রহমান, একই গ্রামের ছলিম জমাদ্দারের ছেলে রাশিদুল, বোরহান মৃধার ছেলে সিরাজ, চর চটাং গ্রামের জাহাঙ্গীর মোড়লের ছেলে রফিক মোড়ল, একই গ্রামের ইকবাল কাজীর ছেলে শামীম কাজী, আব্দুল মান্নান ওঝাঁর ছেলে মিরাজ ওঝাঁ, দক্ষিণ ভাষাণচর গ্রামের সালাম আকনের ছেলে দিদার হোসাইন আকন, একই গ্রামের ইদ্রিস আলী খাঁর ছেলে আমিনুল ইসলাম, সুফিয়ার সরদারের ছেলে ফারুক সরদার, দক্ষিণ-মধ্যপাড়া গ্রামের চুন্নু ভূঁইয়ার ছেলে আল আমীন ভূঁইয়া, কদমতলী গ্রামের সালমান সিকদারের ছেলে শাহীন সিকদারসহ ১৯ জন যুবক অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার সময় গত ২২ মার্চ থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। 

 প্রিয়জন ও সন্তানদের খোঁজ না পেয়ে এসব যুবকের বাড়িতে এখনও চলছে শোকের মাতম। এ বাড়ি থেকে ও বাড়িতে চলছে কান্নার রোল। ভাগ্যবদলের আশায় দালালদের দেখানো পথে ইতালির উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন তারা। 

ভুক্তভোগী ইদ্রিস আলী খাঁ বলেন, লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁচ্ছে দেওয়ার কথা বলে ১২ থেকে ১৮ লাখ করে টাকা হাতিয়ে নেন একই এলাকার স্থানীয় দালাল রাশেদ খান ও টুন্নু খান। লিবিয়ায় যাওয়ার পর ওই যুবকরা আটক হন মাফিয়া চক্রের হাতে। লিবিয়ায় জিম্মি করে প্রত্যেকের কাছ থেকে মুক্তিপণের জন্য আরও ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা করে আদায় করে দালাল চক্রটি। এরপর গত ২২ মার্চ থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তারা। আজ পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি। 

এদিকে নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে, মুক্তিপণের টাকা আদায়ের পর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন দালাল চক্রের সদস্য রাশেদ ও টুন্নু খান। নিখোঁজদের লিবিয়া পাঠানোর কথা স্বীকার করেছেন দালাল চক্রের পরিবারের এক সদস্য। মানব পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিখোঁজদের সন্ধান পেতে প্রবাসী কল্যাণ, বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও সেনাক্যাম্পে লিখিত আবেদন করেছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

অভিযুক্ত দালাল রাশেদ খান ও টুন্নু খান এলাকা থেকে পালিয়ে থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই জেলা পুলিশের কাছে। শরীয়তপুর পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি। তবে অভিযোগ পেলে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে লিবিয়ায় জিম্মিদশা থেকে স্বজনদের ফিরে পাওয়ার দাবি জানিয়েছে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের ২৪ ভুক্তভোগীর পরিবার। গতকাল রবিবার দুপুরে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। 

মানববন্ধনে ভুক্তভোগীর পরিবারগুলো জানায়, পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে গত মার্চ মাসে দালালের মাধ্যমে ইতালির উদ্দেশে পাড়ি জমায় শরীয়তপুরের ১৯ জন ও মাদারীপুরের ৫ জন। পরে তাদের ইতালি পৌঁছানোর কথা বলে লিবিয়ায় মাফিয়া চক্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাদের জিম্মি করে নির্যাতন করে ভিডিও পাঠিয়ে বেশ কয়েক দফায় লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। এরপরও তাদের মুক্তি দেওয়া হয়নি।

এ ঘটনায় মামলা দায়ের করলে উল্টো ভুক্তভোগী পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। দ্রুত মানব পাচারকারীদের জিম্মিদশা থেকে স্বজনদের মুক্তি ও টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছেন তারা।

ভুক্তভোগী শাজাহান হাওলাদারের মা মেহেরজান বলেন, আমার সন্তান বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে কিছুই জানি না। দালাল মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে আমার সন্তানকে লিবিয়ায় আটকে রেখেছে। ভিটা বাড়ি ও জমিজমা বিক্রি করে তাদের টাকা দিয়েছি, কিন্তু এরপরও তারা আমার সন্তানকে ছাড়েনি।

ভুক্তভোগীর বাবা চুন্নু ভূঁইয়া বলেন, তারা কয়েক দফায় ২৮ লাখ টাকা নিয়েছে। আমি সহায়-সম্বল বিক্রি করে তাদের হাতে টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখনও জানি না আমার ছেলে লিবিয়ায় কী অবস্থায় আছে। দালালদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি। আমি আমার ছেলেকে ফেরত চাই আর দালালদের বিচার চাই।

এ ব্যাপারে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, মামলার বিষয়টি শুনেছি। কোর্টের মাধ্যমে মামলাগুলো হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শহীদ

×