চাল, চিনি, ডাল ও সার কিনছে সরকার
প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে বিপুল পরিমাণ চাল, চিনি, ডাল ও সার কিনছে সরকার। এরমধ্যে দুই দেশের রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যেই ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি চাল আমদানি করা হবে। এর পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে আরও এক লাখ টন আতপ চাল আমদানি করবে সরকার। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৮৯৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
এই অর্থ ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এ ছাড়া টিসিবির জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে দেশের দুই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫ হাজার টন চিনি ও মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ হাজার টন চিনি এবং ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৫৫ কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টন চিনি কেনার প্রস্তাব নিয়ে আসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রস্তাব পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এই চিনি কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি কেজি চিনির দাম পড়বে ১১৮ টাকা ৪৩ পয়সা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে এই চিনি বিক্রি করা হবে।
সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে চট্টগ্রামের মেসার্স পায়েল ট্রেডার্স থেকে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রতি কেজির দাম পড়বে ৯৬ টাকা ৬৯ পয়সা। এই মসুর ডাল টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা হবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মিয়ানমার থেকে জিটুজি পর্যায়ে এক লাখ টন আতপ চাল আমদানির প্রস্তাব আনা হয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে। মিয়ানমার রাইচ ফেডারেশন এই চাল সরবরাহ করবে। প্রতি টন চালের দাম ধরা হয়েছে ৫১৫ মার্কিন ডলার। এই চাল আনতে মোট ব্যয় হবে ৬১৮ কোটি টাকা। সভায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পৃথক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ভারতের মেসার্স মন্ডল স্টোন প্রোডাক্ট প্রাইভেট লিমিটেড এই চাল সরবরাহ করবে। প্রতি টন চালের দাম ধরা হয়েছে ৪৬৭.৭০ মার্কিন ডলার। এতে মোট ব্যয় হবে ২৮০ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
এ ছাড়া ৩৩৯ কোটি টাকায় ৯০ হাজার টন সার কিনবে সরকার। দেশের কৃষিখাতে ব্যবহারের জন্য ৬০ হাজার টন ইউরিয়া এবং ৩০ হাজার টন রক ফসফেট আমদানি করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৩৩৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এই অর্থ ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
সাতক্ষীরা-ভেটখালী মহাসড়ক উন্নীতকরণ প্রস্তাবের পুনর্প্রক্রিয়াকরণ অনুমোদন ॥ দুইটি প্যাকেজে ‘সাতক্ষীরা-সখিপুর-কালীগঞ্জ এবং কালীগঞ্জ-শ্যামনগর-ভেটখালী মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ’-এর ক্রয় প্রস্তাব পুনর্প্রক্রিয়াকরণের (পুনঃ টেন্ডার) উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পৃথক দুইটি প্যাকেজে প্রকল্প দুইটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩১ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৮৬১ টাকা। বুধবার ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই দুইটি প্রস্তাবেরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ‘সাতক্ষীরা-সখিপুর-কালীগঞ্জ এবং কালীগঞ্জ-শ্যামনগর-ভেটখালী মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-০৪ এর পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবের পুনর্প্রক্রিয়াকরণ-এর প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২১ কোটি ৬৫ লাখ ৬০৯ টাকা। প্রকল্পটি একনেক ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পের পূর্ত কাজে ক্রয়ের জন্য এক ধাপ দুই খাম দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে দুইটি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে মাত্র একটি দরপ্রস্তাব রেসপনসিভ বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে দরপত্রটিতে একজন মাত্র দরপত্রদাতা রেসপনসিভ বিবেচিত হওয়ায় কার্যকর প্রতিযোগিতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। অধিক সংখ্যক দরদাতার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য টিইসি ও হোপ এর সুপারিশ বাতিল করে ক্রয় প্রস্তাবটির পুনর্প্রক্রিয়াকরণের অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।
অপর এক প্রস্তাবে বৈঠকে ‘সাতক্ষীরা-সখিপুর-কালীগঞ্জ এবং কালীগঞ্জ-শ্যামনগর-ভেটখালী মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ’-প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-০৬ এর পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাব পুনর্প্রক্রিয়াকরণের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১০ কোটি ৩০ লাখ ৫ হাজার ২৫২ টাকা। প্রকল্পটি একনেকে ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পের পূর্ত কাজে ক্রয়ের জন্য এক ধাপ দুই খাম দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে মাত্র ১টি দরপ্রস্তাব রেসপনসিভ বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে দরপত্রটিতে একজন মাত্র দরপত্রদাতা রেসপনসিভ বিবেচিত হওয়ায় কার্যকর প্রতিযোগিতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। অধিক সংখ্যক দরদাতার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য টিইসি ও হোপ-এর সুপারিশ বাতিল করে ক্রয় প্রস্তাবটির পুনর্প্রক্রিয়াকরণের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।