বাংলাদেশের জাহাজভাঙা শিল্পে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাপান
বাংলাদেশের জাহাজভাঙা শিল্পে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাপান। পাশাপাশি মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম যথাসময়ে শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি। বুধবার সচিবালয়ে নৌ পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এই আগ্রহের কথা জানান দেশটির রাষ্ট্রদূত। এ সময় জাপান দূতাবাস ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎকালে নৌ পরিবহন উপদেষ্টা বলেন, জাপান-বাংলাদেশ উভয় দেশই দীর্ঘদিন ধরে উষ্ণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে আসছে। জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। বাংলাদেশের একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর-মাতারবাড়ি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় নির্মিত হচ্ছে। কেবলমাত্র আঞ্চলিক সংযোগের মাধ্যম হিসেবেই নয়, কৌশলগত ও ভূ-রাজনৈতিকভাবে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মহাপরিকল্পনা (মাস্টার প্ল্যান) পুনর্গঠন করা হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম শুরু হবে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ বন্দর নির্মাণের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে তথা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। বন্দরটি নির্মাণের কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে চলমান রয়েছে। এ বন্দরটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হলে বন্দরের কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা ইস্যুটি বিবেচনা করতে হবে। এছাড়াও এখানে একটি আন্তর্জাতিক মানের ডক-ইয়ার্ড নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকার দেশের বন্দরগুলোর কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় ও গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জাইকার কারিগরি সহায়তা প্রত্যাশা করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, জাহাজভাঙা শিল্পের পরিবেশগত মান যাচাইয়ের লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন। এ কমিটি শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ডগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে সরকারকে সুপারিশ সহকারে প্রতিবেদন জমা দেবে। নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা বাংলাদেশের মেরিন একাডেমিগুলোর উন্নয়নে জাপান সরকারের পেশাগত ও কারিগরি সহযোগিতা কামনা করেন।
এ সময় জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ জাপানের বন্ধুরাষ্ট্র। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ ও অবকাঠামোসহ অন্যান্য বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়নে গত পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে জাপান বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। জাপানের স্বেচ্ছাসেবীরা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল অবধি বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দুই দেশের মধ্যে সত্যিকারের বন্ধুত্ব রয়েছে। তিনি বলেন, জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। জাইকা মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কার্যক্রমকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর। সকলের সহযোগিতায় যথাসময়ে বন্দরের কার্যক্রম শেষ হবে বলে রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন।