ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

‘ভয়েস অব আমেরিকা’র জরিপ

দেশ হিসেবে ভারতকে ‘অপছন্দ’ করেন ৪১.৩ শতাংশ বাংলাদেশী 

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:২২, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

দেশ হিসেবে ভারতকে ‘অপছন্দ’ করেন ৪১.৩ শতাংশ বাংলাদেশী 

.

‘ভয়েস অব আমেরিকা’র বাংলাদেশের এক হাজার মানুষের ওপর চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের ৫৯ শতাংশ পাকিস্তানকে ‘পছন্দ’ করেন। অন্যদিকে, ভারতকে ‘পছন্দ’ করেন ৫৩.৬ শতাংশ মানুষ। জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৪১.৩ শতাংশ মানুষ দেশ হিসেবে ভারতকে অপছন্দ করেন। অন্যদিকে ২৮.৫ শতাংশ পাকিস্তানকে ‘অপছন্দ’ করে মত দেন। এছাড়া প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশীদের সবচেয়ে ‘অপছন্দ’ হচ্ছে মিয়ানমার। উত্তরদাতারা মিয়ানমারকে ‘অপছন্দ’ স্কেলে ৫৯.১ শতাংশ এবং ‘পছন্দ’ স্কেলে ২৪.৫ শতাংশ রায় দেন।  অন্যান্য বাছাই করা দেশের মধ্যে, ‘পছন্দ’ স্কেলে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি ভোট পায় (৬৮.৪ শতাংশ), যদিও চীন (৬৬ শতাংশ), রাশিয়া (৬৪ শতাংশ) এবং যুক্তরাজ্য (৬২.৭ শতাংশ) বেশি দূরে ছিল না।
জরিপে আরও দেখা গেছে, বাংলাদেশে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে। দেশের মানুষ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী দেশ সম্পর্কেও ভালো ধারণা পোষণ করেন। জরিপে এক হাজার উত্তরদাতাকে কয়েকটি নির্দিষ্ট দেশকে ১ থেকে ৫ স্কেলে ‘ভোট’ দিয়ে তাদের মতামত জানাতে বলা হয়। স্কেলের ১ এবং ২ মিলে হয় ‘পছন্দ’ আর ৪ এবং ৫ মিলে ‘অপছন্দ।’ উত্তরদাতাদের ৫৯ শতাংশ পাকিস্তানকে ‘পছন্দ’ স্কেলে বাছাই করেন। অন্যদিকে, ভারতের ‘পছন্দ’ স্কোর ছিল ৫৩.৬ শতাংশ। তবে দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই চরম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুটোর মধ্যে ‘অপছন্দ’ স্কেলে বেশ বড় ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়।
জরিপটি ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার এডিটোরিয়াল নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করে গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড। ভয়েস অব আমেরিকার ঠিক করে দেওয়া সুনির্দিষ্ট (ক্লোজ এন্ড) প্রশ্নমালার ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড টেলিফোন ইন্টারভিউইংয়ের মাধ্যমে দেশের আটটি বিভাগে ১৮ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সী এক হাজার মানুষের মধ্যে জরিপটি পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের জনতত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জরিপের এক হাজার উত্তরদাতা বাছাই করা হয়। সেখানে সমানসংখ্যার নারী এবং পুরুষ ছিলেন, যাদের মধ্যে ৯২.৭ শতাংশ ছিলেন মুসলিম।
ভারত এবং পাকিস্তান সম্পর্কে জরিপে প্রকাশিত মতামতে ধর্মের ভিত্তিতে পার্থক্য দেখা যায়। মুসলিম উত্তরদাতাদের মধ্যে ৪৪.২ শতাংশ ভারতকে ‘অপছন্দ’ করে মত দেন। অন্যদিকে, অমুসলিম উত্তরদাতাদের মাত্র ৪.২ শতাংশ ভারতকে ‘অপছন্দ’ করেন।
সার্বিকভাবে, ভারত এবং পাকিস্তান ‘পছন্দ’ স্কেলে প্রায় সমান হলেও, ‘অপছন্দের’ স্কেলে ভারতের পাল্লা বেশি ভারি। এর কারণ হিসেবে অনেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকাকে দায়ী করেন। শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব বিভিন্ন গোষ্ঠীর কর্মসূচিতে প্রকাশ পাচ্ছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধান সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেছেন, দিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক এখন ‘নিম্ন পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে ভারত শুধু একটি দল, আওয়ামী লীগের ওপর নির্ভর করেছে।
 শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট থেকেই ভারতে আছেন এবং ভারত সরকার তার জন্য ভিআইপির মর্যাদা এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়টি বাংলাদেশের অনেকের কাছে ‘অবন্ধুসুলভ আচরণ’ বলেই মনে হয়। এছাড়াও সীমান্ত সংক্রান্ত যে বিষয় ভারতের প্রতি বাংলাদেশীদের মনে বড় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির করে, তা হলো সীমান্তে হত্যাকা-।
অপরদিকে, অন্তর্র্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ২ সেপ্টেম্বর জানান যে, তার দেশ ১২২ দেশের নাগরিকের জন্য ফি ছাড়া ভিসা দেবে এবং সেই তালিকায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

×