কারাগারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন কর্তৃপক্ষ
কারাগারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন কর্তৃপক্ষ। কেননা দেশে এ মুহূর্তে ৬৯টি কারাগারের মধ্যে ১৭টিই ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া কারাগারগুলোর ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার কারাবন্দি হলেও বিপরীতে বর্তমানে রয়েছে ৬৫ হাজার কারাবন্দি। এ সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে।
বুধবার কারা সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এতে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে মোট ৬৯টি কারাগার রয়েছে। এরমধ্যে ১৭টি কারাগার অনেক পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ। সরকার বিষয়টি জানে। এগুলো অতিদ্রুত সংস্কার, মেরামত ও পুনর্নির্মাণ দরকার। ৫ আগস্ট ও পরবর্তী সময়ে ২২ শতাধিক কারাবন্দি পালিয়েছিল। ১৫শ জনকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।
৭০০ বন্দি এখনো পলাতক। এ ছাড়া বিভিন্ন মামলায় দাগি আসামি বা যাদেরকে শীর্ষ সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে তাদের ১১ জন মুক্তি পেয়েছেন। যাদের জেএমবিসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলা হয়েছে তাদের ১৭৪ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। পালানো বিভিন্ন আলোচিত মামলা ও জঙ্গি সদস্যের মধ্যে এখনো পলাতক ৭০ জন। তাদের গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, কারা উপ-মহাপরিদর্শক মনির আহমেদ, সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. আবু তালেব, সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন ও মিডিযা) মো. জান্নাত উল ফরহাদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চারজন জেল সুপারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হযেেছ। এ ছাডা বিভিন্ন পর্যায়ে বেশকিছু অভিযোগের পর্যালোচনা ও তদন্ত চলছে। নির্দিষ্ট অভিযোগের তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষযটি প্রক্রিয়াধীন।
দর্শক বলেন, কোন মামলার কোন আসামি জামিন পাচ্ছেন তা আমরা জানানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা একটি ‘হটলাইন নম্বর’ চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সেটি চালু হলে জানতে সুবিধা হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন এক বন্দির ওপর হামলা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, যখন আমরা কোনো বন্দিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই, কারাগারের বাইরে হলেও সে যায়।
কিন্তু কারা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে বা আওতায়। কারণ সেখানে নিরাপত্তায় কারারক্ষী থাকেন। নিরাপত্তা দুর্বলতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দির ওপরে হামলার ঘটনাটি ঘটেছিল। তবে সেখানে কারারক্ষী ছিল ও তাদের হস্তক্ষেপের কারণেই ঘটনাটি বেশিদূর গড়াতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য আমরা একটি গুরত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সেটা হচ্ছে কারা হাসপাতাল। কারা হাসপাতালে কাজটি সম্পন্ন হলে কারাবন্দিদের আর সরকারি হাসপাতালে পাঠানোর প্রয়োজন হবে না, তখন নিরাপত্তাহীনতাও থাকবে না।
লোগো পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল সরকার আমাদেরকে কারা অধিদপ্তরের লোগো পরিবর্তনের পরামর্শ বা মতামত দেননি। আমরা গত ৫ আগস্টের পর বিপুল জনসাধারণের ফিডব্যাক পেয়েিেছ। সেটির মূল বিষয় ছিল কারা অধিদপ্তরের লোগো পরিবর্তনের বিষয। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে প্রতিটি কারাগারের ঘটনা পর্যালোচনা করেছি। আমাদের কারাগারের অবকাঠামোগত দুর্বলতা ছিল। আরেকটি বহির্নিরাপত্তা, যেটি পুলিশ সদস্যরা দিয়ে থাকেন। বহির্নিরাপত্তা অনুপস্থিতির কারণে আমরা কারাগার থেকে পালানো ঠেকাতে পারিনি। আমরা অভ্যন্তরীণ ও বহির্নিরাপত্তার কিছু দুর্বলতা শনাক্ত করেছি সেগুলো সরকারকে জানানো হয়েছে।
‘নরসিংদী জেলা কারাগারের জেল সুপারকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। ২০১ জন কারাগারে নিয়োজিত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হয়েছিলেন। তাদের অনেককেই আমরা সহযোগিতা করেছি।’
রাজনৈতিকভাবে যারা ডিভিশিন পাওয়ার উপযুক্ত তারা সবাই ডিভিশন পাচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক মোতাহের হোসেন বলেন, ডিভিশন পাওয়ার দুটি বিধান আছে। একটি হচ্ছে প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা, আরেকটি সমাজের গণমান্য ব্যক্তি মন্ত্রী-এমপিরা। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে হয। এটা তাদের এখতিযার। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তারা ডিভিশনের নির্দেশ দেন। অনেকে ডিভিশন পেযেেছন, অনেকের ডিভিশন পাওয়ার বিষযটি প্রক্রিয়াধীন।
চিকিৎসাধীন বন্দিদের নিরাপত্তা সম্পর্কে তিনি বলেন, কোনো সরকারি হাসপাতালে কিন্তু প্রিজন সেল নাই। এটা আমাদের দুর্বলতা। সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালে প্রিজন সেল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য সাধারণ রোগীর সঙ্গে বন্দিদের চিকিৎসা দিতে হয়। কারা হাসপাতাল হয়ে গেলে এ সমস্যা সমাধান হবে।
কারা কর্মচারীদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারা বিষয়টি তো সার্ভিস। সিভিল সার্ভিসের বিধানের আলোকে কারা কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু কারা অধিদপ্তরে কর্মরতদের কার্যক্রম পোশাকধারী ও অস্ত্রধারী দুটোই আছে। একই আইনের কারা অধিদপ্তর পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা মনে করছে। সেজন্য আমরা ভিন্ন আইনের কথা বলছি।